Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Health

এত দিন নিজেকে মহিলা বলেই জানতেন, ক্যানসার চেনাল আসলে তিনি পুরুষ!

বহিরঙ্গে তিনি পুরোপুরি মেয়েদের মতোই। গলার স্বর থেকে শুরু করে স্তন সবই মেয়েদের মতো। যোনির গঠনও বহিরঙ্গে নারীসুলভ।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০২০ ০৪:১৬
Share: Save:

এত দিন নিজেকে মহিলা বলেই জানতেন তিনি। তিরিশ বছর বয়সে পৌঁছে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরে জানলেন, আসলে তিনি পুরুষ!

শরীরে ক্যানসার বাসা না-বাঁধলে সেই সত্য হয়তো জানা সম্ভব ছিল না। তাঁর চিকিৎসকেরাও এমন ঘটনাকে বিরল এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের দিক দিয়ে লক্ষ্যণীয় বলে মনে করছেন।

শুধু ওই রোগী নন, সন্দেহ হওয়ায় তাঁর ২৮ বছর বয়সি বোনেরও জিন পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা। দেখা গিয়েছে, আসলে তিনিও পুরুষ।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত এপ্রিল মাস নাগাদ নিউ গড়িয়ার নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু ক্যানসার হাসপাতালে বীরভূমের এক রোগী আসেন। বিবাহিতা এবং যথেষ্ট সুদর্শনা। তাঁর তলপেটে অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছিল বেশ কিছু দিন ধরে। হাসপাতালের সার্জিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট সৌমেন দাস এবং ক্লিনিক্যাল অঙ্কোলজিস্ট অনুপম দত্ত তাঁকে পরীক্ষা করেন।

বহিরঙ্গে তিনি পুরোপুরি মেয়েদের মতোই। গলার স্বর থেকে শুরু করে স্তন সবই মেয়েদের মতো। যোনির গঠনও বহিরঙ্গে নারীসুলভ। বিয়ে হয়েছে ৯ বছর আগে। তবে জন্ম থেকেই তাঁর জরায়ু ও ডিম্বাশয় ছিল না। পিরিয়ড হয়নি। সিটি স্ক্যানে তাঁর তলপেটে ১৫ সেন্টিমিটার/২০ সেন্টিমিটারের একটি টিউমার পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন: রাজনীতির তরজার মাঝে আক্ষেপ ছাপিয়ে শিল্পের দাবি

সৌমেনবাবুর কথায়, ‘‘পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর যোনি রয়েছে ঠিকই, কিন্তু সেটি ‘ব্লাইন্ড এন্ডেড’, অর্থাৎ শুরু হয়েই শেষ হয়ে গিয়েছে। আমাদের তখন সন্দেহ হয়। রোগীর ‘কেরিওটাইপিং’ অর্থাৎ ক্রোমোজোম পরীক্ষা করা হয়। তাতে দেখা যায়, তাঁর শরীরের কম্বিনেশন হল ‘XY’ ক্রোমোজোম, যা পুরুষদের থাকে। নারীদের শরীরে থাকে XX ক্রোমোজোম।’’

চিকিৎসকেরা আরও জানান, ওই রোগীর তলপেটের টিউমারটি পরীক্ষা করে দেখা যায়, সেটি আসলে অণ্ডকোষ। যা শরীরের বাইরের বদলে তাঁর শরীরের ভিতরে রয়েছে। এবং বায়োপ্সি করে টিউমারে ক্যানসার মেলে। অনুপমবাবু বলেন, ‘‘পুরুষদের যে ক্যানসার হয়, এটি সেই ধরনের টেস্টিকিউলার ক্যানসার। একে চিকিৎসা পরিভাষায় সেমিনোমা বলা হয়।’’ ওই রোগীর এখন ২১ দিন অন্তর কেমোথেরাপি চলছে। অবস্থা আশঙ্কাজনক।

আরও পড়ুন: ধর্ষণের চেষ্টা মেয়েকে, ধাক্কায় মায়ের মৃত্যু

তা হলে প্রশ্ন ওঠে, বহিরঙ্গে তিনি কী করে মেয়েদের মতো?

সৌমেনবাবু জানান, ওই রোগীর ‘টেস্টিকিউলার ফেমিনাইজেশন সিনড্রোম’ রয়েছে। তাঁর অণ্ডকোষ যে হেতু শরীরের ভিতরে ছিল এবং সুগঠিত ছিল না, তাই পুরুষ হরমোন ‘টেস্টোস্টেরন’ ঠিক ভাবে ক্ষরণ হয়নি। বরং তাঁর দেহে মহিলা হরমোন তুলনায় বেশি ছিল। তাই বহিরঙ্গে তিনি একেবারে মহিলার মতো।

চিকিৎসকেরা জানতে পারেন যে, ওই রোগীর একমাত্র বোনেরও জন্ম থেকে জরায়ু ও ডিম্বাশয় নেই। তাঁরা তখন তাঁরও কেরিওটাইপিং করেন। দেখা যায়, তাঁর শরীরেও ‘XY’ জিনের কম্বিনেশন। তাঁরও দেহের ভিতরে অণ্ডকোষ রয়েছে। চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘অণ্ডকোষের কথা আগে জানা গেলে ওটা অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া যেত। তা হলে ক্যানসার পর্যন্ত গড়াত না। তাই এখন ওই রোগীর বোনের অণ্ডকোষ অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতি চলছে।’’

জানা গিয়েছে, ওই রোগীর দুই মাসিরও একই সমস্যা ছিল। অর্থাৎ এমনিতে মহিলা বলে মনে করা হলেও তাঁদের জরায়ু ও ডিম্বাশয় ছিল না। কিন্তু পরীক্ষানিরীক্ষা তেমন হয়নি বলে জিনগত ভাবে তাঁরা কী ছিলেন, জানা যায়নি।

ওই রোগীর বোনের কথায়, ‘‘কৈশোরে যখন আমাদের পিরিয়ড হল না, তখন ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। ডাক্তার বলেছিলেন, আমাদের ওভারি আর ইউটেরাস নেই, ফলে কোনও দিন সন্তান হবে না। সেটা জানিয়েই দিদির বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কখনও কেউ বলেননি যে, আমরা আসলে মহিলাই নই, বা আমাদের শরীরের ভিতরে অণ্ডকোষ রয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Health Cancer Gender
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy