প্রথম এনডিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতীয় সড়ক উন্নয়নের দিকে নজর দিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তামাম দেশকে জাতীয় সড়কের জালে বেঁধে ফেলার উদ্যোগ তখনই শুরু হয়েছিল। এ বার দেশ জুড়ে হরেক নদীর সংস্কার করে জলপথ-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে চাঙ্গা করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। আর এ জন্য বিভিন্ন রাজ্যের যত নদীকে ‘জাতীয় জলপথের’ মর্যাদাদানের কথা ভাবা হয়েছে, প্রথম দফায় তার মধ্যে থাকছে পশ্চিমবঙ্গের ১২টি।
ভারতে এই মুহূর্তে ‘জাতীয় জলপথ’ সাকুল্যে পাঁচটি। নয়াদিল্লি ঠিক করেছে, সংখ্যাটা বাড়িয়ে ১০০ করা হবে। প্রথম পর্যায়ে নতুন ৭৯টি জলপথকে জাতীয় স্তরে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কেন্দ্রীয় জলপথ পরিবহণ মন্ত্রকের খবর, এ জন্য শীঘ্র সংসদে বিল আনা হবে। আসন্ন সাধারণ বাজেটেও এ ব্যাপারে কিছু ঘোষণা শোনা যেতে পারে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির মুখে। পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলির সঙ্গে কেন্দ্র আলোচনা শুরু করেছে।
পরিকল্পনার প্রথম ধাপে পশ্চিমবঙ্গের যে ১২টি নদী জাতীয় জলপথের মর্যাদা পেতে চলেছে, সেগুলো হল: মহানন্দা, অজয়, জলঙ্গি, দ্বারকা, বক্রেশ্বর, দামোদর, দ্বারকেশ্বর, শীলাবতী, কুমারী, ইছামতী, ডিভিসি খাল ও সুন্দরবনের খাড়ি। অসম, কেরল, কর্নাটক ও তামিলনাড়ুও কেন্দ্রের ভাবনায় গুরুত্ব পাচ্ছে। কেরলের ১১টি, কর্নাটকের ৭টি এবং অসম ও তামিলনাড়ুর ৯টি নদীকে জাতীয় জলপথে উন্নীত করার কথা ভাবা হয়েছে।
জাতীয় জলপথ হলেও নদীগুলির উপরে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সাংবিধানিক বা আইনি এক্তিয়ার খর্ব হবে না। কোপ পড়বে না জলের অধিকারেও। যদিও প্রয়োজনে নদীতে পরিকাঠামোগত কিছু কাজ দিল্লি করবে। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “জাতীয় জলপথ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে অনেক সময়ে ড্রেজিং করে নদীর নাব্যতা বাড়ানোর দরকার হয়ে পড়ে। সেটা কেন্দ্র করবে।”
বস্তুত জাতীয় সড়ক যে ভাবে রক্ষণাবেক্ষণ হয়, সেই ধাঁচে নির্দিষ্ট সময় অন্তর জলপথের নাব্যতা বজায় রাখা হবে বলে মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে নদী সংযুক্তির কাজও চলবে। পাশাপাশি জেটি তৈরি, সিগন্যালিং-সহ অন্যান্য পরিকাঠামোর ব্যবস্থাও কেন্দ্র করবে।
পুরো ব্যাপারটা এখনও অবশ্য প্রাথমিক স্তরে। “প্রথম ধাপে নদীগুলোকে চিহ্নিত করে বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গে কথা হচ্ছে। পরের ধাপে এক-একটা নদী ধরে সমীক্ষা করে দেখা হবে, সেটিকে আদৌ জাতীয় জলপথে উন্নীত করা সম্ভব কি না।” বলেন মন্ত্রকের কর্তাটি।
প্রাথমিক আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক কর্তার প্রতিক্রিয়া, “রাজ্যের সাংবিধানিক ও আইনি অধিকার বজায় রেখে নদীগুলোকে যদি জাতীয় জলপথ হিসেবে গড়া হয়, তা হলে আমাদের নীতিগত আপত্তি নেই।” তবে কেন্দ্রের নদী-তালিকায় কিছু সংযোজন ও পরিমার্জনের প্রস্তাব রাজ্য দিয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। কী রকম?
রাজ্য সরকারের বক্তব্য: মহানন্দা, অজয়, জলঙ্গি, দ্বারকা, বক্রেশ্বর, শীলাবতী, দামোদর, কুমারী ও ইছামতীতে ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত জল প্রায় থাকেই না। ওই সময়ে ড্রেজিং করেও বিশেষ লাভ হওয়ার নয়। নদী-বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের অভিমত, “পশ্চিমবঙ্গের ওই সব নদীর অধিকাংশে বছরভর জল থাকে না। বিশেষত অজয়, দামোদরের মতো ছোটনাগপুর মালভূমির নদীর নাব্যতা শুধু ড্রেজিং করে ফিরিয়ে আনা অসম্ভব।” এমতাবস্থায় কল্যাণবাবুর দাবি, সুন্দরবনের নদীগুলোকে জাতীয় জলপথ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা হলে বরং সুফল মিলতে পারে।
রাজ্য সরকারের তরফেও এই প্রস্তাব কেন্দ্রকে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সুন্দরবনের যে সব নদীর নাম করা হয়েছে, সেগুলি হল: মাতলা, ঠাকুরান, বিদ্যা, রায়মঙ্গল, সপ্তমুখী, মুড়িগঙ্গা, সাহেবখালি ইত্যাদি।
“বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও দিল্লির প্রস্তাবকে আমরা ইতিবাচক ভাবেই দেখছি।” মন্তব্য করেছেন পরিবহণ-কর্তাটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy