ব্যাঙ্কশাল আদালতে কুণাল ঘোষ। বুধবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।
আবার আদালতের কাঠগড়ায় কুণাল ঘোষ। এবং নাম উহ্য থাকলেও আবারও তাঁর বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দুতে সেই মুখ্যমন্ত্রীর ছায়া! সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত এই সাংসদ বুধবার সিবিআই আদালতে দাঁড়িয়ে পরোক্ষে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ফের বিঁধতে চেয়েছেন বলে আইনজীবী মহলের একাংশের অভিমত।
এ দিন সিবিআই-কোর্টের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল ঘোষ অভিযোগ করেন, “অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি সারদা-তদন্তে বাধা দিচ্ছেন। তাঁদের খোলা চোখে দেখা যাচ্ছে না।” তাঁর আরও পর্যবেক্ষণ, “একটা গোটা সিস্টেম সিবিআই-তদন্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।” মনে করা হচ্ছে, গোটা ‘সিস্টেম’ বলতে কুণাল এখানে রাজ্য প্রশাসনকে বোঝাতে চেয়েছেন। আর প্রশাসনের মাথা হিসেবে তাঁর বাক্যবাণের লক্ষ্য স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী।
সারদা প্রসঙ্গে কুণাল এর আগেও কোর্টে বা কোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে প্রশাসন ও বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে একাধিক বার তোপ দেগেছেন। এ-ও দাবি করেছেন, সারদা গোষ্ঠীর কাছ থেকে কেউ যদি সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন, তাঁর নাম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই ধারাবাহিকতা তিনি এ দিনও বজায় রাখলেন বলে আইনজীবী ও রাজনীতিবিদদের কয়েকটি মহলের অভিমত। সিবিআই কোর্টে এ দিন কুণালের আরও অভিযোগ: সারদা গোষ্ঠীর থেকে যাঁরা সরাসরি টাকা নিয়েছেন কিংবা লাভবান হয়েছেন, তাঁরা সব সরকারের লোক। এ প্রসঙ্গে মমতার পাশাপাশি তিনি নিশানা করেছেন কেন্দ্রের প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র-সচিব অনিল গোস্বামীকেও। “সিবিআই-তদন্তে কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্র-সচিব পর্যন্ত প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেছেন!” আদালতে দাঁড়িয়ে আক্ষেপ করেন তিনি। প্রসঙ্গত, সারদা-কাণ্ডে ধৃত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মাতঙ্গ সিংহের পক্ষ নিয়ে অনিল গোস্বামী সিবিআই অফিসে ফোন করেছিলেন বলে সম্প্রতি অভিযোগ ওঠে, যার জেরে অনিলকে পদ ছাড়তে হয়েছে।
সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস মামলায় কুণালকে এ দিন কোর্টে পেশ করা হয়েছিল। তিনি নিজেই নিজের জামিনের আবেদন জানান। বিচারক বরুণ রায় অবশ্য আবেদন নামঞ্জুর করে কুণালকে এই মামলায় ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
জামিন-আর্জির সওয়ালে কুণালের মুখে এ দিন শোনা গিয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভা সদস্য সৃঞ্জয় বসুর জামিন প্রসঙ্গও। সরাসরি সৃঞ্জয়ের নামোল্লেখ না-করে কুণাল বলেন, সংবাদমাধ্যমে তিনি জেনেছেন, সিবিআই চার্জশিটে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪০৯ নম্বর না-থাকার সুবাদে সারদা-কাণ্ডে ধৃত এক অভিযুক্ত (সৃঞ্জয়) আদালতে জামিন পেয়েছেন। এতে তিনি অখুশি নন। “কিন্তু আমাকে কেন জামিন দেওয়া হচ্ছে না?” প্রশ্ন কুণালের। তাঁর দাবি, ওই ব্যক্তির (সৃঞ্জয়) জামিন মঞ্জুরির নির্দেশটি তিনি পড়েছেন। এবং দেখেছেন, জামিনলাভের ক্ষেত্রে পারিবারিক পরিচয়ই বড় করে দেখা হচ্ছে! তাঁর খেদোক্তি, “আমার ঠাকুরদা, বাবা দু’জনেই ডাক্তার ছিলেন। আমি হতে পারিনি। টাকা থাকলে, কলকাতায় সম্পত্তি থাকলে কেউ বনেদি হবেন, আর কারও ক্ষেত্রে পারিবারিক মেধার কোনও মূল্য থাকবে না?”
জামিন-আর্জিতে নিজেকে বর্তমান সাংসদ হিসেবে দাবি করে কুণাল এ দিন বলেন, জামিন দিলে তিনি পালাবেন না। সিবিআইয়ের হেফাজতে থাকা মামলার নথি ও প্রমাণ লোপাট করাও তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। কুণাল জানান, ৪০৯ নম্বর ধারার অভাবে যে ভাবে সারদা-কাণ্ডের এক অভিযুক্ত জামিন পেলেন, তাতে তাঁর মনে হয়েছে, আদালতের ভিতরেও প্রভাব খাটানো হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy