Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

আলিপুর জেলে বসেই জঙ্গি-জাল লস্করের

বছরখানেক আগে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে হাজির হয়েছিল হরিয়ানার এক যুবক। তার আত্মীয় ওই জেলে বন্দি। নিয়মবিধি মেনেই সেই আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করে সে। তার পরে ফিরে যায় নিজের রাজ্যে। দিল্লি পুলিশ অবশ্য বলছে, শেখ সুভান নামে হরিয়ানার ওই যুবকের আলিপুর জেলে আসাটা সাধারণ ব্যাপার নয়। এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। কারণ, সুভান লস্কর-ই-তইবার সদস্য।

শিবাজী দে সরকার
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ অগস্ট ২০১৪ ০৩:২৫
Share: Save:

বছরখানেক আগে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে হাজির হয়েছিল হরিয়ানার এক যুবক। তার আত্মীয় ওই জেলে বন্দি। নিয়মবিধি মেনেই সেই আত্মীয়ের সঙ্গে দেখা করে সে। তার পরে ফিরে যায় নিজের রাজ্যে।

দিল্লি পুলিশ অবশ্য বলছে, শেখ সুভান নামে হরিয়ানার ওই যুবকের আলিপুর জেলে আসাটা সাধারণ ব্যাপার নয়। এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র আছে। কারণ, সুভান লস্কর-ই-তইবার সদস্য। সম্প্রতি দিল্লির সরাই কালে খান রোড থেকে তাকে পাকড়াও করা হয়েছে। তাকে জেরা করেই জানা গিয়েছে, খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলায় বন্দি দুই লস্কর জঙ্গি আসলাম খান ওরফে আরশাদ এবং আসাবুদ্দিন ওরফে শৌকতের সঙ্গে দেখা করতেই কলকাতায় এসেছিল সে। জেলেই নতুন করে জঙ্গি নেটওয়ার্ক গড়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বছরখানেক আগের সেই সফরে মধ্য কলকাতার একটি হোটেলে উঠেছিল সুভান। সেখান থেকে আলিপুর জেলে গিয়ে তার আত্মীয় আসাবুদ্দিন এবং অন্য জঙ্গি আরশাদের সঙ্গে দেখা করে। তাদের সঙ্গে বসে নতুন ষড়যন্ত্র করে ফিরে যায় নিজের রাজ্যে। সুভানকে জেরা করে জানা গিয়েছে, কলকাতার জেলে বসেই পাকিস্তানে ফোন করত আসাবুদ্দিন ও আরশাদ। জেল থেকে প্রচুর ফোন উদ্ধার করা হলেও পাকিস্তানে ফোন করার কথা জানতে পারেননি বাংলার গোয়েন্দারা।

পুলিশি সূত্র জানাচ্ছে, গত অগস্টে আসাবুদ্দিনকে প্যারোলে ছাড়া হয়েছিল। সে ফিরে গিয়েছিল হরিয়ানার মেওয়াটে। সেখানে বসে ফের অপহরণ ও জঙ্গিপনার ছক কষছিল সে। সেই তথ্য হাতে পাওয়ার পরে দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেল তাকে গ্রেফতার করে। তাকে জেরা করে সুভানের নাম জানা যায়। পরে দিল্লিতেই ধরা পড়ে সুভান।

গোয়েন্দারা জানান, সুভান দিল্লি ও উত্তর ভারতের কয়েকটি এলাকায় নতুন করে লস্করের সংগঠন গড়ে তোলার দায়িত্বে ছিল। সম্প্রতি দাঙ্গাবিধ্বস্ত সাহারানপুরেও কয়েক বার গিয়েছে সে। “লস্করের নতুন দল তৈরি করে লালকেল্লা এবং অন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভবনে হামলার ছক কষেছিল সুভান,” বলেছেন এক গোয়েন্দাকর্তা। ২০১৩ সালে বিধানসভা ভোটের আগেও দিল্লি পুলিশ এমন একটি ছক বানচাল করে দেয়। গ্রেফতার করা হয় মহম্মদ শাহিদ এবং কারি রশিদ নামে দুই যুবককে। তারা সুভানের শাগরেদ বলেই জানিয়েছে দিল্লি পুলিশ।

দিল্লি পুলিশের একটি সূত্র বলছে, কলকাতার জেলে বসে কী ভাবে ছক সাজানো হচ্ছিল, তা জানার জন্য আর এক জঙ্গি আরশাদকে তাদের হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন। সেই জন্যই আরশাদকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়ে গত সপ্তাহে কলকাতায় এসেছিল দিল্লি পুলিশের স্পেশ্যাল সেলের একটি দল। এ ব্যাপারে আলিপুর আদালতে আবেদন জানিয়েছে তারা। রাজ্য সরকারকেও চিঠি দিয়েছে। তবে সেই আর্জিতে রাজ্য সরকার সাড়া দেবে না বলেই নবান্ন সূত্রের খবর। আদালতও অনুমতি দেবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ রয়েছে গোয়েন্দাদের মধ্যে।

খাদিম মামলার তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি-র এক কর্তা বলছেন, খাদিম মামলার দ্বিতীয় দফার বিচার শুরু হয়েছে। তাতে আসামি হিসেবে রয়েছে আরশাদ। দিল্লি পুলিশ তাকে নিয়ে গেলে মামলার ক্ষতি হবে। “আমরা তাই এখনই আরশাদকে দিল্লি পুলিশের হাতে দিতে রাজি নই,” বলছেন ওই সিআইডি-কর্তা।

খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলার অন্য এক আসামি নুর মহম্মদ ওরফে শাহবাজকে নিজেদের হেফাজতে নিতে চেয়েও পায়নি মুম্বই পুলিশ। সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (পোটা)-এ বিচারের জন্য তাকে নিয়ে যেতে চেয়েছিল মুম্বই পুলিশ। কিন্তু রাজ্য সরকার তাদের আবেদন মানেনি। খাদিম-কর্তা অপহরণ মামলার বিশেষ সরকারি আইনজীবী নবকুমার ঘোষ বলেন, “রাজ্য সরকার ফৌজদারি কার্যবিধি ২৬৮ ধারা প্রয়োগ করে নিরাপত্তার খাতিরে মুম্বইয়ে অভিযুক্ত শাহবাজকে পাঠানোর উদ্যোগ বন্ধ করে দিয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

alipur central jail laskar shibaji de sarkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE