Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Lost and found

চোদ্দো বছর পরে ঘরে ফেরাল পুলিশ ও সংস্থা

জানুয়ারি, ২০০৬। মালদহের বামুনগোলা থানা এলাকার ছাতিয়া গ্রামের তরুণী গীতা মধু সেই সময়েই নিজের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন।

পুনর্মিলন: পরিবারের সঙ্গে গীতা (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)। নিজস্ব চিত্র

পুনর্মিলন: পরিবারের সঙ্গে গীতা (বাঁ দিক থেকে দ্বিতীয়)। নিজস্ব চিত্র

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২০ ০৪:৪১
Share: Save:

চোদ্দো বছর পর দেখা। মালদহ থেকে আসা বড়দা ও ছোট বোনকে দেখে ভিজে গিয়েছিল তরুণীর চোখ। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসে দেখা হতেই বোনকে আদর করতে করতে দাদা বলছিলেন, “আর কোথাও যেতে দেব না। আমরা যা খাব তোকেও তা-ই খাইয়ে রাখব।”

জানুয়ারি, ২০০৬। মালদহের বামুনগোলা থানা এলাকার ছাতিয়া গ্রামের তরুণী গীতা মধু সেই সময়েই নিজের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। এখন তাঁর বয়স চল্লিশ। কাছের গ্রামে বিয়ে হলেও স্বামীর অত্যাচারে ঘর করতে না পেরে গীতা চলে এসেছিলেন বাবা-মায়ের কাছে। তাঁর দাদা খোকন মধুর কথায়, “তখন দিল্লিতে থাকতাম। বাবা-মায়ের কাছ থেকে বোনের মানসিক পরিবর্তনের কথা শুনতে শুনতে হঠাৎ এক দিন জানতে পারি, ও বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে। বছরের পর বছর থানা-পুলিশ করেও পাইনি।”

কী ভাবে খোঁজ মিলল? যার শুরুটা চলতি বছরের ১৩ মার্চ। ফুলবাগান থানার পুলিশ সে দিন ফুটপাতে অসহায় অবস্থায় বসে থাকা এক মহিলাকে দেখতে পান। অনেক জিজ্ঞাসা করেও পরিচয় না জানতে পেরে পার্ক স্ট্রিটের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে পাঠানো হয় তাঁকে। ওই সংস্থার সুপার ভারতী আইচ শনিবার বলেন, “প্রথমে ওই মহিলা পরিচয় কিছুই জানাতে পারেননি। নিয়মিত কাউন্সেলিং ও পাভলভ হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করানো হয়। তার পরেই টুকরো টুকরো তথ্য পেতে থাকি। যা পেয়েছি সে সব সংগ্রহ করে ওঁর বাড়ি খোঁজার চেষ্টা করেছিলাম। এ কাজেও পাশে ছিল ফুলবাগান থানা। তাদের সহযোগিতায় গত বৃহস্পতিবার গীতাকে ওঁর পরিবারের হাতে তুলে দিই।” তবে চিকিৎসার জন্য তিনি নিউ টাউনে বোনের বাড়িতেই রয়েছেন। খোকন বলেন, “বোনের কয়েকটি কাউন্সেলিং বাকি আছে। পাভলভে ডাক্তার দেখিয়ে আগামী সপ্তাহেই বাড়ি ফিরব।” কথার মাঝেই খোকন ফুলবাগান থানা এবং ওই সংস্থাকে বার বার ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন। তাঁর কথায়, “যে ভাবে ওই সংস্থা ও পুলিশ বোনকে ফিরিয়ে দিল, সেই ঋণ শোধ করতে পারব না।”

মেয়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষায় থেকে মা-বাবা এখন শয্যাশায়ী। ফোনে মা কদমী মধু কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “মেয়েটার আধার, ভোটার, রেশন কার্ড সব গায়েব করে দিয়েছিল জামাই। সে এখন অন্য মেয়েকে নিয়ে সংসার করছে। আসলে আমাদের মেয়ের অস্তিত্ব না রাখতেই যাবতীয় তথ্য নষ্ট করেছে। শেষে গ্রাম প্রধানকে দিয়ে চিঠি লিখিয়ে ফুলবাগান থানায় মুচলেকা দিতে হয়েছে।”

মালদহের জগদলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান তুলসী মণ্ডলের কথায়, “মেয়েকে খুঁজতে বলহরিবাবু এবং কদমীদেবী দীর্ঘ বছর চেষ্টা করছেন। মেয়ের ভোটার, আধার বা রেশন কার্ড না থাকায় আমার চিঠি দেখিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে যে তরুণী তাঁদের মেয়ে। ও তো আমাদের সবার মেয়ে। হারিয়ে যাওয়া ১৪ বছর আমরা কেউ ওকে ফিরিয়ে দিতে পারব না। কিন্তু বাকি জীবন যাতে নির্বিঘ্নে কাটাতে পারে তা দেখব।”

আর ফুলবাগান থানার ওসি করুণাশঙ্কর সিংহ বলছেন, “ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার শুশ্রূষায় তরুণী টুকরো টুকরো তথ্য দেন। তার ভরসায় আমরা বামুনগোলা থানার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করি। ওই থানার সূত্রে গীতার পরিবারের খোঁজ মেলে।একটি বিচ্ছিন্ন পরিবারকে জুড়ে দিতে পেরে অবশ্যই মানসিক শান্তি হচ্ছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Lost and found brother and sister reunion
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy