জামিনের পরে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে মহম্মদ সোহরাব।ছবি: রণজিৎ নন্দী।
দলের কেউ নন তিনি, বলছিল তৃণমূল। রেড রোডে বেপরোয়া গাড়িতে পিষ্ট হয়ে বায়ুসেনা অফিসারের মৃত্যুর পর থেকেই তিনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, বলছিল লালবাজার। শাসক দলের অস্বীকার এবং পুলিশের অপবাদ— দু’টোকেই উড়িয়ে দিলেন মহম্মদ সোহরাব। রেড রোড কাণ্ডের পরে ৬৮ দিন বেপাত্তা থাকার পরে মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেই জামিন পান তিনি। আদালত কক্ষের বাইরে বেরিয়ে সোহরাবের দাবি, ‘‘আমি তৃণমূলেরই কর্মী।’’ অথচ রেড রোডের ঘটনার ঠিক পরেই তৃণমূলের মহাসচিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘‘সোহরাব তৃণমূলের কেউ নন। তাঁর সঙ্গে দলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’ জামিনের পরে সোহরাবের এ দিনের বক্তব্য জেনে পার্থবাবু অবশ্য তাঁকে ‘স্বঘোষিত তৃণমূল’ বলে উল্লেখ করেছেন।
পার্থবাবু যা-ই বলুন, সোহরাব কিন্তু বলছেন, ‘‘ব্যবসা করি, সমাজসেবা করি। সেই জন্যই তো দল আমাকে চায়।’’
শুধু শাসক দলকে নয়, এ দিন পুলিশকেও বিড়ম্বনায় ফেলে দেওয়ার মতো মন্তব্য করেছেন সোহরাব। তাঁর দাবি, ‘‘কলকাতাতেই ছিলাম। পালাব কেন? এমন কোনও অপরাধ করিনি যে, আমাকে পালাতে হবে।’’
অথচ প্রথমে গ্রেফতারি পরোয়ানা, তার পরে হুলিয়া জারি করেও পুলিশ ধরতে পারেনি সোহরাবকে। পুলিশ ও গোয়েন্দাদের বক্তব্য ছিল, কলকাতা ও কলকাতার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও সোহরাবকে পাওয়া যায়নি। তবে পুলিশেরই একটি শিবির বলে আসছিল, ওই অভিযুক্ত মোটেই তদন্তকারীদের নাগালের বাইরে নেই। আসলে আত্মসমর্পণের সুযোগ দেওয়ার জন্যই তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। লালবাজার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল। কিন্তু এ দিন দেখা গেল, আত্মসমর্পণই করলেন সোহরাব এবং গ্রেফতারি এড়ালেন।
সোহরাব যা বলছেন, তা ঠিক নয় বলে জানাচ্ছে পুলিশ। এ দিন লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক কর্তা বলেন, ‘‘সোহরাব ডাহা মিথ্যে বলছেন। কলকাতা কেন, ১৩ জানুয়ারি ঘটনার পর থেকে দীর্ঘদিন উনি পশ্চিমবঙ্গেই ছিলেন না। পালিয়ে বেড়ানোর এই দীর্ঘ সময়ে সোহরাব সম্ভবত বাংলাদেশেও গিয়েছিলেন।’’
সোহরাবের দাবি, তিনি আদৌ পালাননি। কলকাতাতেই ছিলেন। ‘‘মাঝেমধ্যে কাজের জন্য বাইরে যেতে হতো। তার পরে ফিরেই আসতাম,’’ বলছেন সোহরাব।
প্রজাতন্ত্র দিবসের কুচকাওয়াজ চলাকালীন মহম্মদ সোহরাবের ছোট ছেলে সাম্বিয়া সোহরাবই রেড রোডে বেপয়োরা গাড়ি চালিয়ে বায়ুসেনার কর্পোরাল অভিমন্যু গৌড়কে পিষে দেন বলে ওই মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করেছে পুলিশ। সাম্বিয়া এখন জেলে। ওই ঘটনার পরে শাসক দলের সঙ্গে সোহরাবের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগ ওঠে। সোহরাব ও তাঁর পরিবারের কয়েক জনের বাড়বাড়ন্তের পিছনে শাসক দলের আশীর্বাদী হাত আছে বলে তৃণমূলেরই কয়েক জন নেতা জানান। তখনই দলের তরফে পার্থবাবু জানিয়ে দিয়েছিলেন, সোহরাব তৃণমূলের কেউ নন।
সোহবার এ দিন বলেছেন, ‘‘রোজ সারা ভারতে দেড় হাজারের মতো দুর্ঘটনা ঘটে। মারা যান অন্তত ৫০০ জন। অথচ এই ঘটনাটিকে (রেড রোড) বড় করে দেখানো হচ্ছে।’’
রেড রোডের ঘটনার পরে পুলিশ সোহরাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে সামিল থাকার অভিযোগে মামলা রুজু করেছিল। তবে ১০ মার্চ পেশ করা চার্জশিটে সোহরাবের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ২১২ নম্বর ধারায় অভিযুক্তকে আশ্রয় দেওয়া এবং ২০১ ধারায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করার অভিযোগ আনা হয়েছে। দু’টি ধারাই জামিনযোগ্য।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সুমনকুমার ঘোষ এ দিন আদালতে সরকারি আইনজীবী তমাল মুখোপাধ্যায়কে প্রশ্ন করেন, ‘‘আপনি কি সোহরাবের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করছেন?’’ তমালবাবু জানান, জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। তাই তিনি জামিনের বিরোধিতা করছেন না।
সোহরাব এর আগে কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেছিলেন। চার্জশিটে জামিনযোগ্য ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে জেনে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। রেড রোড কাণ্ডে সাম্বিয়ার দুই বন্ধু জনি ও শানুও গ্রেফতার হয়েছিল। চার্জশিট পেশের পরে তাঁরাও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। সোহরাবের আইনজীবী এ দিন আদালতে প্রশ্ন তোলেন, ওই দু’জন ইতিমধ্যে জামিন পেয়ে থাকলে তাঁর মক্কেল পাবেন না কেন?
সোহরাবকে ১৫০০ টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে শর্তাধীন জামিন দেন বিচারক। তিনি জানান, ৪ এপ্রিল, শুনানি এবং তার পরের প্রতিটি শুনানিতে তাঁকে আদালতে হাজিরা দিতে হবে। অনুমতি ছাড়া এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না সোহরাব।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy