Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

দল চাঙ্গা করতে ৯ জেলা সম্পাদক বদলের ভাবনা

প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত বারের সম্মেলন থেকেই। সেই ধারা আরও এগিয়ে নিয়েই এ বার অন্তত গোটা নয়েক জেলার নেতৃত্বে রদবদল আনতে চাইছে সিপিএম। চলতি মাসের শেষ দিকেই শুরু হতে চলেছে সিপিএমের লোকাল ও জোনাল পর্যায়ের সম্মেলন। তার আগেই জেলা স্তরে নেতৃত্বে পরিবর্তনের রূপরেখা মোটামুটি ছকে ফেলেছে আলিমুদ্দিন।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৪৫
Share: Save:

প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল গত বারের সম্মেলন থেকেই। সেই ধারা আরও এগিয়ে নিয়েই এ বার অন্তত গোটা নয়েক জেলার নেতৃত্বে রদবদল আনতে চাইছে সিপিএম। চলতি মাসের শেষ দিকেই শুরু হতে চলেছে সিপিএমের লোকাল ও জোনাল পর্যায়ের সম্মেলন। তার আগেই জেলা স্তরে নেতৃত্বে পরিবর্তনের রূপরেখা মোটামুটি ছকে ফেলেছে আলিমুদ্দিন।

লোকসভা ভোটে বেনজির বিপর্যয়ের পরেই সিপিএমের অন্দরে নেতৃত্বে রদবদলের দাবি জোরালো হয়েছে। এক দিকে যেমন দলের কর্মী-সমর্থকদের এই দাবির প্রশ্ন জড়িত, তেমনই তিন বারের বেশি সম্পাদক পদে না-থাকার নিয়মও এ বার কার্যকর হতে চলেছে। এই দুই দিক মাথায় রেখেই জেলাগুলিতে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা নিয়েছেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “স্বচ্ছ এবং অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতৃত্বকে সামনে রেখেই আগামী দিনে লড়াইয়ের পরিকল্পনা হচ্ছে। শুধু রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী বা জেলা সম্পাদক নয়, একেবারে শাখা সম্পাদক স্তর থেকে যেখানে যেখানে সম্ভব, পরিবর্তন সেরে ফেলা হবে। তবে শুধু পরিবর্তনের জন্যই পরিবর্তন হবে না! হবে সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা বুঝে।”

সিপিএম সূত্রের খবর, সম্মেলনে কী ধরনের কমিটি গড়া হবে, তার নির্দেশিকা ইতিমধ্যেই জেলায় জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার পাশাপাশিই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী দফায় দফায় আলোচনা সেরেছে জেলা নেতৃত্বে সম্ভাব্য রদবদলের প্রক্রিয়া নিয়ে। এখনও পর্যন্ত যা ইঙ্গিত, উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গ মিলে অন্তত ৯টি জেলার সম্পাদক পদে নতুন মুখ দেখা যেতে পারে এ বার। এই তালিকায় যেমন উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর আছে, তেমনই আছে রাঢ়বঙ্গের বীরভূম ও বাঁকুড়া। দক্ষিণবঙ্গের বর্ধমান, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ও কলকাতার মতো জেলাতেও নতুন সম্পাদক নির্বাচনের সম্ভাবনা। এর মধ্যে বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও কলকাতার সম্পাদকেরা দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীরও সদস্য। তাঁদের সঙ্গে নিয়েই রাজ্য নেতৃত্বে আলোচনা হয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে কমিটির তিন-চতুর্থাংশ সদস্যের সমর্থন নিয়ে তিন বারের পরেও সম্পাদক থেকে যাওয়া যাবে গঠনতন্ত্রের এই ব্যতিক্রমের ধারাকে তাঁরা যেন ব্যবহারের চেষ্টা না করেন।

সম্ভাব্য এই পরিবর্তনের পরিকল্পনার বাইরেও উত্তর ২৪ পরগনার সম্পাদক ও দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা গৌতম দেব এ বার ওই পদ ছেড়ে দিতে চান। কিন্তু তাঁর বিকল্প কোনও নামে ঐকমত্য তৈরি হওয়ার মতো সম্ভাবনা এখনও উত্তর ২৪ পরগনায় নেই! জেলার নেতা এবং দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “ভোটে ফলাফল যা-ই হোক, গৌতমদা যে পদ্ধতিতে দল চালান, কারও মধ্যে এখন সেই গুণ নেই। উনি সরে গেলে জেলা দলটার কী হবে, ভাবতেও আতঙ্ক হয়!” স্নায়ুর সমস্যার জন্য তিরুঅনন্তপুরমের হাসপাতালে গৌতমবাবুর অস্ত্রোপচারের কথা ২৯ অক্টোবর। যা পরিস্থিতি, অস্ত্রোপচারের ধাক্কা কাটিয়ে এসে জেলায় দলের হাল ধরেই রাখতে হবে তাঁকে। আবার উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে জেলা সম্পাদক বদলের পক্ষপাতী দলের একাংশ। কিন্তু ওই পদে তিনি বেশি দিন আসেননি, এই যুক্তিতেই থেকে যেতে পারেন ওই জেলা সম্পাদক।

রদবদলের এই ভাবনার বাইরে যে জেলাগুলি থেকে যাচ্ছে, তাদের বেশির ভাগেরই নেতৃত্ব বেশি পুরনো নয়। কোনওটায় গত সম্মেলনে নতুন জেলা সম্পাদক হয়েছেন, কোথাও আবার সম্মেলনের পরে সম্পাদক বদলে দেওয়া হয়েছে। নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া, জলপাইগুড়ি, হাওড়া, হুগলির মতো জেলা পড়ছে এই তালিকায়। নতুন জেলা তৈরির পরে আলিপুরদুয়ারে সাংগঠনিক কমিটি গড়া হয়েছে। তার দায়িত্বে যিনি আছেন, সম্মেলনে তাঁরই পুর্ণ দায়িত্বের জেলা সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা।

সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্বের একটি বড় অংশ চাইছেন, জেলায় জেলায় রদবদলে উপর দিকেও পরিবর্তন হোক। রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী যে নব কলেবরে তৈরি হবে, তা নিয়ে বিশেষ দ্বিমত নেই দলে। আসল প্রশ্ন থাকছে রাজ্য সম্পাদকের প্রশ্নেই! জেলা স্তরের এক নেতার কথায়, “সৈন্যসামন্ত বদল হল আর সেনাপতি একই থেকে গেল, তাতে আর কাজের কাজ কী হবে!”

সম্মেলনের আগে রূপরেখা ঝালিয়ে নেওয়ার জন্যই আগামী ৫-৬ নভেম্বর রাজ্য কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। আলিমুদ্দিনে সেই বৈঠকে হাজির থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট। বৈঠক শেষে কলকাতায় সপ্তম পার্টি কংগ্রেসের ৫০ বর্ষপূর্তির (অর্থাৎ পৃথক সিপিএম দল তৈরির) সভায় প্রধান বক্তা কারাটই।

অন্য বিষয়গুলি:

sandipan chakrabarty cpm district secretary
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE