আদালতে কুণাল ঘোষ। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।
ভোটের মুখে পুলিশ-প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কামান দাগলেন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ।
বুধবার সল্টলেক আদালতে কুণালবাবু জানান, গ্রেফতারের পরেই তিনি গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁকে আশ্বাস দিয়েছিল, গোপন জবানবন্দি দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিলে তাঁকে আর কোনও মামলায় ফাঁসানো হবে না। তাই তিনি জবানবন্দি দেননি। কুণালবাবুর অভিযোগ, জবানবন্দি দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করার পরেও তাঁকে একাধিক মামলায় জড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অবস্থায় তিনি এখন গোপন জবানবন্দি দিতে চান।
সারদা গোষ্ঠীর সম্পত্তি থেকে কারা লাভবান হয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলে রাজ্য সরকারের তদন্ত প্রক্রিয়াকেই কার্যত সমালোচনার মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এর মধ্যে কুণালবাবুর এ দিনের অভিযোগ রাজ্য সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে দিল।
জবানবন্দি দিতে চেয়েও তৃণমূল সাংসদ কেন শেষ পর্যন্ত তা দেননি, সেই বিষয়ে জল্পনার অন্ত নেই। এ দিন আদালতে দাঁড়িয়ে কুণালবাবু নিজেই পুলিশ-প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়িয়ে সেই জবানবন্দি না-দেওয়ার রহস্য ফাঁস করে দিলেন। তাঁর বক্তব্য, পুলিশ আর তাঁকে ফাঁসাবে না, এই আশ্বাস পেয়েই তিনি জবানবন্দি দেওয়া থেকে পিছিয়ে আসেন। কুণালবাবুর এই অভিযোগের ব্যাপারে বিধাননগরের গোয়েন্দা-প্রধান অর্ণব ঘোষ অবশ্য বলেন, “এক জন অভিযুক্তের এই ধরনের বক্তব্যের জবাব দেব না।”
আদালতে দাঁড়িয়ে শুধু গোপন জবানবন্দি নিয়েই প্রশাসনকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাননি কুণালবাবু। রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে কেন সারদা কাণ্ডের তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। সেই সঙ্গে তদন্তের আওতায় আনার কথা বলেছেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থকেও। ওই সাংসদ এ দিন আদালতে বলেন, ক্রীড়ামন্ত্রী মদনবাবু সারদার একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে সারদার প্রশংসা করেছিলেন। নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সেই অনুষ্ঠানে সারদার প্রশংসা করেন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎবাবুও। কুণালবাবু আদালতে প্রশ্ন তোলেন, ওই দু’জনকে তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে না কেন? জেরাই বা করা হচ্ছে না কেন? শুধু আমাদেরই কেন অগ্নিপরীক্ষা দিতে হচ্ছে?
এই ব্যাপারে ক্রীড়ামন্ত্রী ও পুলিশ কমিশনার কী বলছেন?
মদনবাবু এ দিন বলেন, “পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে সারদার কোনও অনুষ্ঠানে গিয়েছি বলেই তো আমার মনে পড়ছে না।” আর সুরজিৎবাবু বলেন, “এ-রকম ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অভিযোগের কোনও প্রতিক্রিয়া হয় না।”
এ দিন প্রতারণা সংক্রান্ত একটি মামলার শুনানির জন্য কুণালবাবু ছাড়াও সারদা কাণ্ডে ধৃত সোমনাথ দত্ত, অরবিন্দ সিংহ চৌহান ও মনোজ নাগেলকে সল্টলেক আদালতে হাজির করানো হয়। এক বছর আগে এক আমানতকারীর দায়ের করা প্রতারণা মামলায় এ দিন কুণালবাবুকে ধৃত অভিযুক্ত হিসেবে দেখানো হয়। মামলা চলাকালীন কুণালবাবু আর্জি জানান, তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য পেশ করতে চান। বিচারক অপূর্বকুমার ঘোষ তাঁকে বলার অনুমতি দেন।
তার পরে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কুণালবাবু অভিযোগ করেন, এক বছর ধরে তাঁকে বিভিন্ন মামলায় জড়ানো হচ্ছে। এক বছরের পুরনো প্রতারণা সংক্রান্ত একটি মামলায় তাঁকে যে জড়ানো হয়েছে, তা তিনি দমদম সেন্ট্রাল জেলে এসে জানতে পারেন। এবং তাঁকে জেলে আটকে রাখার জন্যই চক্রান্ত করে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। বিচারককে তিনি বলেন, “পুলিশের উপরে আস্থা হারিয়ে ফেলছি।
জামিন পেলে আইনজীবী মারফত গোপন জবানবন্দি দেওয়ার লিখিত আবেদন করব।”
এই মামলায় কুণাল-সহ তিন জনের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক। এই মামলার অন্য অভিযুক্ত সোমনাথ দত্ত আগেই জামিন পেয়েছেন। তা সত্ত্বেও এ দিন তাঁকে গ্রেফতার করার জন্য আদালতে ফের আবেদন করে পুলিশ। বিচারকের সামনে সে-কথাই তুলে ধরেন সোমনাথবাবুর আইনজীবী। পরে আদালতের বাইরে সেই আইনজীবী বলেন, ‘‘যিনি এক বার জামিন পেয়েছেন, তাঁকে একই মামলায় ফের গ্রেফতার করার জন্য আর্জি জানাল পুলিশ। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, তদন্ত কেমন চলছে!”
কুণালবাবুর গোপন জবানবন্দির আবেদন নিয়ে বিচারক এ দিন কোনও সিদ্ধান্ত জানাননি। ২০১১ সালের মে মাসে মল্লিকা চট্টোপাধ্যায় নামে এক আমানতকারী সল্টলেক উত্তর থানায় সারদার এক এজেন্ট নরোত্তম দত্তের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। সেই মামলায় সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সোমনাথ দত্ত ইতিমধ্যেই জামিন পেয়েছেন।
সরকারি আইনজীবী সাবির আলি আদালতের বাইরে জানান, তদন্তে দেখা গিয়েছে, এই মামলায় কুণালবাবু এবং বাকি দু’জনের যোগ আছে। তাই তাঁদের এই মামলায় যুক্ত করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানান, সারদার একটি সংস্থার কয়েক জন কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, কুণালবাবু, অরবিন্দ এবং মনোজ সল্টলেকে সারদার অফিস ‘মিডল্যান্ড পার্ক’-এ রাতের গোপন বৈঠকে যেতেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy