নতুন শিক্ষামন্ত্রীর দফতরে আরাবুল ইসলাম। বুধবার বিকাশ ভবনে। — নিজস্ব চিত্র
শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে কার্যত আরাবুল ইসলামের হাত ধরে নিজের নতুন অফিসে ঢুকলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেই আরাবুল, যাঁর নামের সঙ্গে জড়িয়ে আছে কলেজ-শিক্ষিকার দিকে জলের জগ ছোড়া থেকে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে সেন্টার-ইন-চার্জ ও অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শাসানোর অভিযোগ। রাজ্যের নতুন শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের সূচনাতেই তাঁর পাশে এই বিতর্কিত তৃণমূল নেতার নজরকাড়া উপস্থিতি স্বভাবতই প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। যার উত্তরে পার্থবাবু বলেছেন, “আমি কী করব! আমি তো আর আরাবুলকে ডেকে আনিনি! আরাবুলও আসতে পারে, সিপিএমের গুন্ডাও আসতে পারে। তা ছাড়া আরাবুল জনপ্রতিনিধি।” আর আরাবুলের ব্যাখ্যা, “গুরু আসছেন। শিষ্যেরা তো আসবেই!”
বুধবার বেলা পৌনে বারোটা নাগাদ পার্থবাবু সল্টলেকের বিকাশ ভবনে গিয়ে নতুন পদে যোগ দেন। তিনি পৌঁছানোর আধ ঘণ্টা আগে সদলবলে সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন ভাঙড়ের প্রাক্তন বিধায়ক, অধুনা ভাঙড় দু’নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সভাপতি আরাবুল ইসলাম। পরনে সাদা চেক শাট-প্যান্ট। দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা সটান উঠে যান ছ’তলায়, মন্ত্রীদের বসার জায়গায়। হঠাৎ বিকাশ ভবনে কেন? প্রশ্ন শুনে তিনি সংবাদ মাধ্যমকে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দেন, “কেন? আসা বারণ নাকি?”
বলেই বসে পড়েন পুলিশের চেয়ারে। খোশমেজাজে গল্প করতে থাকেন সঙ্গীদের সঙ্গে। খানিকক্ষণ বাদে পার্থবাবু আসেন। আরাবুল উঠে দাঁড়ান, পার্থবাবুর হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যান শিক্ষামন্ত্রীর ঘরের দিকে। সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মতো পার্থবাবুও স্কুলশিক্ষা ও উচ্চশিক্ষা দু’টিরই দায়িত্ব পেয়েছেন। এ দিন পার্থবাবু উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর ঘরে গিয়ে ঢোকেন। তিনি মন্ত্রীর চেয়ারে বসতেই উল্টো দিকে রাখা একমাত্র চেয়ারটিতে বসে পড়েন আরাবুল। নতুন মন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে ঘর তখন লোকে ঠাসা, তিলধারণের জায়গা নেই। এবং মন্ত্রী ও আরাবুল বাদে সকলেই দাঁড়িয়ে! ভিড়ের মধ্যে শিক্ষা দফতরের বিস্তর আধিকারিক ও কর্মী সংগঠনের প্রতিনিধিরা যেমন আছেন, তেমন রয়েছেন বিধানসভায় উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে।
পার্থবাবু দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়ে যান। পরে কথা বলবেন এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আরাবুলকে ঘরের বাইরে যেতে বলেন। আরাবুল চেয়ার ছেড়ে ওঠেন বটে, তবে ঘরের বাইরে যাননি। বরং দেওয়ালের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
ফের সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে শেষমেশ বেরিয়ে যান মন্ত্রীর ঘর ছেড়ে।
নতুন মন্ত্রী ততক্ষণে সাংবাদিক সম্মেলন শুরু করেছেন। জানাচ্ছেন, আগের শিক্ষামন্ত্রী অনেক উল্লেখযোগ্য কাজ করে গিয়েছেন। সে সবের মান আরও বাড়াতে হবে। তাঁর ঘোষণা, পূর্বসূরির অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে এবং শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী-ছাত্র-অভিভাবকদের নিয়ে ঐক্যবদ্ধ ভাবে শিক্ষার মানোন্নয়নের দিকে তিনি নজর দেবেন। কিন্তু ‘গুরু’ আসছেন বলে শিষ্য হিসেবে বিকাশ ভবনে আরাবুলের হাজিরা? সে সম্পর্কে মন্ত্রীর কী বক্তব্য?
সংবাদ মাধ্যমের প্রশ্ন শুনে পার্থবাবু জবাব দেন, “আমি জানি না। এ সব আমি শুনিনি। আপনারা শুনেছেন। এ-ও জানি, আপনারা এটাকেই সংবাদের শিরোনাম করবেন।” এ দিন মন্ত্রীর ঘরে আরাবুলের উপস্থিতি প্রসঙ্গে আশিসবাবুকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। “এ ব্যাপারে আমার কিছু বলার নেই।” মন্তব্য করেছেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবারই রাজ্য মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিক্ষা দফতরও হাত বদলেছে। ব্রাত্যের জায়গায় এসেছেন পার্থ, ব্রাত্যকে দেওয়া হয়েছে তুলনায় কম গুরুত্বের পর্যটন দফতর। তৃণমূলের অন্দরের ইঙ্গিত, স্বস্তিকা-কাণ্ডে পরিচালক সুমন মুখোপাধ্যায়ের পুলিশি হেনস্থা ব্রাত্য পছন্দ করেননি বলেই তাঁকে সরতে হল, যদিও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী এ হেন জল্পনায় আমল দেননি। অন্য দিকে মাস চারেক আগে শিল্প দফতর যাঁর হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, সেই পার্থবাবুর নতুন পদপ্রাপ্তিকে পুরস্কার হিসেবেই দেখছে দলের একাংশ।
নতুন শিক্ষামন্ত্রী এ দিন শিক্ষাকে রাজনীতিমুক্ত করারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। অন্য দিকে আরাবুল জানিয়ে দিয়েছেন, পার্থবাবুর কাছে তিনি আসবেনই। “আমি অন্য কোনও দফতরে যাই না। কিন্তু যেখানে গুরু আসছেন, সেখানে শিষ্য হিসেবে তো আমাকে আসতেই হবে!” ঘোষণা করেছেন বিতর্কিত তৃণমূল নেতা। তাঁর বক্তব্য, বাম আমলে পার্থবাবু যখন বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা, তিনি তখন ভাঙড়ের বিধায়ক। সেই থেকে তাঁদের ঘনিষ্ঠ সম্পকর্র্। আর সেই সুবাদেই এ দিন তিনি নতুন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন।
ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি আরাবুল ইসলামের দাবি, প্রতিষ্ঠানের কিছু সমস্যা নিয়েও তাঁর শিক্ষামন্ত্রীকে কিছু বলার ছিল। তা আর বলে ওঠা হয়নি।
ব্যাপারটা নিয়ে পরে তিনি ‘গুরু’র সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে জানিয়ে রেখেছেন আরাবুল ইসলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy