রাজ্যে ঝড়ের গতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ ছবি পিটিআই।
চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়েই রাজ্যে দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছতে পারে ৩০-৩৫ হাজারে!
গত কয়েক দিন ধরে বঙ্গে সংক্রমিতের সংখ্যা যে গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ। সোমবার স্বাস্থ্য দফতরের প্রকাশিত বুলেটিন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ রবিবার আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ৭৮ জন। যা, শনিবারের দৈনিক আক্রান্তের (৬,১৫৩ জন) সংখ্যার থেকে কিছুটা কম। তবে এই সংখ্যা দেখে স্বস্তির কারণ নেই বলেও স্পষ্ট সতর্কবার্তা চিকিৎসক মহলের। কারণ, সংক্রমণের হার বা পজ়িটিভিটি রেট শনিবারের (১৫.৯৩ শতাংশ) থেকে রবিবার প্রায় চার শতাংশ বেশি। ওই দিন রাজ্যের পজ়িটিভিটি রেট ১৯.৫৯ শতাংশ। এ ছাড়া রবিবার পরীক্ষার সংখ্যা তুলনামূলক ভাবে কমও হয়।
সংক্রমণের হার দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ হিসেবে ভাইরাসের সহায়ক পরিবেশের কথাই জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, করোনার মতো দ্রুত সংক্রমণ ছড়ানো ভাইরাস সব সময়েই সুযোগের অপেক্ষায় থাকে। আর সেই সুযোগ হল, কোভিড বিধি উড়িয়ে অনিয়ন্ত্রিত ভিড়, জমায়েত। আর সম্প্রতি কলকাতা পুরভোট কিংবা বছর শেষের কয়েকটা দিন এবং নতুন বছরের শুরুর উল্লাস সেই সুযোগই করে দিয়েছে বলে মনে করছেন সংক্রামক বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, অতিমারির প্রথম ঢেউয়ের সময় খুব ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছিল দৈনিক সংক্রমণ। সর্বোচ্চ সেটি ৪ হাজারের ঘরে পৌঁছেছিল। দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় মাঝারি গতিতে বেড়েছে সংক্রমণ। তাতে সর্বোচ্চ সংখ্যা পৌঁছেছিল ২০ হাজারের ঘরে। ওই দুই ঢেউকে ছাপিয়ে গিয়েছে এ বারের পরিস্থিতি। অনকূল পরিবেশ পাওয়ার কারণেই সংক্রমণের রেখাচিত্র হু-হু করে উপরের দিকে উঠছে।
আইসিএমআর-এর এপিডিমিয়োলজি অ্যান্ড কমিউনিকেবল ডিজ়িজ়ের বিভাগীয় প্রধান সমীরণ পান্ডার কথায়, ‘‘সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলেই রেখাচিত্র সোজা উপরে উঠছে। এ বার জনগোষ্ঠীতে সকলে সচেতন হয়ে যদি সেই সহায়ক পরিবেশকে রুখে দিতে পারেন, তা হলে দ্রুত সংক্রমণের মাত্রাও কমবে। কিন্তু মানুষ যদি ভাইরাসকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে আসেন, তা হলে তা বাড়বে তো বটেই। এটাও মনে রাখতে হবে সকলেরই যে ওমিক্রন হচ্ছে তা নয়। ডেল্টা এখনও প্রধান ভেরিয়েন্ট হিসেবে রয়েছে।’’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের মতে, ওমিক্রনের সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। তার সঙ্গে এক শ্রেণির মানুষের কোভিড বিধি পালনে অনীহা—এই জোড়া ফলার কারণেই সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। ডেল্টার সঙ্গে ওমিক্রনও এখন প্রভাব ফেলতে শুরু করছে। তাঁর কথায়, ‘‘ওমিক্রন হয়তো অচিরেই তৃতীয় ঢেউয়ের মূল কারণ হয়ে দাঁড়াবে। সেই কারণে নিয়ন্ত্রণ বিধি কড়া ভাবে বলবৎ না হলে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা এই মাসেই ৩০-৩৫ হাজারে গিয়ে দাঁড়াতে পারে।’’
অনির্বাণ-সহ অন্যান্য চিকিৎসকেরা এ-ও জানাচ্ছেন, মহামারি বিজ্ঞানের সূত্র অনুসারে যত দ্রুত করোনা সংক্রমণ ছড়াবে, আক্রান্তের সংখ্যা তত দ্রুত সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছবে। আর যত দ্রুত বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হবেন, রেখাচিত্র নিম্নমুখীও হবে তত তাড়াতাড়ি। একই রকম ভাবে সেটিও নীচের দিকে সোজা নামবে। তবে তা হতে ফেব্রুয়ারি হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকেরা। অসংখ্য মানুষ ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়ে গিয়েছেন এবং আরও অনেকে সংক্রমিত হবেন। তাতে জনগোষ্ঠীতে সাধারণ ভাবেই দ্রুত ‘হার্ড ইমিউনিটি’ তৈরির সম্ভাবনাও বেশি। তার কারণেও সংক্রমণ যখন নামবে, তার হার দ্রুত হবে বলেই জানাচ্ছেন শল্য চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার। তিনি আরও বলেন, ‘‘সংক্রমণের গতি দেখে মনে হচ্ছে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে জনসংখ্যার প্রায় ১০০ শতাংশ আক্রান্ত হবেন। তাই ধরে নেওয়া যায় চলতি মাসের মাঝামাঝি সংক্রমণ সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছবে। দক্ষিণ আফ্রিকার পরিসংখ্যান থেকে এটাও অনুমান করা যাচ্ছে, চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে সংক্রমণ ফের নামতে শুরু করবে। অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’
স্বাস্থ্য দফতর থেকে এ দিন জানানো হয়েছে, বিদেশ ফেরত মোট ৬ জন যাত্রীর করোনা পজ়িটিভ হওয়ায় তাঁদের হাসপাতালে আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে সুইডেন ও ফ্রান্স ফেরত যাত্রীও রয়েছেন। সকলের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সের জন্য পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এখনও ১৩ জন বিদেশ ফেরত যাত্রীর জিনোম সিকোয়েন্সের রিপোর্ট পাওয়া বাকি রয়েছে। রাজ্যে মোট ওমিক্রন আক্রান্ত ২০ জন। তার মধ্যে এখন ১৪ জনের চিকিৎসা চলছে।’’ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে এ দিন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে বৈঠকও করে স্বাস্থ্য দফতর।
বৈঠকের পরে উডল্যান্ডস হাসপাতালের সিইও তথা চিকিৎসক রূপালী বসু জানান, ওমিক্রন আক্রান্ত হলেও উপসর্গহীন সমস্ত রোগীকে বাড়িতে আইসোলেশনে রাখতে হবে। তৃতীয় ঢেউয়ে পজ়িটিভ থাকার সময়ও অনেকটা কমে এসেছে। তাই উপসর্গহীন থাকলে প্রথম পজ়়িটিভ আসার পাঁচ দিনের মাথায় ফের পরীক্ষা করে দেখতে হবে। তাতে নেগেটিভ এলে ১০ দিন পর থেকে ওই ব্যক্তি কাজে ফিরতে পারবেন। এ দিন বৈঠকের পরে একই রকম কথা নিজেদের হাসপাতালেও জানিয়েছেন সরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এর ফলে কাজের জায়গায় কর্মী সংখ্যা কমের সমস্যা বেশি দিন স্থায়ী হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy