শিশুর মৃত্যু হলে কি অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের? ফাইল চিত্র।
মৃত ছেলেকে ব্যাগে করে রবিবার শিলিগুড়ি থেকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন কালিয়াগঞ্জের অসীম দেবশর্মা। সোমবারেও সেই ঘটনা রাজ্য রাজনীতির অন্যতম আলোচ্য। বিরোধীরা সরব। পদক্ষেপ করেছে নবান্নও। মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। বিষয়টি নিয়ে বিরোধী শিবির রাজনীতি করার চেষ্টাও চালাচ্ছে। কিন্তু প্রকৃত নিয়ম কী? হাসপাতালে কোনও শিশুর মৃত্যু হলে কি অ্যাম্বুল্যান্স বা শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করার কথা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের? কী বলছে রাজ্য সরকারের নিয়ম?
কালিয়াগঞ্জের ঘটনা নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার রবিবার থেকেই সরব। সোমবার সুকান্তের নির্দেশে অসীমের বাড়িতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দিয়ে এসেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলার বিজেপি নেতারা। নবান্নে এক সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যে এই প্রসঙ্গে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তিনি জানান, কী ভাবে এটা ঘটল, তা স্থানীয় স্তরের প্রশাসনকে দেখতে বলা হয়েছে। তবে তার আগেই নবান্নের পক্ষে রিপোর্ট তলব করা হয়েছিল জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের কাছে।
সোমবারও মৃত শিশুর বাবা অসীম আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমি ছেলে মারা যাওয়ার খবর পেয়েই চিন্তায় পড়ি— কী করে বাড়িতে নিয়ে আসব! ভেবেছিলাম হাসপাতাল থেকেই অ্যাম্বুল্যান্স দেবে। আমি সুপারের ঘরে গিয়েছিলাম। তিনি অ্যাম্বুল্যান্সের ঘরে যেতে বলেন। কিন্তু পরে ওখানে বলা হয় কোনও অ্যাম্বুল্যান্স মিলবে না। হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুল্যান্সের কাছেও যাই। সেখানেই আমার কাছে আট হাজার টাকা চাওয়া হয়।’’
সেখানেই প্রশ্ন। হাসপাতালে কোনও শিশুর মৃত্যু হলে তার দেহ কি অ্যাম্বুল্যান্সে করে বাড়ি পাঠানো যায়? সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন হবে শববাহী গাড়ির। কিন্তু সরকারি হাসপাতাল কি বিনাখরচে শববাহী যানের পরিষেবা দেয়?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের ঘোষিত নীতি অনুযায়ী কোনও প্রসূতি চাইলে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে করে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। একই ভাবে সন্তান-সহ মাকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। আবার এক বছরের কম বয়সের শিশু অসুস্থ হলেও সেই সুবিধা মেলে। অসীমের যমজ সন্তান অসুস্থ ছিল। গত বৃহস্পতিবার এক সন্তান সুস্থ হয়ে গেলে অসীমের স্ত্রী সাগরী দেবশর্মা উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ থেকে সরকারি অ্যাম্বুল্যান্সেই বিনাখরচে কালিয়াগঞ্জের মুস্তাফানগরের ডাঙিপাড়ার বাড়িতে ফেরেন। সমস্যা তৈরি হয় শনিবার রাতে অপর সন্তানটির মৃত্যু হওয়ায়। অসীমের আশা ছিল, সেই সন্তানও সুস্থ হয়ে যাবে এবং সরকারি ব্যবস্থায় বাড়ি ফেরা যাবে।
স্বাস্থ্য ভবন থেকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, কোনও শিশুর মৃত্যু হলে কী ভাবে বাড়ি পাঠানো হবে তার কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম রাজ্যে নেই। তবে বিষয়টি ‘মানবিক’ দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা হয়। যেমন দেখা হয় প্রবীণদের ক্ষেত্রেও। কেউ যদি জানান, দেহ নিয়ে যাওয়ার মতো আর্থিক ক্ষমতা নেই তা হলে হাসপাতাল নিজে বা পুলিশের সাহায্যে দেহ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। কখনও কখনও বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাহায্যও নেওয়া হয়।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের সুপার সঞ্জয় মল্লিক আনন্দবাজার অনলাইনকে জানিয়েছেন, মৃত শিশুর পরিবারের তরফে তাঁর কাছে কোনও আবেদনই করা হয়নি। সুপার বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হল রাজ্যের একমাত্র মেডিক্যাল কলেজ, যেটি কোনও পুর এলাকার মধ্যে পড়ে না। পড়ে গ্রামীণ এলাকায়। পুর এলাকায় পুরসভার তরফে শববাহী গাড়ি থাকে। কখনও কখনও শববাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে রেড ক্রস বা বিভিন্ন অসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে এমন কোনও শববাহী গাড়ি নেই। হাসপাতালে কয়েকটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। রয়েছে মাতৃযানও। আমরা প্রসূতি মা-কে হাসপাতালে নিয়ে আসা এবং সন্তান জন্ম নেওয়ার পর মা-সহ সদ্যোজাতকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা আমাদের নেই।’’ তবে পাশাপাশিই সুপার বলেছেন, ‘‘এই ক্ষেত্রে ওই শিশুটির পরিবারের তরফে যদি এক বার যোগাযোগ করা হত, তা হলে একটা না একটা ব্যবস্থা করা যেত। পুর এলাকা থেকে শববাহী গাড়ি আনানো যেত। লিখিত নিয়মের বাইরে গিয়ে বিষয়টা মানবিক ভাবে দেখা হত।’’ সুপারের কথায়, ‘‘আমায় না বলে সহকারী সুপারদের কাছে জানালেও ব্যবস্থা করা যেত। আমি জানতাম না। ওঁদের কাছেও খবর ছিল না বলেই জানতে পেরেছি। ওঁদের অপারগতার কথা আমরা জানতাম না। খুব খারাপ লাগছে।’’
মৃত শিশুর বাবা অসীম অবশ্য হাসপাতাল সুপারের ঘরে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘সুপারের ঘর থেকেই তো আমায় শিশুকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়।’’ যদিও যে কাগজ অসীম দেখিয়েছেন, তাতে সুপার নয়, সংশ্লিষ্ট আরএমও-র স্বাক্ষর রয়েছে।
এই ক্ষেত্রে রাজ্যের নিয়ম কী? রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি পলাশ দাস বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সে করে রোগী আনা বা বাড়ি ফেরানোর বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা জানা আছে। কেউ মারা গেলে সেই দেহ বাড়িতে ফেরানোর জন্য তেমন কোনও নির্দেশিকা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে মানবিক দিক থেকে বিষয়টি দেখা উচিত ছিল। এতটা পথ শিশুর দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরার বিষয়টি ভাবা উচিত ছিল। তবে ঠিক কী হয়েছে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানতেন কি না, সেগুলোও বিচার্য। জানতে পারলে ওঁরা কিছু না কিছু একটা ব্যবস্থা নিশ্চয়ই করতেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy