Advertisement
২৪ জানুয়ারি ২০২৫
RG Kar Case Verdict

তদন্তে বহু ফাঁক, তবুও দোষ নির্ণয়

শুধু ঘটনার পুনর্নির্মাণই নয়, শিয়ালদহ কোর্টের বিচারক অনির্বাণ দাসের রায়ের প্রতিলিপিতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আরও যা যা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যেও একাধিক বিষয়ে অভিযুক্তের কৌঁসুলিদের প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল বলে মনে করছেন আইনজীবী এবং প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একাংশ।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৪০
Share: Save:

জেরার মুখে পুলিশের কাছে নিজের দোষ ‘কবুল’ করেছিল আর জি করের আসামি সঞ্জয় রায়। সেই স্বীকারোক্তির কথা কোর্টে জানিয়েছিলেন খোদ লালবাজারের তদন্তকারী অফিসার রুপালি মুখোপাধ্যায়। অথচ, সঞ্জয়কে গ্রেফতারের পরে ‘ঘটনাস্থলে’ নিয়ে গিয়ে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার পুনর্নির্মাণ করানো হয়েছিল, এমন দাবি রুপালি বা সিবিআইয়ের তদন্তকারী অফিসার সীমা পাহুজা সাক্ষ্যে বলেননি। পুনর্নির্মাণ হয়েছিল কি না, সেই প্রশ্ন তদন্তকারী অফিসারদের জেরা করার সময়ে উত্থাপন করেননি সঞ্জয়ের আইনজীবীরাও। প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় ঘটনার তদন্তে অভিযুক্তকে নিয়ে গিয়ে ঘটনার পুনর্নির্মাণ কি করানো হয়নি?

শুধু ঘটনার পুনর্নির্মাণই নয়, শিয়ালদহ কোর্টের বিচারক অনির্বাণ দাসের রায়ের প্রতিলিপিতে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে আরও যা যা উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যেও একাধিক বিষয়ে অভিযুক্তের কৌঁসুলিদের প্রশ্ন তোলার অবকাশ ছিল বলে মনে করছেন আইনজীবী এবং প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একাংশ। কিন্তু সেই বিষয়েও কোনও প্রশ্ন কোর্টে উঠেছে বলে রায়ের প্রতিলিপিতে দেখা যাচ্ছে না। অথচ ওই সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুললে তদন্তের আরও ফাঁক উঠে আসত বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রাক্তন পুলিশকর্তাদের একাংশ বলছেন, যে কোনও চুরি-ডাকাতির ঘটনাতেও অভিযুক্তকে গ্রেফতারের পরে অপরাধের পুনর্নির্মাণ করানো হয়। অথচ এখানে ঘটনা নিয়ে অনেক ধোঁয়াশা থাকলেও পুনর্নির্মাণ নিয়ে তদন্তকারীরা কেন সরব হলেন না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে।

১০ অগস্ট গ্রেফতার হওয়ার পরে ১৩ অগস্ট পর্যন্ত সঞ্জয় লালবাজারের হেফাজতে ছিল। তার পরে সিবিআই তাকে হেফাজতে নেয়। ১০ থেকে ১৩ অগস্টের মধ্যে রুপালি একাধিক বার ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। প্রশ্ন উঠতে পারে, পুনর্নির্মাণ করানোর বিষয়টি কি তাঁর মাথায় ছিল না, না কি এ ব্যাপারে অন্য কোনও নির্দেশ ছিল? সিবিআই সূত্রের দাবি, সীমা ১৪ অগস্টের পরে ঘটনাস্থলেই যাননি। কোর্টে অভিযুক্তের আইনজীবীর জেরার মুখে সে কথা প্রায় স্বীকারও করেছিলেন।

যেমন প্রশ্ন উঠতে পারে, অভিযুক্তের আঙুলের ছাপ সংগ্রহ না-করা নিয়েও। সাক্ষী তালিকায় ৪৯ নম্বরে থাকা রুপালি এবং ৫০ নম্বরে থাকা সীমা— দু’জনেই কোর্টে স্বীকার করেছেন যে, অভিযুক্তের আঙুলের ছাপ তাঁরা সংগ্রহ করেননি। অথচ ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক অপূর্ব বিশ্বাস তাঁর সাক্ষ্যে জানিয়েছিলেন যে, নিহত পড়ুয়া-চিকিৎসকের গলায় আততায়ীর আঙুলের চাপে তৈরি হওয়া আঘাতের চিহ্ন পেয়েছিলেন। সে কথা ময়না তদন্তের রিপোর্টেও উল্লেখ করেছেন তিনি। আঙুলের ছাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ সংগ্রহ কেন তদন্তকারীরা করলেন না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠতে পারে।

ওই পড়ুয়া-চিকিৎসককে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে কোর্ট রায়ে জানিয়েছে। তবে তাঁর গোপনাঙ্গের ভিতরে সঞ্জয়ের বীর্যের অস্তিত্ব মেলেনি। আদালতে সাক্ষ্য দিতে এসে ফরেন্সিক মেডিসিনের দুই বিশেষজ্ঞ নিশ্চিত করে বলতে পারেননি যে, সঞ্জয়ের গোপনাঙ্গ নির্যাতিতার শরীরে প্রবেশ করেছিল কি না। তাঁরা বরং এটা দাবি করেছেন, নির্যাতিতার গোপনাঙ্গের আঘাত প্রমাণ করে যে, ‘ভোঁতা এবং মসৃণ’ কিছু জোর করে গোপনাঙ্গে প্রবেশ করানো হয়েছিল। তাঁরা এ-ও দাবি করেছেন যে, গোপনাঙ্গের ভিতরে বীর্য নিঃসরণ হলে তবেই নির্যাতিতার শরীরে তার অস্তিত্ব মিলতে পারে। ধর্ষক যদি কনডোম ব্যবহার করে, তা হলে বীর্যের অস্তিত্ব পাওয়া যাবে না। এ ক্ষেত্রে সঞ্জয় কনডোম ব্যবহার করেছিল, এমন দাবি রায়ে লেখা নেই। যদি নির্যাতিতার শরীরের বাইরে সঞ্জয়ের বীর্য নিঃসরণ হয়, তা হলে চাদরে, গদিতে অথবা তাঁর পোশাকে তার অস্তিত্ব মিলত। তা মিলেছে কি না, সে ব্যাপারেও স্পষ্ট কিছু জানাননি তদন্তকারীরা।

প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে কি কোনও ‘ভোঁতা এবং মসৃণ’ বস্তু দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছিল? তেমন কোনও দাবিও তদন্তকারীরা করেননি। তবে পারিপার্শ্বিক অন্যান্য প্রমাণের উপরে ভিত্তি করে বিচারক অনির্বাণ দাস এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে, সঞ্জয়ই ধর্ষণ করেছিল। তবে অনেকেরই প্রশ্ন, তদন্তের এই ফাঁক নিয়ে আদালতে তেমন জোরালো প্রশ্ন উঠল না কেন?

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Case Verdict RG Kar Medical College and Hospital Incident RG Kar Rape and Murder Case Sanjay Roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy