কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ বা অনুরোধ বা আর্জি মেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যাকে সোমবার নয়াদিল্লির নর্থ ব্লকে গিয়ে কাজে যোগ দেওয়ার ছাড়পত্র দেবেন? গোটা রাজ্য এখন এই একটি প্রশ্নেরই জবাব খুঁজছে। শুক্রবার রাতে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আলাপনের কাছে চিঠি আসার পর থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত ওই বিষয়ে উচ্চবাচ্য করেননি মমতা। প্রকাশ্যে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাননি আলাপনও। ঘটনাচক্রে, যিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিঘা সফরে রয়েছেন। শনিবার সকালে মুখ্যমন্ত্রী এবং মুখ্যসচিব— দু’জনেরই কলকাতায় ফেরার কথা। এখন দেখার, কলকাতায় ফিরে বা দিঘা থেকে কলকাতায় রওনা হওয়ার আগে মুখ্যমন্ত্রী ওই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেন কি না।
প্রসঙ্গত, শাসক তৃণমূল শিবির শুক্রবার রাত থেকেই বিষয়টি নিয়ে ময়দানে নেমেছে। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ থেকে শুরু করে সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্ররা পর পর টুইট করে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রীকে বিঁধেছেন। কিন্তু মুখ্যসচিবকে রাজ্য সরকার (মুখ্যমন্ত্রী) কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মিবর্গ মন্তর্কে গিয়ে রিপোর্ট করার ছাড়পত্র দেবেন কি না, তা একান্ত ভাবেই একটি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত। প্রশাসনের একাংশের অভিমত, আলাপন কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি লিখে সময় চেয়ে নিতে পারেন। নবান্ন ওই বিষয়ে আইনি পরামর্শও নিতে পারে। কিন্তু সবই নির্ভর করছে মুখ্যমন্ত্রীর উপর।
প্রশাসনের অন্দরের জল্পনাকে বিশ্বাস করতে গেলে নবান্নের আলাপনকে দিল্লিতে যাওয়ার ছাড়পত্র দেওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ, এর আগেও রাজ্যের তিন আইপিএস অফিসারকে ডেকে পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় সরকার। তখন কিন্তু তাঁদের ছাড়পত্র দেয়নি রাজ্য সরকার। তাঁরা এখনও রাজ্যেই রয়েছেন। সেই ইতিহাস স্মরণে রাখতে বলে রাজ্যের বিভিন্ন প্রাক্তন আমলারা জানাচ্ছেন, আলাপনের ক্ষেত্রেও নবান্ন তেমন সিদ্ধান্ত নিলে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না।
প্রশ্ন হল, সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা কী হবে। আইনগত ভাবে কেন্দ্রীয় সরকারের এই তলবে কোনও বাধা নেই বলে আইনজ্ঞরা জানাচ্ছেন। যেমন আইনজীবী তথা সিপিএমের রাজ্যসভা সাংসদ বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের অভিমত তেমনই। প্রশাসনিক মহলেরও বক্তব্য, কোনও অফিসারকে তলব করতে গেলে রাজ্য আপত্তি জানাতেই পারে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকারের ইচ্ছাই বলবৎ থাকবে।
ঘটনাপ্রবাহ বলছে, যেদিন আলাপনের অবসরের দিন, সেদিনই তাঁকে নর্থ ব্লকে গিয়ে দেখা করতে বলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, অতি সম্প্রতিই আলাপনের চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে তিনমাস। নতুবা তিনি অবসর নিয়ে নিতেন ওই দিনেই। ফলে কোনও সমস্যা তৈরি হত না। কিন্তু মুখ্যসচিব পদে মেয়াদ বৃদ্ধির ফলে তিনি ওই দিনের পরেও সরকারি চাকরিতে থাকবেন। ফলে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশের ‘তাৎপর্য’ অন্য মাত্রায় পৌঁছেছে। এখন দেখার, কেন্দ্রীয় সরকার তাঁর চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টি খারিজ করে দেয় কি না। নাকি ওই তিন মাস তাঁকে কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও দফতরের সচিব নিযুক্ত করে।
তবে এ সবই হওয়ার সম্ভাবনা এবং অবকাশ নির্ভর করছে নবান্নের ছাড়পত্রের উপর। আরও ভাল করে বলতে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের উপর। প্রশানের অন্দরে এ নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনা শুরু হয়েছে। শনি এবং রবিবার ছুটির দিন হওয়ায় চিঠিপত্র দেওয়ার মতো সরকারি কাজ কতটা এগোবে, তা নিয়েও সংশয়ে রয়েছেন অনেকে। আবার অনেকে বলছেন, বিষয়টি আপৎকালীন ভিত্তিতে দেখে ছুটির মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। সরকারি ছুটি যেমন থাকে, তেমনই প্রয়োজনে ছুটি বাতিলও হতে পারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy