—ফাইল চিত্র।
যাবতীয় আলাপ-আলোচনা নিস্ফলা গেল। মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে তৃণমূলের সঙ্গে বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে গেলেন শুভেন্দু অধিকারী। এর পর তাঁর দলত্যাগ স্রেফ সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করছে তৃণমূল। এর পর শুভেন্দুর বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জল্পনা আরও তীব্র হচ্ছে। যদিও এর কোনও সমর্থন এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে মেলেনি।
শুক্রবার শুভেন্দুর ইস্তফার পর তাঁর বিজেপি-তে যোগ দেওয়ার জল্পনার পাশাপাশিই (রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ শুভেন্দুর ইস্তফার পরে পরেই তাঁকে আমন্ত্রণ এবং স্বাগত জানিয়ে রেখেছেন) এই আলোচনাও শুরু হয়েছে যে, শুভেন্দুর পর আর কোনও মন্ত্রী মন্ত্রিত্ব ছাড়েন কি না বা অন্য কোনও নেতা দলের সঙ্গে দূরত্ব আরও বাড়ান কি না। গত কয়েক মাস ধরেই শুভেন্দুর সঙ্গে আরও কয়েকজন মন্ত্রী এবং নেতাকে নিয়ে দলত্যাগের জল্পনা তৈরি হয়েছে। এখন দেখার, সেগুলিও এর পর সত্যি হয় কি না। ঘটনাচক্রে, শুক্রবারেই কোচবিহারের তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী দিল্লি গিয়েছেন। তিনি বিজেপি-তে যোগ দিতে গিয়েছেন বলেই মনে করছে তৃণমূল। মিহিরের সঙ্গেও বিভিন্ন স্তরে আলোচনা চালিয়েছিলেন দলীয় নেতৃত্ব। কিন্তু তাতে কোনও লাভ হয়নি। ফেসবুকে তৃণমূলের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা করে দিয়েছেন মিহির।
শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব ছাড়ার ঘটনার পর স্বভাবতই ‘উল্লসিত’ বিজেপি। দিলীপের কথায়, ‘‘এর পর আরও লোক তৃণমূল ছাড়বেন। উনি যদি আমাদের দলে আসতে চান, আমরা সাদরে নিয়ে নেব।’’ অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর কথায়, ‘‘এটা তৃণমূলের পক্ষে অশনি সঙ্কেত।’’ ঘটনাচক্রে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্ত্রিত্বে ইস্তফা পাঠানোর পাশাপাশি সেই চিঠিটি রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়কেও ইমেল করেছিলেন শুভেন্দু। রাজ্যপাল দেরি না করে সেটি তাঁর টুইটার হ্যান্ডলে প্রকাশ করে দেন।
আরও পড়ুন: রাজ্য মন্ত্রিসভা থেকে শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফা
প্রসঙ্গত, এর আগে বৃহস্পতিবার শুভেন্দু হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্স (এইচআরবিসি) এবং হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদেও ইস্তফা দেন। তার পরেই তাঁর মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দেওয়ার জল্পনা আরও জোরদার হয়েছিল। দেখা গেল, রাত পোহাতে না পোহাতেই শুভেন্দু মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিলেন। পাশাপাশিই ছেড়ে দিলেন রাজ্য সরকারের নিরাপত্তা এবং মন্ত্রীর কনভয়ের পাইলট কারও। তবে দল এখনও তিনি ছাড়েননি। ছাড়েননি বিধায়ক পদও। স্বভাবতই এর পর তৃণমূল শুভেন্দুকে আক্রমণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেবে। তাঁর বিধায়ক পদ না-ছাড়া নিয়েও কটাক্ষ করা শুরু হবে বলেই শাসকদল সূত্রের খবর। এখন দেখার, অন্য কোনও দলে যোগ দেওয়ার আগেই দল শুভেন্দুকে বহিষ্কার করে কিনা। তেমন হলেও পরিস্থিতির খুব একটা বদল ঘটবে না। শুভেন্দুর বিধায়ক পদ থাকবে। কারণ, বিধানসভা ভোটের আর মাসছয়েক বাকি। তবে যে দ্রুততায় ঘটনা ঘটছে, তাতে কোনওকিছুই অসম্ভব নয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
নন্দীগ্রামের এই সভার পর থেকেই তৃণমূলের সঙ্গে ঝামেলার সূত্রপাত শুভেন্দুর।
শুভেন্দুর সঙ্গে দু’বার আলোচনায় বসেছিলেন তৃণমূলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায়। সেখানে কোনও মীমাংসা না হলেও সৌগত আশাবাদী ছিলেন। তাঁকে অবশ্য শুক্রবারও আশাবাদী শুনিয়েছে। সৌগত বলেছেন, ‘‘উনি তো এখনও দলের বিধায়কের পদ ছাড়েননি। যতক্ষণ উনি দলে আছেন, ততক্ষণ আশাবাদী থাকব এবং চেষ্টা করে যাব। এটাই আমার প্রতি দলের নির্দেশ। উনি দু’বার আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। এর পরেও কথা বলতে চান বলেই আমি জানি। ওঁর সঙ্গে কথা বলে আমার ওঁকে ইতিবাচক মনে হয়েছে। উনি আমায় বলেছেন যে, পার্টি ছাড়তে চান না।’’ মন্ত্রিত্ব ছাড়াটা শুভেন্দুর ‘নীতিগত ও ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত’ বলেই বর্ণনা করেছেন সৌগত। প্রসঙ্গত, তৃণমূলের অন্দরে যাঁরা শুভেন্দুর দলত্যাগের বিপক্ষে ছিলেন, সৌগত তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি এখনও শুভেন্দুর সঙ্গে বৈঠক হবে বলে আশাবাদী।
রাজ্যের পরিবহণ, সেচ এবং জলসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী ছিলেন শুভেন্দু। তিনটি মন্ত্রিত্বেই ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। অর্থাৎ, রাজ্য সরকারের সঙ্গে সমস্ত রকম সম্পর্ক এবং সংশ্রব ত্যাগ করলেন তিনি। স্যানিটাইজেশনের কারণে শুক্রবার নবান্ন বন্ধ থাকায় শুভেন্দুর বার্তাবাহক মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির লাগোয়া দফতরে তাঁর ইস্তফা পাঠিয়ে দেন। মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা সংক্ষিপ্ত ইস্তফাপত্রে শুভেন্দু লিখেছেন, তাঁকে রাজ্যের মানুষের সেবা করার সুযোগ দেওয়ার জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। যে দায়িত্ব তিনি নিষ্ঠা এবং দায়িত্বভরে পালন করেছেন। একইসঙ্গে ইস্তফাপত্রে এটাও জানিয়ে দেওয়া হয় যে, রাজ্যপালকে ওই চিঠির একটি প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে। শুভেন্দু শিবিরের একাংশের বক্তব্য, শুভেন্দু যেহেতু ইস্তফার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন, তাই তিনি চেয়েছিলেন অনতিবিলম্বে সেটি প্রকাশ্যে আসুক। অর্থাৎ, ওই বিষয়ে যেন কোনও আলাপ-আলোচনার আর অবকাশ না থাকে। সে কারণেই রাজ্যপালকেও ইস্তফার প্রতিলিপি পাঠানো এবং রাজ্যপালেরও কালবিলম্ব না করে সেটি সর্বসমক্ষে প্রকাশ করে দেওয়া।
আরও পড়ুন: তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে মিহির গোস্বামী? নিশিথের সঙ্গে পৌঁছলেন দিল্লিতে
বৃহস্পতিবার শুভেন্দু হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের সমস্ত কর্মী এবং আধিকারিকদের নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেখানেই তিনি পর্ষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। তখনই তাঁর ঘনিষ্ঠরা বুঝতে পেরেছিলেন যে, মন্ত্রিত্ব ছাড়া এর পর স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু মন্ত্রিত্ব (এবং পর্যায়ক্রমে তৃণমূল) ছেড়ে তিনি কী করবেন, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট বক্তব্য ঘনিষ্ঠদের কাছে জানাননি শুভেন্দু। তবে রাজনৈতিক মহলের জল্পনা বলছে, শুভেন্দুর হয় বিজেপি-তে যাবেন। নয়তো নিজের দল গড়বেন। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে কয়েকটি বাস্তব ‘অসুবিধা’ আছে। প্রথমত, নির্বাচনের মাত্র ছ’মাস আগে দল গড়ে সেই দল নিয়ে ভোটে লড়তে গেলে প্রতীক সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হতে পারে। দ্বিতীয়ত, নতুন দল গড়তে গেলে যে পরিকাঠামো তৈরি করতে হয়, তার জন্য বিভিন্ন বিষয়ের সংস্থান প্রয়োজন। এই কয়েকটি দিন বিবেচনা করে তাঁর অনুগামীদের একাংশ মনে করছেন শুভেন্দু বিজেপি-তেই সরাসরি যোগ দিতে পারেন। আবার অন্য একাংশের বক্তব্য, নন্দীগ্রামের মতো সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্র থেকে যদি শুভেন্দুকে আবার ভোট লড়তে হয়, তাহলে তাঁর পক্ষে বিজেপি-তে যোগ দেওয়া ততটা লাভের না-ও হতে পারে। যদিও তৃণমূলের অন্দরের জল্পনা এবং বিজেপি-র অন্দরের পরিকল্পনা বলছে, শুভেন্দু গেরুয়া পথের পথিকই হতে চলেছেন।
শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব ত্যাগের পর এটাও দেখার যে, তাঁর বাবা সাংসদ শিশির অধিকারী এবং সাংসদ ভাই দিব্যেন্দু অধিকারী কী করেন। এমনিতে কাঁথির অধিকারী পরিবার যখন যা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিযেছে, পারিবারিক ভাবেই নিয়েছে। শুভেন্দু যদি বিজেপিতে যোগ দেন, তাহলে এই প্রথম অধিকারী বাড়িতে দুই পৃথক রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্ম হবে। শিশির এবং দিব্যেন্দু কেউই শুক্রবার ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে প্রবীণ এবং পোড়খাওয়া নেতা শিশির বারবারই বলেছেন, তিনি মমতার সঙ্গে আছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy