বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে প্রশ্নপত্রের গোপনতা বজায় রাখার দায়িত্ব মূলত উপাচার্য এবং পরীক্ষা নিয়ামকের। রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র নিয়ে বিভ্রাটের জেরে অবশ্য পরীক্ষা নিয়ামকেরই চাকরি গেল। ওই পদে ছিলেন শুভাশিস মাইতি।
বুধবার শুভাশিসবাবুকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, গত এক বছরে তাঁর কাজকর্মে বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হতে পারেননি। তাই পরীক্ষা নিয়ামকের পদে তাঁকে স্থায়ী করা হচ্ছে না। ‘প্রবেশন’-এ থাকার পরে শুক্রবার তাঁর এক বছর পূর্ণ হওয়ার কথা ছিল। তাঁকে স্থায়ী না-করায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আপাতত কোনও পরীক্ষা নিয়ামক নেই। সহকারী পরীক্ষা নিয়ামকের পদটিও খালি। এই অবস্থায় বিভিন্ন পরীক্ষার ফলপ্রকাশ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন পড়ুয়ারা।
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম সেমেস্টার পরীক্ষার ফল বেরিয়ে গেলেও দ্বিতীয়, চতুর্থ ও ষষ্ঠ সেমেস্টারের খাতা দেখার কাজ চলছে। ঠিক এই সময়েই পরীক্ষা নিয়ামককে ছাঁটাই করায় ফলপ্রকাশের কাজে সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে শিক্ষক-ছাত্রদের মধ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ফল বেরোবে যথাসময়েই। এক অ্যাসোসিয়েট প্রফেসরকে অস্থায়ী ভাবে পরীক্ষা নিয়ামকের কাজ চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শুভাশিসবাবু ফিরে যাবেন তাঁর আগেকার কর্মস্থল, একটি বেসরকারি হোটেল ম্যানেজমেন্ট কলেজে।
ঠিক কী কারণে পরীক্ষা নিয়ামককে সরিয়ে দেওয়া হল?
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই সব সেমেস্টারের পরীক্ষা হয় মে মাসে। কিন্তু রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রে সময়মতো প্রশ্নপত্র পৌঁছয়নি। পরে ই-মেলে প্রশ্নপত্র পাঠানো হয়। অনেক কলেজেরই কর্তৃপক্ষ প্রশ্নপত্রের ফোটোকপি তৈরি করিয়ে পরীক্ষা নেন ছাত্রছাত্রীদের। এ ছাড়া প্রশ্নপত্রে অজস্র ভুল ছিল বলে অভিযোগ। যে-সব পত্রের দু’টি ভাগ, অনেক ক্ষেত্রেই তার একটি ভাগের প্রশ্ন পৌঁছলেও অন্যটি পাঠানো হয়নি। কোড নম্বরে ভুল ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। প্রশ্নপত্রে সেই বিভ্রাটের জেরে রাজ্য জুড়ে বিক্ষোভও হয়। কেন এই গোলমাল, সেই ব্যাপারে রিপোর্ট তলব করে রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, মূলত সেই গোলমালের জেরেই শুভাশিসবাবুকে ওই পদে আর বহাল রাখা হল না।
প্রশ্নপত্রে ভুল বা বিভ্রাট কেন?
এত দিন যে-সংস্থা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ছাপত, এ বছর তারা সেই দায়িত্ব পায়নি। তাদের বদলে অন্য একটি সংস্থাকে প্রশ্নপত্র ছাপার ভার দেওয়া হয়। তার জেরেই প্রশ্নপত্রে এই বিভ্রাট বলে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর। প্রশ্নপত্র ছাপার মতো গোপনীয় কাজকর্মের দায়িত্বে থাকেন উপাচার্য আর পরীক্ষা নিয়ামক। এবং প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রঞ্জন ভট্টাচার্যের উদ্যোগেই এ বার প্রশ্নপত্র ছাপার জন্য সংস্থা বদল করা হয় বলে একটি সূত্রের দাবি। সংস্থা পরিবর্তনের ফলে প্রশ্নপত্র ছাপার খরচ অন্যান্য বারের থেকে বেড়ে যায় অনেকটাই। অন্য একটি শিবির আবার সব দায় চাপিয়ে দিচ্ছে শুভাশিসবাবুর উপরে।
যদিও সংশ্লিষ্ট দু’জন অর্থাৎ রঞ্জনবাবু ও শুভাশিসবাবু এই বিষয়ে কিছুই বলতে চাননি। শুক্রবার রাতে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে উপাচার্য বলেন, “এখন একটি বৈঠকে আছি।” আর শুভাশিসবাবু বলেন, “এই বিষয়ে কোনও কথাই বলব না।”
কার দোষে কী ঘটেছে, কেনই বা শুভাশিসবাবুকে বহাল রাখা হল না, সেই সব প্রশ্ন তো উঠছেই। সেই সঙ্গে পরীক্ষার খাতা দেখা এবং সময়মতো ফলপ্রকাশ করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়টাও বড় হয়ে উঠেছে। প্রশ্নপত্র নিয়ে গোলমালের মতো ফলপ্রকাশের ক্ষেত্রেও বিভ্রাট হয় কি না, ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষকদের উদ্বেগ তা নিয়েই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy