কুম্ভমেলাকে ঘিরে অব্যবস্থার সমালোচনা করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় দাঁড়িয়ে ‘মৃত্যুকুম্ভ’ মন্তব্য করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় জবাব দিলেন যোগী আদিত্যনাথ। মমতার নাম না করলেও তৃণমূলের নাম করে ‘মিথ্যে খবর’ রটানোর অভিযোগ তুললেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল-সহ বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ করে তাঁর অভিযোগ, সনাতন ধর্ম, গঙ্গা এবং ভারতের বিরুদ্ধে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করা হচ্ছে। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্যের বিরুদ্ধে বাংলায় পথে নেমে প্রতিবাদ করেছে বিজেপি ও হিন্দুত্ববাদী নানা সংগঠন।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভায় বুধবার মহাকুম্ভ নিয়ে যাবতীয় আক্রমণের জবাব দিয়েছেন যোগী। বলেছেন, ‘‘ওরা (বিরোধী) প্রথম দিন থেকে মহাকুম্ভের বিরোধিতা করে আসছে...। এ বার মহাকুম্ভের প্রস্তুতি-পর্ব থেকে আপনাদের (এসপি) সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি, আপনাদের পরামর্শ চেয়েছি... কিন্তু এই সভায় আপনারা আসতেনই না। সমাজবাদী পার্টির জাতীয় সভাপতি প্রশ্ন তুলেছেন মহাকুম্ভ কত টাকা খরচ হচ্ছে, লালুপ্রসাদ কুম্ভকে বলছেন ‘ফালতু’, সমাজবাদী পার্টির এক শরিক মহাকুম্ভকে বলছেন ‘মৃত্যুকুম্ভ’...।’’ যোগীর আরও বক্তব্য, ‘‘কংগ্রেস, এসপি, আরজেডি, তৃণমূলের নেতারা দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করে চলেছেন... যদি সনাতন ধর্ম সংক্রান্ত কোনও অনুষ্ঠানের আয়োজন করা অপরাধ হয়, তা হলে আমাদের সরকার সেই অপরাধ করবে!’’
মহাকুম্ভে পদপিষ্টের ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের প্রাণহানি নিয়ে প্রথম থেকেই সরব মমতা। বিধানসভায় মঙ্গলবার রাজ্যপালের ভাষণের উপরে জবাবি বক্তৃতায় বিজেপিকে নিশানা করতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, “কুম্ভমেলাকে আমি সম্মান করি। কুম্ভের কথা না-ই বা বললাম। মহাকুম্ভ না মৃত্যুকুম্ভ? মৃত্যুকূপ হয়ে গিয়েছে! কত দেহ ভাসিয়ে দিয়েছেন? হাজার হাজার।’’ তৃণমূল নেত্রীর ওই মন্তব্যকে সমর্থন করেছেন এসপি-র প্রধান অখিলেশ যাদব। তাঁর বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক দম ঠিক কথা বলেছেন। ওই ঘটনায় তাঁর রাজ্যের মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। অন্যান্য রাজ্যের মানুষও মারা গিয়েছেন। এফআইআর পর্যন্ত করা হচ্ছে না।এই ব্যবস্থাপনার জন্য দায়ী কে?’’
অখিলেশের এই অভিযোগকে অবশ্য কোনও গুরুত্বই দিয়ে চাননি উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। যোগীর বক্তব্য, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দল মহাকুম্ভের আয়োজন করে না। এটা সামাজিক অনুষ্ঠান। সরকার এখানে সেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে মাত্র। আমাদের সরকারের সৌভাগ্য যে, আমরা এই শতাব্দীর মহাকুম্ভের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি।’’ সেই সঙ্গে ২৯ জানুয়ারি মহাকুম্ভে পদপিষ্ট হয়ে ৩০ জনেরই মৃত্যু হয়েছিল বলেও অনড় থেকেছেন যোগী।
কুম্ভ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতার মন্তব্যের প্রতিবাদে এ দিনই দলের উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার ডাকে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, জেলা সভাপতি তমোঘ্ন ঘোষ, দক্ষিণ কলকাতা সাংগঠনিক জেলার সভাপতি অনুপম ভট্টাচার্য, পুর-প্রতিনিধি সজল ঘোষ, মিনাদেবী পুরোহিত প্রমুখ। মহাত্মা গান্ধী রোডের সংযোগস্থল থেকে শুরু হয়ে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ ধরে প্রতিবাদ মিছিল বিজেপির রাজ্য দফতর মুরলীধর সেন লেনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে কুম্ভের জল দিয়ে রাস্তা ধোয়া হয়, পথ অবরোধও হয়। সুকান্তের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী নিজেকে ধর্মনিরপেক্ষ বলেন। ধর্মনিরপেক্ষ মানে হিন্দু ধর্মের অপমান, বাকিদের সম্মান? আমি মুখ্যমন্ত্রীকে চ্যালেঞ্জ করেছিলাম কুম্ভে গিয়ে স্নান করার জন্য। মুখ্যমন্ত্রীর সাহস নেই সেই কাজ করার। তাই আমরাই কুম্ভের জল দিয়ে ধুয়ে দিলাম!’’ মুখ্যমন্ত্রীর কুম্ভ সংক্রান্ত মন্তব্য বিধানসভার কার্যবিবরণী থেকে বাদ এবং তাঁকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার আর্জি জানিয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসকে চিঠিও দিয়েছেন সুকান্ত।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)