জুনিয়র ডাক্তারদের বিক্ষোভ। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র।
প্রাথমিক জড়তা কাটিয়ে সরকার এখন কোরপান হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজধর্ম পালনে তৎপর। এই ঘটনায় এক ইন্টার্নকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে শুক্রবার থেকে এনআরএসের ইন্টার্নদের একাংশ কর্মবিরতি শুরু করায় একেবারে অন্য মূর্তিতে অবতীর্ণ রাজ্য সরকার। অবিলম্বে কর্মবিরতি প্রত্যাহার না-করলে আন্দোলনকারীদের ডাক্তারির রেজিস্ট্রেশন আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
অভিষেক কুমার নামে এক ইন্টার্নের গ্রেফতারির প্রতিবাদে বিদ্রোহের পথে নেমেছে ইন্টার্নদের একাংশ। শুক্রবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা। এনআরএসের ১৪৯ জন ইন্টার্নের প্রত্যেকেই এতে আছেন বলে আন্দোলনকারীদের তরফে দাবি করা হলেও কার্যক্ষেত্রে ৪৫ জনের বেশি যোগ দেননি। শনিবার দুপুরেই স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “তদন্তের কাজে কোনও বাধা সহ্য করা হবে না। হাসপাতালের কাজে অসুবিধা তৈরির চক্রান্তও আটকানো হবে।” তবু এই কর্মবিরতির জেরে রোগীদের দুর্ভোগ আটকানো সম্ভব হয়নি। শনিবার ইন্টার্ন কম থাকায় আউটডোর থেকে ইন্ডোর, সর্বত্রই চিকিৎসকের দেখা না মেলার অভিযোগ তোলেন রোগীরা।
এ দিকে সুশান্তবাবুর আরও বক্তব্য, “এক মাসের মধ্যে এই ইন্টার্নদের ডাক্তারির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার কথা। কর্মবিরতি না উঠলে সকলের রেজিস্ট্রেশন আটকে দেওয়া হবে। এনআরএসের অধ্যক্ষকেও তেমনই নির্দেশ দিয়েছি।” শনিবার দুপুরে অ্যাকাডেমি ভবনের সামনে প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থানে বসেছিলেন জনা তিরিশ ইন্টার্ন। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার বক্তব্য চাউর হতেই কিছুটা অস্বস্তির ছাপ পড়ে অনেকের মুখে। তবে মচকে না গিয়ে তাঁরা জানান, আন্দোলন চলবে। ইন্টার্নদের তরফে অরুণাভ দে বলেন, “ইন্টার্নরা মূলত শিক্ষার্থী। সিনিয়র চিকিৎসকদের কাজ নিরীক্ষণ করাই তাঁদের কাজ। অভিষেককে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। ১৬ নভেম্বর কোরপানকে পিটিয়ে মারার সময়ে ও শিশু-ওয়ার্ডে ডিউটিতে ছিল। গ্রেফতার হওয়ায় ওর পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রতিবাদে আমরাও শিক্ষা গ্রহণ করব না।” যা শুনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার মন্তব্য, “এর ফল ওঁরা টের পাবেন।”
কিন্তু যে স্বাস্থ্য দফতর পুলিশকে এনআরএসের হস্টেলের আবাসিকদের নাম জানাতে এবং ছবি দিতে দীর্ঘ দিন গড়িমসি করেছে বলে অভিযোগ, তারা হঠাৎ পুলিশকে সাহায্যের জন্য তৎপর কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মতে, প্রথমত ইন্টার্নদের কর্মবিরতিতে সমর্থন করলে হাসপাতালের দৈনন্দিন চিকিৎসা পরিষেবা ধাক্কা খাবে। দ্বিতীয়ত, তদন্তে সহযোগিতা না-করার অভিযোগে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতর ও এনআরএস কর্তৃপক্ষকে যথেষ্ট সমালোচিত হতে হয়েছে। তদন্ত ধীরে চলার জন্যও আঙুল উঠেছে সরকারের দিকে। তাই নবান্ন থেকেই নির্দেশ এসেছে পুলিশের কাজে সহযোগিতা করার। এবং ইন্টার্নদের বিদ্রোহ অঙ্কুরেই শেষ করতে বলা হয়েছে।
এ দিকে কোরপান-হত্যার ঘটনায় সাত জন জুনিয়র ডাক্তার গ্রেফতার হয়েছেন। কিন্তু এত দিন হবু চিকিৎসকেরা প্রতিবাদ করেননি। হঠাৎ অভিষেককে নিয়ে তাঁরা সরব হচ্ছেন কেন, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। এনআরএস ও স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের দাবি, অভিষেক ও আরও এক জনের সূত্র ধরে মূল পাণ্ডাদের পরিচয় প্রকাশিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই চাপ তৈরি করা হচ্ছে। এক মাস পরেই ডাক্তারির রেজিস্ট্রেশন পাওয়ার কথা এই ইন্টার্নদের। এর মধ্যে পুলিশি তদন্ত সূত্রে আরও কয়েক জন গ্রেফতার হলে তাঁদের ডাক্তার হওয়ার প্রক্রিয়াই ভেস্তে যাবে। সেই ভয় থেকেও তদন্তে বাধা দেওয়ার শেষ চেষ্টা হচ্ছে বলেও একাংশের ধারণা।
এ দিকে কর্মবিরতির জেরে হাসপাতালে আসা রোগীদের হেনস্থা হচ্ছে, তাঁরা ঠিকঠাক পরিষেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে। যদিও সুশান্তবাবু এবং এনআরএসের সুপার শেখ আলি এমাম সে কথা মানতে চাননি। তাঁদের কথায়, “৩৫-৪০ জন ইন্টার্ন কাজ না করায় হাসপাতালের পরিষেবা বিন্দুমাত্র ধাক্কা খায়নি।” তবে বাস্তবে শনিবার সরস্বতী পুজো থাকায় এমনিতেই হাসপাতালে সিনিয়র চিকিৎসকদের সংখ্যা কম ছিল। এই সব দিনে পরিষেবা উতরে দেন মূলত ইন্টার্ন ও হাউজস্টাফেরাই। তাঁরা কাজ না করায় সমস্যায় পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা বহু রোগীই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy