Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Saayoni Ghosh

সায়নী কি বুধবার যাবেন ইডি দফতরে? না কি নথিপত্র পাঠাবেন আইনজীবীদের মারফত, কৌতূহল তৃণমূলেও

ইডি দফতরে সায়নীর হাজির নিয়ে কৌতূহল রয়েছে শাসকদলের অন্দরেও। মঙ্গলবার প্রচারে না যাওয়ার পর সেই জল্পনা আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার প্রচারের সময় ইডি দফতরে হাজিরার কথা জানতে পেরেছিলেন সায়নী।

saayoni ghosh

তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ। —ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২৩ ২৩:৪৯
Share: Save:

পূর্ব বর্ধমানে গত মঙ্গলবার তিনি যখন প্রচার করছিলেন, খবরটা তখনই পেয়েছিলেন। ইডি তাঁকে ডেকে পাঠিয়েছে। পরের ক’দিন ‘অন্তরালে’ থেকে নির্দিষ্ট দিন অর্থাৎ শুক্রবার ইডির দফতরে যাওয়া-আসার সময় দেখা গিয়েছিল তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষকে। এই মঙ্গলবারেও সেই পূর্ব বর্ধমানে দলের নির্দেশে প্রচারের কথা ছিল তাঁর। কিন্তু সায়নী যাননি। দলকে জানিয়েছেন, তাঁর মা অসুস্থ। তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে, বুধবার ইডির দফতরে কি হাজিরা দেবেন তৃণমূলের যুবনেত্রী সায়নী ঘোষ? বিষয়টি নিয়ে ‘কৌতূহল’ রয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও।

ইডি সূত্রের খবর, বুধবার সায়নীকে কিছু নথিপত্র সংক্রান্ত প্রশ্ন করতেই ডাকা হয়েছে। মায়ের অসুস্থতার কারণে আদৌ কি তিনি যেতে পারবেন, না কি আইনজীবীর মাধ্যমে নথি পাঠিয়ে দেবেন? এ বিষয়ে সায়নী কিছুই জানাননি। তবে ইডির এক সূত্রের মতে, সায়নী নিজে না আসতে পারলে তা লিখিত ভাবে তদন্তকারী সংস্থাকে জানাতে হবে।

ইডি দফতরে সায়নীর হাজির নিয়ে কৌতূহল রয়েছে শাসকদলের অন্দরেও। মঙ্গলবার প্রচারে না যাওয়ার পর সেই জল্পনা আরও বেড়েছে। গত মঙ্গলবার প্রচারের সময় ইডি দফতরে হাজিরার কথা জানতে পেরেছিলেন সায়নী। তার পর সেই খবর প্রকাশ্যে আসার পর বুধবার আর প্রচারে যাননি সায়নী। বৃহস্পতিবার ইদের জন্য তৃণমূলের কোনও তারকা প্রচারকই প্রচারে নামেননি। শুক্রবারের হাজিরার পর শনি, রবি এবং সোমে তৃণমূলের প্রচারকের তালিকায় নাম ছিল না সায়নীর। আবার ইডি দফতরে হাজিরার আগের দিন, মঙ্গলবার প্রচারকের তালিকায় সায়নীর নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। দলের একাংশ মনে করছে, এ ভাবে আসলে সায়নীর পাশে থাকার বার্তা দিলেন শীর্ষ নেতৃত্ব। জনতাকে বোঝাতে চাইলেন, সায়নীকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। আদতে পঞ্চায়েত ভোটের আগে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার মাধ্যমে সায়নীকে তলব করে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করছে কেন্দ্র। এ ভাবে বিজেপিকে পাল্টা চাপে ফেলতে চেয়েছিল তৃণমূল— এমনটাও মনে করছেন দলের একাংশ। যদিও শেষ পর্যন্ত মায়ের শরীর খারাপের কথা জানিয়ে প্রচারে যাননি সায়নী। তার পরেই দলের একাংশের মনে প্রশ্ন, দল পাশের থাকার বার্তা দেওয়ার পরেও কেন গেলেন না সায়নী? গত শুক্রবার ইডি দফতর থেকে বেরোনোর পরেও যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী দেখা গিয়েছিল সায়নীকে। তার পরেও পিছু হঠলেন কেন? তা হলে এই পরিস্থিতিতে কি বুধবারের হাজিরাও এড়িয়ে যাবেন? নাকি আগের বারের মতোই আত্মবিশ্বাসী হয়ে মুখোমুখি হবেন ইডির জিজ্ঞাসাবাদের!

ছ’দিন পর প্রচারে

গত মঙ্গলবার সায়নীকে হাজিরার নোটিস পাঠিয়েছিল ইডি। ওই দিন তিনি পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরের মাঝেরগ্রামে প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন। প্রচারে থাকাকালীন ইডির নোটিসের প্রসঙ্গে জানতে পারেন তৃণমূলের যুবনেত্রী। ওই দিন রাতে সমাজমাধ্যমে নিজের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে অংশ নেওয়ার ছবিও পোস্ট করেছিলেন তিনি। পর দিন বুধবার তাঁর প্রচারসূচি ছিল পূর্ব বর্ধমানে জামালপুর বিধানসভা এলাকায়। কিন্তু বুধবার নোটিসের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর সায়নীকে জনসমক্ষে দেখা যায়নি। পূর্ব বর্ধমানের পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে যাওয়ার কথা থাকলেও যাননি তিনি। বৃহস্পতিবার ইদের জন্য তৃণমূলের তারকা প্রচারকেরা প্রচারে নামেননি। তাই গত মঙ্গলবারের পর কার্যত প্রকাশ্যে আর দেখা যায়নি সায়নীকে। তার পর তাঁকে দেখা গিয়েছিল শুক্রবার সিজিও কমপ্লেক্সে। শনি, রবি এবং সোমবার তৃণমূলের প্রচারকারীদের যে নামের তালিকা প্রকাশিত হয়েছিল, তাতে নাম ছিল না সায়নীর। ছ’দিন পর মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রচারকারীদের তালিকায় নাম ছিল সায়নীর। দলের একাংশের বক্তব্য, বুধবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাজিরা দেওয়ার আগে সায়নীকে আরও নথিপত্র জোগাড় করতে হচ্ছিল। তাই কয়েক দিন তাঁকে প্রচারে দেখা যায়নি। সে সব তথ্য এবং নথি জোগাড়ের কাজ শেষ হয়েছে সায়নীর। তার পর তাঁর সঙ্গে কথা বলে আবার তাঁকে পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে নামানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। তবে শেষ পর্যন্ত সায়নী নিজেই দলকে জানিয়েছেন, তিনি প্রচারে যেতে পারছেন না।

মায়ের অসুস্থতা

গত শুক্রবার ইডির দফতরে হাজিরা দিয়েছিলেন সায়নী। প্রায় ১১ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল তাঁকে। তার পরের তিন দিন তৃণমূলের প্রচার তালিকায় নাম ছিল না নেত্রীর। মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রচারকারীদের তালিকায় নাম ছিল সায়নীর। তাঁর প্রচার করার কথা ছিল পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া-১ ব্লকের করাজগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত ও সিংহী গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। যদিও তিনি প্রচারে যাননি। দলকে জানিয়েছেন, মায়ের অসুস্থতার কথা। ঘটনাচক্রে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে, গত মঙ্গলবার এই পূ্র্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরেই শেষ বার ভোট প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন সায়নী।

‘অভিযুক্ত’ নন

ইডি সূত্রের খবর, সায়নীকে সংস্থার তরফে ডাকা হয়েছে কিছু নথিপত্র সংক্রান্ত প্রশ্ন করতে। ‘অভিযুক্ত’ হিসেবে নয়। বুধবারেও তাঁর কিছু নথিপত্র নিয়ে যাওয়ার কথা। মায়ের অসুস্থতার কারণে মঙ্গলবার ভোটপ্রচারে যেতে পারেননি সায়নী। এই পরিস্থিতিতে বুধবার নিজে ইডি দফতরে সেই নথি নিয়ে যাবেন, না কি তাঁর আইনজীবী মারফত নথি পাঠাবেন, তা মঙ্গলবার পর্যন্ত জানা যায়নি।

পাশে থাকার বার্তা

মাঝে ছ’দিন পঞ্চায়েত ভোটের প্রচারে ছিলেন না সায়নী। গত শুক্রবার ইডির দফতরে হাজিরা দেন তিনি। তার পরের তিন দিন তৃণমূলের প্রচারকের তালিকায় নাম ছিল না যুবনেত্র্রীর। বুধবার আবার ইডির দফতরে হাজিরা দেওয়ার কথা সায়নীর। তার আগের দিন, মঙ্গলবার তৃণমূলের প্রচারকের তালিকায় নাম সায়নীর। শেষ পর্যন্ত তিনি প্রচারে যাননি, তবে তৃণমূলের একাংশ বলছে, এ ভাবে আসলে সায়নীর পাশে থাকার বার্তা দিলেন শীর্ষনেতৃত্ব। দলের অনেকে মনে করছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সায়নীকে ডেকে জেরা করে ইডি তথা কেন্দ্রীয় সরকার যে ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি’ করছে, সেটা জনতাকে বোঝাতে হবে। অর্থাৎ, বিজেপির উপর ‘পাল্টা চাপ’ তৈরি করতেই সায়নীকে প্রচারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল। তা ছাড়া অনেকের বক্তব্য, সায়নী নিজে নিশ্চিত যে, তাঁকে নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়িয়ে ফেলা যাবে না। তিনি দলকেও তা জানিয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদের পর ইডির দফতর থেকে বার হওয়ার সময় তাঁকে আত্মবিশ্বাসী দেখিয়েছে। ফলে তাঁকে প্রচারে না-পাঠানোর কোনও কারণ নেই বলেই মনে করে দলের একাংশ। দলের একটি অংশ আবার মনে করছে, ইডি দফতরে হাজিরার আগের দিন সায়নীকে প্রচারে পাঠিয়ে জনগণকে একটি বার্তা দিতে চেয়েছিল শাসকদল। তারা বোঝাতে চেয়েছিল, সায়নীকে জিজ্ঞাসাবাদ নিয়ে আদৌ চিন্তিত নন তাঁরা।

কুন্তলের সূত্রে নাম

ইডি সূত্রে খবর, রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে ধৃত তথা তৃণমূলের বহিষ্কৃত যুবনেতা কুন্তলের সূত্র ধরেই উঠে এসেছে তৃণমূল যুবনেত্রী সায়নীর নাম। কুন্তলের সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করার সময় সায়নীর নাম উঠে এসেছে বলে ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে। আর সেই বিষয়েই যুব তৃণমূলের সভানেত্রীকে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, সায়নীকে আয়কর জমা দেওয়ার ফাইল এবং সম্পত্তির হিসাব নিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। যুবনেত্রীর যত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তার তথ্য এবং লেনদেনের নথিও নাকি আনতে বলা হয়েছিল। এর আগে কুন্তলের সঙ্গে যুবনেত্রীর একটি ছবি প্রকাশ্যে এসেছিল (সেই ছবির সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। সায়নী তখন জানিয়েছিলেন, তাঁরা দু’জনেই একই দলের সদস্য। তাই এক মঞ্চে থাকতেই পারেন। যদিও সে সময় কুন্তল তৃণমূলের সদস্য হলেও এখন তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কুন্তলের যোগসূত্র ধরেই নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়িয়েছে সায়নীর।

অন্য বিষয়গুলি:

Saayoni Ghosh TMC Enforcement Directorate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy