প্রতীকী ছবি।
‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্পের আওতায় এক জন মহিলার অ্যাকাউন্টে এক মাসে একাধিক বার আর্থিক সহায়তা পৌঁছচ্ছে বলে তথ্য পেয়েছে রাজ্য! অভিযোগ উঠেছে, একাধিক মহিলার তরফে একটিই অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ফর্ম যখন জমা পড়েছে, তখন এতটা খুঁটিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি। এখন ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে।
প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, আর্থিক সহায়তা পাঠানোর চূড়ান্ত তালিকায় একই উপভোক্তার নাম একাধিক বারও উল্লেখ রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বরও একই। মনে করা হচ্ছে, সেই উপভোক্তারা প্রতি মাসে একাধিক বার বরাদ্দ হাতে পেয়েছেন।
এমনিতেই কোষাগারের উপরে প্রবল চাপ। এখন দেখা গিয়েছে, নির্ধারিত বরাদ্দের বেশি অর্থ পৌঁছচ্ছে উপভোক্তার হাতে! এই পরিস্থিতিতে ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-কে আতস কাচের তলায় আনতে বাধ্য হল রাজ্য সরকার। কলকাতা পুরসভা-সহ সব জেলা প্রশাসনকে এখন সরকার নির্দেশ দিয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে ওই প্রকল্পের তথ্যভান্ডারকে ত্রুটিমুক্ত করতেই হবে। ‘জলে’ যাওয়া টাকাও কোষাগারে ফেরত আনতে হবে দ্রুত। সরকারের নির্দেশ, পুনরায় চালাতে হবে চিহ্নিত উপভোক্তাদের যাচাই প্রক্রিয়া। একমাত্র ন্যায্য উপভোক্তাই তথ্যভান্ডারে জায়গা পাবেন। অন্যথায় কাটা যাবে নাম। জেলা শাসকদের উদ্দেশে সরকারের নির্দেশ, সরেজমিনে নতুন করে এমন প্রতিটি ঘটনা যাচাই করতে হবে। একমাত্র বৈধ উপভোক্তাকেই আর্থিক সুবিধাপ্রাপকদের তালিকার রাখা হবে।
যাচাইয়ের পরে লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পাচ্ছেন প্রায় ১.৪৫ কোটি উপভোক্তা। প্রশাসনের দাবি, এঁদের মধ্যে যাঁদের ক্ষেত্রে গরমিল ধরা পড়েছে, রাজ্যের নির্দেশে সশরীরে তাঁদের কাছে পৌঁছে নতুন করে প্রত্যেক উপভোক্তার যাচাই প্রক্রিয়া করতে হবে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। কোনও উপভোক্তা বৈধ বলে প্রমাণিত হলে এবং তাঁর নিজস্ব অ্যাকাউন্ট না থাকলে, তাঁর নামে নতুন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেবে প্রশাসন।
প্রশাসনের শীর্ষ মহল স্পষ্ট করে দিয়েছে, এই যাচাই প্রক্রিয়া এবং বৈধ উপভোক্তার নাম নথিভুক্ত হওয়ার কাজ চলাকালীন সংশ্লিষ্টদের আর্থিক সুবিধা দান বন্ধ থাকবে। বাকি উপভোক্তারা যেমন টাকা পাচ্ছিলেন তেমনই পাবেন। গরমিলের কারণে, এত দিন ধরে অ্যাকাউন্টগুলিতে যে অতিরিক্ত অর্থ পাঠানো হয়েছে, ‘ট্রেজ়ারি চালান’-এর মাধ্যমে তা ফেরত এনে প্রকল্পের মূল খাতে জমা করতে হবে। এই সব কাজ ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা শাসকদের। প্রসঙ্গত, সাধারণ মহিলা উপভোক্তা এই প্রকল্পের থেকে মাসে পাঁচশো টাকা পেয়ে থাকেন। তফসিলি জাতি বা জনজাতিভুক্ত উপভোক্তাদের সেই বরাদ্দ মাথাপিছু মাসে ১০০০ টাকা।
জেলা প্রশাসনিক সূত্রের বক্তব্য, যে গরমিলগুলির কথা বলা হচ্ছে, সেগুলি ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা গিয়েছে। ফলে যাচাই প্রক্রিয়া চালাতে বড় সমস্যা হবে না। যে সময়ে এই প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত করা হয়েছে, তখন যাচাই প্রক্রিয়াও চালানো হয়েছিল। তার পরেও কী করে এত বড় গরমিল হল, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন প্রশাসনিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই। জেলাকর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য সব কাজ সামলে বিপুল সংখ্যক আবেদনকারীর ভিন্ন ভিন্ন আবেদনপত্র যাচাই করতে হয়েছে। সেই তুলনায় এই ‘ভুল’ নিতান্তই ছোট এবং অনিচ্ছাকৃত।
লক্ষ্মীর ভান্ডার বাকি সব প্রকল্পের থেকে কার্যত এগিয়েই রয়েছে। সরকারি সূত্রের দাবি, এখনও পর্যন্ত প্রায় ১.৬৩ কোটি উপভোক্তা প্রকল্পের সুবিধা পেতে আবেদন করেছেন। যাচাইয়ের পরে অনুমোদন পেয়েছে প্রায় ১.৫২ কোটি আবেদনপত্র। প্রকল্পের আর্থিক সুবিধা পেয়েছেন প্রায় ১.৪৫ কোটি উপভোক্তা। এতে মাসে সরকারের খরচ হচ্ছে ৮০০ কোটি টাকার কাছাকাছি। আগামী জানুয়ারিতে দুয়ারে সরকারে এই প্রকল্পে উপভোক্তার সংখ্যা ২ কোটি পার হয়ে গেলে রাজ্যের মোট খরচও বেড়ে হতে পারে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy