আর জি করের সামনে পুলিশি প্রহরা। ছবি: পিটিআই।
আরজি কর মেডিক্যালে চিকিৎসককে খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় সমাজমাধ্যম থেকে মিছিল, সর্বত্র পুলিশের বিরুদ্ধে ফেটে পড়ছে ক্ষোভ। কেন?
সংশ্লিষ্ট মহলের লোকজন মনে করছেন, এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে ঘটনা পরম্পরা। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যে দিন ঘটনাটি ঘটে, সে দিন পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ। লালবাজারের দাবি, তাদের কাছে খবর এসেছিল বেলা ১০টা ১০ মিনিটে। অথচ পরে জানানো হয়, মৃতদেহ প্রথম দেখা গিয়েছিল বেলা সাড়ে ৯টা নাগাদ। ফলে দেহ উদ্ধারের পর থেকে পুলিশ পৌঁছনো পর্যন্ত প্রায় এক ঘণ্টা সময় পেরিয়ে যায়। এই সময়ের মধ্যে সেখানে তথ্য-প্রমাণ সব ঠিকঠাক ছিল কি না, কোনও প্রমাণ লোপাট করে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল কি না— এ ব্যাপারে কখনও কোনও আলোকপাত করা হয়নি। উল্টে একটি হেডফোনের ভিত্তিতে এক জনই অপরাধী বলে পুলিশের তরফে প্রাথমিক ভাবে ঘোষণা করে দেওয়া হয়। অনেকের কাছেই সেই দাবি কাকতালীয় মনে হয়েছিল। এর পর যখন জানা যায়, ঘটনাস্থলের কোনও সরাসরি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পুলিশের কাছে নেই, তখন অনেকেই প্রশ্ন তোলেন, তা হলে কিসের ভিত্তিতে পুলিশ এত তাড়াতাড়ি বলে দিচ্ছিল যে জড়িত এক জনই?
প্রশ্ন ওঠে মৃতদেহ সৎকারের জন্য পুলিশি তাড়াহুড়োতেও। মৃতার মা-ও অভিযোগ করেন, সুরতহাল এবং ময়না তদন্তের পরে পুলিশ দেহ সৎকারের জন্য প্রবল চাপাচাপি শুরু করে। এমনকি, তাঁদের হাসপাতালে বসিয়ে রেখেই মৃতদেহ সৎকারের জন্য বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। মৃতার মায়ের অভিযোগ, ‘‘পুলিশের হাতে-পায়ে ধরে আমাদের মেয়ের মৃতদেহ দেখতে হয়েছে। তিন ঘণ্টা বসিয়ে রাখার পরে পুলিশ দেহ দেখতে দিয়েছিল।” এর ফলে প্রশ্ন ওঠে, তবে কি কিছু গোপন করার চেষ্টা হচ্ছিল? লালবাজারের যুক্তি, মৃতদেহ নিয়ে রাজনীতি যাতে না হয় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দ্রুত সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়। যদিও পুলিশের এই দাবি ধর্তব্যের মধ্যে আনেননি অনেকেই।
একমাত্র ধৃত সঞ্জয় রায়ের পরিচয় প্রকাশ করতেও পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল কুণ্ঠা বোধ করেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি দাবি করেন, ধৃত সঞ্জয়ের একমাত্র পরিচয়, সে এক জন অপরাধী। তা হলে তার সিভিক ভলান্টিয়ার পরিচয় বা কলকাতা পুলিশের ওয়েলফেয়ার সেলের সদস্য হওয়াটা কি পরিচয় নয়? নাকি কলকাতা পুলিশ কমিশনারের অধীনে থাকা সেই সংগঠনের সদস্য হওয়াটাকে চাপতে চেয়েছিল পুলিশ? উত্তর মেলেনি।
পুলিশি ভূমিকায় তৈরি হওয়া এই ক্ষোভের জমিতেই ‘রাত জাগার রাতে’ আরজি করে হামলার ঘটনা বীজ বপনের কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সে দিন কার্যত দর্শকের ভূমিকায় দেখা গিয়েছিল পুলিশকে। একটা সময়ে হামলাকারীদের ভয়ে ছুটে পালিয়ে লুকিয়ে পড়েছিলেন পুলিশ কর্মীরা। উর্দি খুলে তাঁদের থেকে অন্য পোশাক চেয়ে নিয়েছেন বলেও সে রাতে হাসপাতালে উপস্থিত নার্সদের একাংশের দাবি। তখনই প্রশ্ন ওঠে, আরজি কর যেখানে ঘটনাস্থল, সেখানে কেন পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী থাকবে না? পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে বুঝেও কেন বাড়তি বাহিনী নামিয়ে সামাল দেওয়ার চেষ্টা হবে না? ঘটনার পরের দিন পুলিশের বিরুদ্ধে আরও বড় প্রশ্ন ওঠে, সমাজমাধ্যমে করা তাদের পোস্ট ঘিরে। যেখানে রাজনৈতিক দলের পতাকা হাতে হামলা চালানোর কথা প্রথমে লেখা হলেও, কিছুক্ষণ পরেই হাতে পতাকা থাকার ওই অংশ মুছে ফেলা হয়। পুলিশ দাবি করে, পাঁচ থেকে সাত হাজার লোক সে দিন আরজি করে হামলা চালিয়েছিল। যা নিয়ে খোদ কলকাতা হাই কোর্ট প্রশ্ন তোলে, এত লোক এসে হাসপাতালে ভাঙচুর করল, আগাম খবর পেল না পুলিশ? তবে কি এটা পুলিশি 'ইন্টেলিজেন্সের' চরম ব্যর্থতা? বিনীত এ বিষয়ে বলেন, “কোনও নেতাহীন ভিড় যে এমন ঘটিয়ে ফেলতে পারে, তা আগাম আন্দাজ করা যায়নি। যদি বলা হয় এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতা ছিল, তা হলে ছিল।” ফলে ক্ষোভ বাড়তে থাকে পুলিশের বিরুদ্ধে। সমাজমাধ্যমে পুলিশের করা ‘সন্ধান চাই’ পোস্টে অনেকে লিখে যান, ‘সাধারণ মানুষই যদি খুঁজে দেব, তা হলে পুলিশ করবে কী?’
সেই আরজি কর হাসপাতাল চত্বরে জমায়েতেই এর পরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে পুলিশ। এই নির্দেশিকা অনুযায়ী, পাঁচ জনের বেশি জমায়েত নিষিদ্ধ। এই ঘোষণার পরে অনেকেই বলছেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ভেস্তে দেওয়ার জন্যই পুলিশের এই পরিকল্পনা।
পরের পর ঘটনায় দেখা যাচ্ছে, পুলিশ এমন কিছু পদক্ষেপ করেছে, কার্যত যা ভুলেরই শামিল। লালবাজারে এক কর্তা এ ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, “আমাদের হাত-পা বাঁধা। তদন্তটুকু নিজের মতো করতে পেরেছিলাম আমরা। কিন্তু এ ছাড়া কতটা বলতে হবে, কী ভাবে বলতে হবে, আর কী করতে হবে, সবটাই নির্দেশ আকারে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ শুধু সেই নির্দেশই পালন করেছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy