Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

আমরা আসছি, দিদির ফোন পেয়েই তিন মন্ত্রীর ছুট

মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে শুক্রবার বিকেলে নবান্নের পোডিয়ামে সাংবাদিক বৈঠক করছেন তিন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম (ববি)। হঠাৎ ববির কাছে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর। সাংবাদিকরা শুনলেন, ববি বলছেন, “দিদি, আমরা তিন জনেই আছি। এঁদের সঙ্গে কথা বলছি। আচ্ছা, এখুনি আসছি।” ফোন রেখেই পুরমন্ত্রীর ইশারা দুই প্রবীণ সহকর্মীকে। সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে তিন জনেই ছুটলেন চোদ্দোতলায় বাগানঘেরা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:৫০
Share: Save:

মন্ত্রিসভার বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে শুক্রবার বিকেলে নবান্নের পোডিয়ামে সাংবাদিক বৈঠক করছেন তিন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ফিরহাদ হাকিম (ববি)। হঠাৎ ববির কাছে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর। সাংবাদিকরা শুনলেন, ববি বলছেন, “দিদি, আমরা তিন জনেই আছি। এঁদের সঙ্গে কথা বলছি। আচ্ছা, এখুনি আসছি।” ফোন রেখেই পুরমন্ত্রীর ইশারা দুই প্রবীণ সহকর্মীকে। সাংবাদিক বৈঠক ছেড়ে তিন জনেই ছুটলেন চোদ্দোতলায় বাগানঘেরা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে।

সাংবাদিকরা কিছুটা হকচকিয়ে গেলেন। হলটা কী? পাশে প্রেস কর্নারে ঢুকতেই টিভির পর্দায় চোখ পড়ল। ব্রেকিং নিউজ ‘গ্রেফতার মদন মিত্র’। এর পরে কারও বুঝতে অসুবিধে হয়নি কেন দিদি ভরা সাংবাদিক সম্মেলনের মাঝেই পুরমন্ত্রীকে ফোন করেছিলেন। আর কেনই বা তিন মন্ত্রী তড়িঘড়ি ছুটেছেন চোদ্দোতলায়।

শুধু চোদ্দোতলা নয়, খবরটা আসতেই এক লহমায় বদলে গেল গোটা নবান্নের ছবি। পরিচিত সাংবাদিক দেখলেই পুলিশ থেকে সরকারি কর্মী, ক্যান্টিন পরিচালক থেকে সাহেবদের গাড়িচালক মুচকি হাসি অনেকের মুখেই। নিজেদের মধ্যে ফিসফিসিয়ে এটাই তখন আলোচনার বিষয়।

নবান্নের নজরদারির দায়িত্বে কলকাতা পুলিশের যে সব স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কর্মীর, তাঁদের জটলায় ঢুকে পড়া গেল। ম্যানপ্যাকের হিজিহিজি শব্দ থামিয়ে এক জন বললেন, “দাদা ডিএ উসুল হয়ে গেল! আর ডিএ না পেলেও হবে।” তাঁরই অন্য এক সহকর্মীর কথায়, “রবিনহুড ধনীদের টাকা কেড়ে নিয়ে গরিবদের দিতেন। মদন তো গরিবের টাকা লুটে কুবের হয়েছেন।” আর এক জনের সংযোজন, “সিবিআই কিন্তু কাগজ ছাড়া কাউকে ধরে না। বুঝতে পারছেন তো, প্রথম দিনেই গ্রেফতার!” নিজেদের কথার ফাঁকে প্রতিবেদকের কাছে কৌতূহলী প্রশ্ন, “দাদা, এর পর কে? রাজ্য সরকারের গড়া সিট-এর অফিসারদের ব্যাপারে কিছু শুনেছেন?”

‘আপাতত তেমন কোনও খবর নেই’ বলে ওই জটলা থেকে বেরিয়েই সামনে পাওয়া গেল মুখ্যমন্ত্রীর কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার দফতরের এক কর্মীকে। গ্রেফতারের খবর শোনা হয়ে গিয়েছে তাঁর। আগ বাড়িয়ে বললেন, “সবার মুখ শুকিয়ে গিয়েছে!” কাদের? এ বার খোলসা করে ওই কর্মী বললেন, বিকেল সওয়া চারটে নাগাদ খবরটা নবান্নে পৌঁছতেই তৃণমূলের কর্মী-নেতাদের মুখ শুকিয়ে গিয়েছে। সবারই আলোচনা, এই ধরপাকড় শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে থামবে!

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য এ দিন কেন্দ্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধং দেহি মনোভাবই দেখিয়েছেন। প্রথমে তাঁর অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলবেন ঠিক করেছিলেন। সেই মতো কয়েক জন সাংবাদিক তাঁর নিজস্ব সম্মেলন কক্ষে পৌঁছেও গিয়েছিলেন। হঠাৎ তাঁরা দেখেন প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে চিৎকার করছেন মুখ্যমন্ত্রী। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের অফিসারেরা সাংবাদিকদের তখনকার মতো নীচে নেমে যেতে বলেন। পরে অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী নিজেই নীচে নেমে এসে সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া জানান। তখনও তাঁর চোখেমুখে উত্তেজনার ছাপ।

নবান্নের চৌহদ্দির বাইরে চায়ের দোকানে জড়ো হয়েছিলেন কয়েক জন পুলিশকর্মী। আলোচনার বিষয়বস্তু একটাই। এমনকী এ-ও বলছিলেন, “বাপের ব্যাটা সিবিআই। দেখিয়ে দিল।” জানা গেল, পরিবহণমন্ত্রীর গ্রেফতারির খবরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে সকলেরই মুখ গোমড়া। তবে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিবের দফতরের কর্মী-অফিসারদের মধ্যে জবরদস্ত চর্চা হয়েছে। সেখানেই এক কর্মীর সরস মন্তব্য, “এই আমলে ডিএ নেই তো কী হয়েছে? মন্ত্রীর জেলযাত্রা তো আছে।” তবে প্রায় সবারই কৌতূহল কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বসু, মদন মিত্রের পরে এ বার কার পালা? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরস্পরকে এই প্রশ্ন করে চলেছেন। হাতড়ে চলেছেন জবাবও।

ও দিকে, পরিবহণ ভবন মুহূর্তে ফাঁকা। যেন হানাবাড়ি। নীচে ছোটখাটো জটলা। এক পরিবহণ কর্মী বললেন, “মদনবাবু বুঝেই গিয়েছিলেন, আর কিছু করার নেই। জেলে ওঁকে যেতেই হবে। তাই গাঁধী, সুভাষচন্দ্রের কারাবাসের কথা গেয়ে রেখেছেন।” তবে মদন আপদে-বিপদে সবার পাশে দাঁড়াতেন এমন কথাও শোনা গেল কারও কারও মুখে। কেউ বললেন, “পরিবহণমন্ত্রী একা দোষী নন। এর পিছনে অনেক রাঘব বোয়াল রয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

madan mitra cpm tmc arrest cbi sardha scam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE