Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

জেলে যাবেন মমতাও, সুর চড়ালেন দীপা-মান্নানরা

সারদা-কাণ্ডে কোণঠাসা শাসক দল। এই অবস্থায় তাদের উপরে আরও চাপ বাড়াতে চেষ্টার কসুর করছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি থেকে তাঁর ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কটাক্ষ কিছুই বাদ যাচ্ছে না। দলের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নানের ডাকে রবিবার হুগলির শেওড়াফুলিতে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে দীপা দাশমুন্সি, অরুণাভ ঘোষ থেকে মালা রায় সকলের গলাতেই শোনা গেল প্রবল আক্রমণাত্মক সুর।

সারদা কাণ্ডে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে হুগলি জেলা কংগ্রেসের মিছিল। শেওড়াফুলিতে জিটি রোডে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

সারদা কাণ্ডে দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে হুগলি জেলা কংগ্রেসের মিছিল। শেওড়াফুলিতে জিটি রোডে প্রকাশ পালের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেওড়াফুলি শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১১
Share: Save:

সারদা-কাণ্ডে কোণঠাসা শাসক দল। এই অবস্থায় তাদের উপরে আরও চাপ বাড়াতে চেষ্টার কসুর করছেন না কংগ্রেস নেতৃত্ব। মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি থেকে তাঁর ভাইপো তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কটাক্ষ কিছুই বাদ যাচ্ছে না।

দলের বর্ষীয়ান নেতা আব্দুল মান্নানের ডাকে রবিবার হুগলির শেওড়াফুলিতে মিছিল এবং সমাবেশ করে প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য থেকে শুরু করে দীপা দাশমুন্সি, অরুণাভ ঘোষ থেকে মালা রায় সকলের গলাতেই শোনা গেল প্রবল আক্রমণাত্মক সুর। দীপা বললেন, ‘‘একে একে তৃণমূলের সকলেই জেলে যাচ্ছেন। নেত্রী নিজেও পার পাবেন না! মমতা ভয় পেয়েছেন। আয়নায় মুখ দেখলেই সিবিআইকে দেখছেন। কিন্তু তাঁকেও তো যেতে হবে। জেল সাজানো হচ্ছে!”

তৃণমূল নেত্রী দলীয় বৈঠকে সম্প্রতি বলেছেন, তাঁদের লক্ষ লক্ষ মুকুল এবং হাজার হাজার মদন আছে। সেই সূত্র ধরে অরুণাভবাবুর কটাক্ষ, “এক মুকুল, এক মদনেই এই অবস্থা!” তৃণমূলকে ‘চোরেদের দল’ বলে কটাক্ষ করে প্রদীপবাবুর মন্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী নিজে বলেই বসলেন, ভাইপোর গায়ে হাত দেবে না তো! মুখ্যমন্ত্রীর মস্তিষ্কই সারদা-আচ্ছন্ন।’’

মান্নানের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্ট বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের খোঁজে সারদা-কাণ্ড নিয়ে সিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। সিবিআই যেমন ইতিমধ্যে তৃণমূল নেতা রজত মজুমদার, সাংসদ সৃঞ্জয় বসু এবং পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্রকে গ্রেফতার করেছে, তেমনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাক পেয়েছেন শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। এ সবে জেরবার তৃণমূল নেতৃত্বকে আরও বিড়ম্বনায় ফেলেছেন মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। মন্ত্রিত্ব ছেড়ে তিনি বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। শাসক দলের এই কোণঠাসা অবস্থার সুযোগই এখন কাজে লাগাতে চাইছে বিরোধীরা।

সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও যেমন এ দিন বলেছেন, “কুণাল-টুম্পাই-মদন-মুকুলদের মতো মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ বার ভাইপোর নাম টেনে এনেছেন। ভাইপোর বিয়ের খরচ-খরচা নিয়ে এখন সিবিআই খোঁজ নিচ্ছে বলে সংবাদমাধ্যমে বেরোচ্ছে। গোটা দলটাই তো দুর্নীতির পাঁকে জড়িয়ে!”

দীপা বা বিমানবাবুদের মন্তব্যকে অবশ্য ‘প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে অপপ্রচার’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। রাজ্যের আর এক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আবার পাল্টা অভিযোগ করেছেন, শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীদের ‘মিথ্যা মামলা’য় ফাঁসানো হচ্ছে! বিজেপি-র দিকে তোপ দাগতে গিয়ে তিনি আবার টেনে এনেছেন তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার প্রসঙ্গ! বনগাঁয় এ দিন দলের কর্মিসভায় তাঁর মন্তব্য, “জয়ললিতা নিজের মাথা নত করে দিয়েছিলেন। ওঁকে অন্য রাজ্যে নিয়ে গিয়ে নাস্তানাবুদ করে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল। এখানে এ সব হবে না! নির্বাচনে জনগণই বিজেপিকে যাবতীয় উত্তর দেবে!”

বস্তুত, নিজের এলাকায় এ দিন দীপা-প্রদীপ-অরুণাভ-নির্বেদ রায় থেকে ফরাক্কার বিধায়ক মইনুল হক বা শুভঙ্কর সরকারের মতো নেতাদের হাজির করে শক্তি প্রদর্শন করতে চেয়েছেন মান্নান। তবে দলে মান্নান-বিরোধী নেতাদের সেখানে দেখা যায়নি। চলতি মাসের গোড়ায় হুগলিতে এসে দলে মান্নান-বিরোধী বলে পরিচিত প্রীতম ঘোষের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। কংগ্রেস শিবিরের একাংশের বক্তব্য, ওই কর্মিসভার পাল্টা হিসেবেই এ দিনের কর্মসূচির আয়োজন। এর পরে কাল, মঙ্গলবারই শহিদ মিনার ময়দানে প্রদেশ কংগ্রেসের সমাবেশে বক্তা হিসাবে আমন্ত্রিত মান্নান।

সেখানে কি তিনি যাবেন?

মান্নানের চাঁছাছোলা জবাব, “ডানকুনিতে গত ৪ জানুয়ারির কর্মিসভায় প্রদেশ সভাপতির উপস্থিতিতে আমার সম্পর্কে যে সব মন্তব্য করা হয়েছে, এমন অপমান কখনও হয়নি! এর পরে ঐক্যের নাটক দেখিয়ে আমার পক্ষে দ্বিচারিতা করা সম্ভব নয়!” যা শুনে অধীর-ঘনিষ্ঠ এক নেতা পাল্টা বলছেন, “ব্যক্তিগত মর্যাদার লড়াইয়ে নিয়ে গিয়ে মান্নানদা তিক্ততা জিইয়ে রাখছেন!”

সারদা-কাণ্ড নিয়ে কংগ্রেস যে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের পথে নামতে চলেছে, এ দিন সে ইঙ্গিত মিলেছে কংগ্রেসের ওই মঞ্চ থেকেই। এই প্রসঙ্গেই মালাদেবীর ঘোষণা, তাঁদের কেন্দ্রীয় দলের কেউ তৃণমূলের হয়ে ‘দালালি’ করলে প্রয়োজনে দলের দফতর ঘেরাও হবে! তৃণমূলের হয়ে সারদার পাল্টা মামলায় আইনজীবী হিসাবে কংগ্রেস নেতা কপিল সিব্বল সওয়াল করবেন বলে শোনা যাচ্ছে বলেই এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে কথা বলায় ‘চক্রান্ত’ করে তাঁকে লোকসভা ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে দাবি করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দীপা এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেছেন, “বাংলার মানুষকে সর্বস্বান্ত করায় আপনি অভিযুক্ত। অবিলম্বে পদত্যাগ করুন!’’

একই সঙ্গে অরুণাভবাবুর দাবি, তিন দিন জেরার পরেই মুকুল গ্রেফতার হবেন। স্বামী সাংসদ, স্ত্রী বিধায়ক এমন নামও তদন্তে আসছে বলে তাঁর দাবি!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE