Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

মহিলা কমিশন যাত্রা পার্টি, বলছেন খোদ চেয়ারপার্সন

রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও মহিলা কমিশন কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছে। এ বার সেই কমিশনকে ‘যাত্রা পার্টি’ বললেন কমিশনেরই চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়! তাঁর মতে, কমিশনের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চেয়ে তেমন লাভ হয়নি।

সুনন্দা মুখোপাধ্যায়

সুনন্দা মুখোপাধ্যায়

সোমা মুখোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০৩:১১
Share: Save:

রাজ্যে একের পর এক নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটলেও মহিলা কমিশন কার্যত হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে বলে আগেই অভিযোগ উঠেছে। এ বার সেই কমিশনকে ‘যাত্রা পার্টি’ বললেন কমিশনেরই চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়! তাঁর মতে, কমিশনের বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা চেয়ে তেমন লাভ হয়নি।

ক্ষমতায় আসার পরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন করেছিলেন সুনন্দাদেবীকে। শেষ বাম সরকারের পূর্তমন্ত্রী ক্ষিতি গোস্বামীর স্ত্রী-কে কেন কমিশনের মাথায় বসালেন মুখ্যমন্ত্রী, তা নিয়ে তখন জল্পনা কম হয়নি। তিন বছর পরে কিন্তু নবান্ন থেকে কমিশন পর্যন্ত কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, সুনন্দার আসন টলোমলো।

তৃণমূলের একটি সূত্রের বক্তব্য, শেষ লোকসভা নির্বাচনে যাঁরা পরাজিত হয়েছেন তাঁদের প্রায় সকলকেই কোনও-না-কোনও জায়গায় ‘সম্মানজনক পুনর্বাসন’-এর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু দলের শ্রমিক নেত্রী ও মমতার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত দোলা সেনের ভাগ্যে এখনও শিকে ছেঁড়েনি। নবান্নের খবর, সুনন্দাদেবীকে সরিয়ে সেই পদে দোলা সেনকে বসানোর কথা ভাবছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর এই ভাবনার ছায়া পড়েছে কমিশনের কাজকর্মে, যার জেরে ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছেন সুনন্দা। তাঁর এ দিনের মন্তব্য সেই ক্ষোভেরই প্রকাশ বলে মনে করছেন অনেকে।

প্রশ্ন উঠেছে, কমিশনের ভূমিকা নিয়ে তাঁর যখন এতই ক্ষোভ বা অনাস্থা, তা হলে তিনি নিজে কেন পদ আঁকড়ে বসে রয়েছেন? জবাবে সুনন্দাদেবী অবশ্য নিজের ভাবমূর্তি বজায় রেখেই উত্তর দিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রীর প্রতি আমার পূর্ণ আস্থা রয়েছে। প্রয়োজন বুঝলে উনি নিজেই যথাযথ ব্যবস্থা নেবেন।”

কমিশনের কর্মীদের একটা বড় অংশ জানিয়েছেন, মাস কয়েক আগে দোলা সেন, লকেট চট্টোপাধ্যায়রা যোগ দেওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে বিরক্তি প্রকাশ করেছেন সুনন্দাদেবী। অভিযোগ করেছেন, চেয়ারপার্সন হিসেবে তিনি তাঁর প্রাপ্য মর্যাদা পাচ্ছেন না। কমিশনের দফতরে কাজের পরিবর্তে ‘পাড়ার ক্লাবের আড্ডা’ চলে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক বার। দিন কয়েক আগে হাওড়ার জেলাশাসক ও পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পরে লিলুয়া হোম পরিদর্শনে যান কমিশনের কয়েক জন সদস্য। সুনন্দাদেবী সেখানে গরহাজির ছিলেন।

বিরোধীদের অভিযোগ, গত তিন বছর ধরে হাতে গোনা দু’একটি ক্ষেত্র ছাড়া বেশির ভাগ সময়েই প্রশাসনের বর্ধিত অংশ হিসেবে মন্তব্য করে গিয়েছে কমিশন। সুনন্দাদেবীর কথা নিয়ে কমিশনের সদস্য-অভিনেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় অবশ্য প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে খুবই সতর্ক। প্রথমে তাঁর বক্তব্য, “কোন কথার পরিপ্রেক্ষিতে সুনন্দাদি এই কথা বলেছেন আমি জানি না। শহরে ফিরে ওঁর সঙ্গে কথা বলে বিষয়টা জানতে চাইব।” কয়েক মিনিটের মধ্যে ফের ফোন করে তিনি বলেন, “কমিশনে প্রত্যেকের সঙ্গেই প্রত্যেকের সুসম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কমিশন কী কাজ করল সেটা প্রচার হয় না, বরং একের সঙ্গে অন্যের গন্ডগোল লাগানোর চেষ্টা চলে।” তবে কমিশনের অন্দরে সমস্যা যে আছে, প্রকারান্তরে তা মেনে নিয়েছেন দোলা সেন। তাঁর কথায়, “আমার ছোটবেলার শিক্ষা হল, ঘর বা সংগঠনের ভিতরকার কোনও সমস্যা নিয়ে বাইরে আলোচনা না করা। তাই এ নিয়ে কিছু বলব না।”

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE