রাজ্যে লগ্নি-সহায়ক পরিবেশ তৈরি করুন। বিনিয়োগ টেনে টেক্কা দিন অন্য রাজ্যকে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজ পরোক্ষে এই চ্যালেঞ্জ যিনি ছুড়ে দিলেন, তিনি কলকাতার ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট’ এবং গাঁধীনগরের ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’ দু’টোরই প্রত্যক্ষদর্শী। দুই পর্ব মিটিয়ে আজ ‘এ টেল অব টু গ্লোবাল সামিটস’ শীর্ষক এক নিবন্ধ লিখেছেন দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ফেসবুকের পাশাপাশি তা প্রকাশিত হয়েছে দলীয় বিবৃতির আকারেও। ওই নিবন্ধে জেটলি বলেছেন, “দু’টি সম্মেলনে গিয়েই উৎসাহিত বোধ করেছি। বিনিয়োগ টানতে এ বার রাজ্যগুলি পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দেবে। সন্দেহ নেই, আগাগোড়া সংস্কার ও লগ্নি-বান্ধব নীতি নিয়ে যারা এগোবে, জিতবে তারাই।”
অনেকেই মনে করছেন, নাম না করলেও জেটলির এই বার্তার লক্ষ্য মমতাই। অর্থমন্ত্রী এক দিকে আজ সাফ বলেছেন, বিকাশের পথে পশ্চিমবঙ্গের পাশে আছে কেন্দ্র। জানিয়েছেন, কলকাতার সম্মেলন তাঁর ভাল লেগেছে। কিন্তু একই সঙ্গে এই বার্তাও দিয়ে রেখেছেন যে, শিল্প সম্মেলন আয়োজনেই রাজ্যের দায়িত্ব ফুরোয় না। উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে হলে ধারাবাহিক সংস্কার ও লগ্নি-সহায়ক পদক্ষেপ করাটাও জরুরি।
শিল্পমহল ও বিরোধীদের মতে, মমতার সমস্যাটা সেখানেই। শিল্পক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণ, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়া, জমি ঊর্ধ্বসীমা তুলে দেওয়া, বিমা বিল সব কিছুরই তিনি বিরোধী। গত দু’দিন ধরে আমদাবাদের মঞ্চ থেকেও লাগাতার তির ছুটে এসেছে মমতার দিকে। জেটলির কথায়, “পশ্চিমবঙ্গের এখন উচিত লাগাতার সংস্কারমুখী ও শিল্পবান্ধব পদক্ষেপ করা, যাতে বর্তমান ও সম্ভাবনাময় বিনিয়োগকারীদের মনে আস্থা জাগে।” তবে গুজরাতের শিল্প সম্মেলন যে ধারে ও ভারে এক মহা-সমারোহ, সে কথা জানাতে ভোলেননি তিনি। কাজেই অর্থমন্ত্রী আজ পরোক্ষে তৃণমূল নেত্রীকে গুজরাতের সঙ্গে লগ্নি টানার প্রতিযোগিতায় নামার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন বলেও মনে করছেন অনেকে।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব বলছেন, আসলে শিল্প নিয়ে মমতার উপরে চাপ বাড়ানোর নেপথ্যে এক ঢিলে পাঁচ পাখি মারার কৌশল রয়েছে তাঁদের।
কী সেই পাঁচ পাখি?
এক, লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই মোদী বলে এসেছেন, উন্নয়নের নিরিখে দেশের পূর্ব প্রান্ত পশ্চিমের তুলনায় পিছিয়ে। এই অবস্থায় মমতাকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া গেলে কৃতিত্ব মোদীই পাবেন।
দুই, সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্ত নিয়ে যখন কেন্দ্রকেই নিশানা করছে মমতার দল, তখন শিল্প ও উন্নয়নে রাজ্যকে সাহয্যের হাত বাড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্রীয় ধর্মও পালন করতে চান মোদী। সেই কারণেই জেটলি ও নিতিন গডকড়ীর মতো দুই শীর্ষ মন্ত্রীকে তিনি পাঠিয়েছিলেন মমতার সম্মেলনে। আজ জেটলিও লিখেছেন, “পশ্চিমবঙ্গকে ফের শিল্পকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। কলকাতা-শিলিগুড়ি সড়ক নির্মাণে গডকড়ী যে সাহায্যের কথা বলেছেন, তা বাস্তবায়িত হলে শিল্প করিডর থেকে উন্নত পরিকাঠামো ও টাউনশিপ গড়ে তোলা যাবে।”
তিন, সামনের বছর পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মমতা শিল্প আনতে না পারলে সেই ব্যর্থতাকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করবেন অমিত শাহ। ইতিমধ্যেই বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ দাবি করেছেন, ‘যতটা বিনিয়োগের ঢাক পিটিয়েছেন মমতা, তার সিংহভাগ কেন্দ্রের সহযোগিতায়।’ কাজেই শিল্পের পথে হাঁটলে তা সফল করার দায় মমতারই।
চার, মমতা যদি ব্যর্থও হন, সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য মোদীর ভাবনা এখন থেকেই ভাসিয়ে রাখছেন বিজেপি নেতারা। জেটলির বক্তব্য, “নকশাল সমস্যা ও বাম সরকারের নীতির ফলে শিল্প চলে গিয়েছে। অথচ পশ্চিমবঙ্গে কৃষি সফল হয়েছে। মেধা সম্পদ রয়েছে। তথ্য-প্রযুক্তি শিল্পেও উন্নতি হয়েছে। দরকার শিল্প-পরিকাঠামো গড়া।” বলা বাহুল্য, এ সব মোদীরই ‘স্বপ্ন’।
পাঁচ, সংস্কারের যে সব বিল গত অধিবেশনে অধ্যাদেশের আকারে আনা হয়েছে, সেগুলি ফের সংসদে আনতে হবে কেন্দ্রকে। যদিও যৌথ অধিবেশনের ভাবনা রয়েছে, কিন্তু তৃণমূলকে সত্যিই সংস্কার ও শিল্পমুখী করা গেলে বিলগুলি পাশ করানো আরও মসৃণ হবে।
এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ-যুদ্ধের চ্যালেঞ্জে মমতাকে আরও চাপে ফেলে দিলেন জেটলি। কিন্তু রাজ্য শুনল কি?
আজ গঙ্গাসাগর মেলায় রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম বলেন, “কোনও কোনও সংবাদমাধ্যম বাংলার সঙ্গে গুজরাতের তুলনা করে। গুজরাত ২০ বছর ধরে করেছে। আমরা তিন বছর ধরে করছি। যে দিন আমাদের ৩০ বছর হবে, সে দিন আমরাও সব প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy