অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পেশ করা হয়েছিল গত সেপ্টেম্বরে। তার প্রায় আট মাস পরে, আগামী জুনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে সারদা কাণ্ডে নিজেদের তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করতে চলেছে ‘সিরিয়াস ফ্রড ইনভেস্টিগেশন অফিস’ বা এসএফআইও। রবিবার কেন্দ্রীয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক সূত্রে এ কথা জানিয়ে বলা হয়েছে, ওই রিপোর্টে রাজ্যের অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থার কাজকর্মেরও উল্লেখ থাকবে।
গত বছর এপ্রিলে সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারির বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। ২৩ এপ্রিল কাশ্মীরের সোনমার্গ থেকে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন এবং ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেন বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দারা। তার পরে পরেই এ রাজ্যের আরও কয়েকটি বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থার কেলেঙ্কারি ফাঁস হয়। রাজ্য জুড়ে আর্থিক কেলেঙ্কারির তদন্ত করার জন্য ভিত্তিতেই এসএফআইও-কে নির্দেশ দেয় কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক। কেন্দ্রের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি এখন জোর কদমে সারদা-তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে এসএফআইও তাদের তদন্ত অনেকটাই গুটিয়ে এনেছে। কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক সূত্রের খবর, সেপ্টেম্বরে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পেশের পরে, ডিসেম্বরে এসএফআইও-র চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে সেই রিপোর্ট পেশ পিছিয়ে যায়।
সারদা গোষ্ঠীর বিপুল পরিমাণ অর্থ নয়ছয়ের তদন্তে এসএফআইও-র অফিসারেরা বেশ কয়েক বার কলকাতায় এসেছেন। সারদার আর্থিক লেনদেন নিয়ে সংস্থার কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কী ভাবে টাকা লেনদেন হত, সংস্থার সফটওয়্যারে কী ভাবে সেই সব লেনদেনের হিসেব নথিভুক্ত করা হত সবই খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছেন তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সারদা গোষ্ঠীর গ্রুপ মিডিয়া সিইও তথা সাসপেন্ড হওয়া তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং রাজ্যসভার অন্য তৃণমূল সদস্য সৃঞ্জয় বসুকেও।
কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রক জানায়, সারদা ছাড়াও পূর্ব ভারতের ৬০টি অর্থ লগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্ত করছে এসএফআইও। সারদার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলির ব্যাপারেও নজর দিতে হয়েছে তাদের। ওই মন্ত্রক সূত্রের দাবি, সারদা-তদন্তে নানান বাধা পেরোতে হয়েছে তদন্তকারীদের। বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের হিসেব ছাড়াও সারদা সংস্থার প্রচুর কম্পিউটার হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করা হয়। বিদেশি সার্ভারে থাকা তথ্যও জোগাড় করতে হয়েছে। সেগুলি পরীক্ষা করার পরে চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করতে এসএফআইও-র কিছুটা বেশি সময় লেগেছে। তাই তারা চূড়ান্ত রিপোর্ট দিতে চলেছে নির্দিষ্ট সময়সীমার প্রায় ছ’মাস পরে।
এসএফআইও তাদের চূড়ান্ত রিপোর্টে কী বলতে চাইছে?
এই ব্যাপারে সরাসরি তেমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। তবে এসএফআইও সূত্রের খবর, অন্তর্বর্তী রিপোর্টে ওই তদন্ত সংস্থা জানিয়েছিল, বেসরকারি অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি টাকা পাচারের সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্রেও সমাজের প্রভাবশালী অংশের মদত পেয়েছে। অভিনব কায়দায় নানা আর্থিক প্রকল্প বাজারে ছেড়েছিল তারা। উঁচু তলায় যোগাযোগের সুবাদে সংশ্লিষ্ট আইনের বিধিনিষেধও মানতে হয়নি তাদের।
অর্থ লগ্নি সংস্থাগুলি কী ভাবে ওই আইনের লক্ষ্মণরেখা পেরোল?
রিপোর্ট পেশের আগে তার ব্যাখ্যা দিতে চাইছে না কেউ। তবে কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ১৯৮২-র চিটফান্ড আইন অনুযায়ী এই ধরনের অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব মূলত রাজ্যের। আইন এবং তা বলবৎ করার দায়িত্ব নির্দিষ্ট ভাবে চিহ্নিত করে দেওয়া সত্ত্বেও বিস্তর বেআইনি কাজকারবার চলছিল। এই অবস্থায় আইন প্রয়োগে ফাঁক ছিল কি না, এসএফআইও তা যাচাই করেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy