বহুতলে অগ্নিবিধি বিষয়ক ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে অনিয়মের একাধিক অভিযোগ পেয়ে দমকল দফতরের সচিব পি রমেশকুমারকে সরিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দফতরের অন্যতম যুগ্মসচিব সাইক আহমেদকেও। দমকল মন্ত্রী জাভেদ খানের একান্ত সচিব বিভাস মণ্ডলের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু হয়েছে। সাময়িক ভাবে ওই দফতরের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। দফতরের কোথায় দুর্নীতি বাসা বেঁধেছে, স্বরাষ্ট্রসচিবকে তা দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বাড়তি দায়িত্ব পাওয়ার পরে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, “দফতরের কাজে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে হবে। সে জন্য কিছু কড়া পদক্ষেপও করতে হতে পারে।”
বহুতলের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে মন্ত্রীর সচিবালয়ে যে ‘ঘুঘুর বাসা’ তৈরি হয়েছে সেই খবর পৌঁছেছিল মুখ্যমন্ত্রীর কানে। মমতার কাছে সরাসরি এ নিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে অভিযোগ করেন এক মহিলাও। নবান্ন সূত্রে বলা হয়, নিজের মতো করে খোঁজখবর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বুঝতে পারেন ১০ তলা এবং তার বেশি উঁচু বহুতলের ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে একটি চক্র তৈরি হয়েছে দমকল মন্ত্রীর সচিবালয়ে। এর মধ্যেই চলে আসে আমরি হাসপাতালকে ‘ফায়ার লাইসেন্স’ দেওয়ার প্রসঙ্গ। মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন দমকল দফতর দীর্ঘদিন ধরে এই ফাইল আটকে রেখেছে। এর পরই মুখ্যসচিবকে এই দফতরের খোলনলচে বদলে ফেলার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সরানো হয় সচিব ও যুগ্মসচিবকে।
বদলির খবর জেনে দফতরের যুগ্মসচিব সাইক আহমেদ বলেন, “আমি বলির পাঁঠা হয়ে গেলাম। কোনও কিছুর মধ্যেই আমি ছিলাম না।” দফতরের সচিব পি রমেশকুমার অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। মন্ত্রীর একান্ত সচিব বিভাস মণ্ডল বলেন, “আমি জানি না কী হয়েছে। ফলে কোনও মন্তব্য করব না।” তদন্তের পরে তাঁর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্ত্রী জাভেদ কিন্তু নিজের দফতরের সচিবালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর কথায়, “আমার দফতর তো খোলা খাতা। স্বচ্ছতার সঙ্গেই দফতর চালাচ্ছি।” তবে কেন তাঁর দফতরের সচিব এবং এক জন যুগ্মসচিবকে এক সঙ্গে বদলি করে দেওয়া হল? জাভেদ বলেন,“বদলির কারণ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। এর আগেও বহু সচিব বদলি হয়েছেন। কেন এই বদলি তা মুখ্যমন্ত্রীই বলতে পারবেন।” জানতে চাওয়া হয়, তাঁর সচিবালয়ের কাজকর্ম নিয়ে অভিযোগ ওঠায় তিনি কি পদত্যাগ করবেন? জাভেদের মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী চাইলে মন্ত্রীকেও সরিয়ে দিতে পারেন।”
দমকলমন্ত্রীর সচিবালয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগটি ঠিক কী? দমকল দফতর সূত্রের খবর, ১৯৯৬ সালের অগ্নি নির্বাপণ আইন অনুযায়ী ১৪.৫ মিটার উঁচু বা পাঁচতলা (জি প্লাস ফোর) কোনও বাড়ি তৈরি করতে হলে দমকলের ছাড়পত্র নিতে হয়। দমকল-অধিকর্তা বহুতল পরিদর্শনের পর এই ছাড়পত্র দেওয়ার একমাত্র অধিকারী। বিধি অনুযায়ী, ৪৫ মিটার বা ১৪-১৫ তলা বাড়ির ছাড়পত্র দেওয়ার কথা দমকলের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেলের। কিন্তু মাস ছয়েক আগে নতুন নির্দেশ জারি করে বলা হয়, ১০ তলা বা তার বেশি উচ্চতার বহুতল তৈরি করতে হলে তার চূড়ান্ত ছাড়পত্র পেতে মন্ত্রী ও সচিব, দু’জনেরই সম্মতি লাগবে। এর পরই দমকলের অবসরপ্রাপ্ত এডিজি দেবপ্রিয় বিশ্বাসকে অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি (ওএসডি) হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১০ তলা বা তার বেশি উচ্চতার সমস্ত বহুতলের অগ্নিনির্বাপণ ছাড়পত্র পেতে দমকল অধিকর্তার দফতর থেকে সব ফাইল যেতে থাকে দফতরের ওএসডির কাছে। তিনিই ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে মূূল সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলেন বলে সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। দেবপ্রিয়বাবু অবশ্য বলেন,“ছাড়পত্র দেওয়া নিয়ে নীচের তলার কিছু গোলমালের খবর পাওয়া গিয়েছিল। সেই কারণেই ১০ তলা বা তার বেশি উঁচু বহুতলে ছাড়পত্র দেওয়ার বিষয়টি ভাল করে দেখে নিতেই দফতর থেকে বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়।” তাঁর মতে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট বা তার চেয়ে বড় হাসপাতাল, দাহ্য পদার্থের ব্যবসার জায়গা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দফতর বিশেষজ্ঞ কমিটি গড়ে দিয়েছিল। সেটা ছিল জরুরি পদক্ষেপ। মন্ত্রী জাভেদের কাছে জানতে চাওয়া, তাঁর সচিবালয় কী ভাবে বহুতলে ছাড়পত্র দিচ্ছে? তিনি বলেন, “যাবতীয় ছাড়পত্র দেওয়ার ক্ষমতা তৃণমূল স্তরে, দমকল কেন্দ্রের অফিসারদের দিয়ে দেওয়া হয়েছে।” আর আমরি প্রসঙ্গে জাভেদের বক্তব্য, “ওটা বিচারাধীন বিষয়। ফলে এ সব ক্ষেত্রে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে আইনি পরামর্শ নেওয়া হয়। সে কারণে বাড়তি সময় লাগতে পারে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy