দেবশ্রী চৌধুরী ফাইল চিত্র
রবি ঠাকুরের কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিয়াছিলেন তিনি মরেন নাই। দেবশ্রী চৌধুরী কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে ইস্তফা দিয়ে প্রমাণ করলেন তিনি মন্ত্রী ছিলেন।
বুধবার দুপুরে যখন খবর ছড়িয়ে পড়ল, দেবশ্রীকে তাঁর মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে, তখনই তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল আনন্দবাজার অনলাইন। রায়গঞ্জের সাংসদ সরাসরিই বলেন, তাঁর কাছে তেমন কোনও খবর নেই। কিন্তু ওইটুকু বলেই দ্রুত ফোন কেটে দেন। রাজনীতিকদের এই ভাবে তড়িঘড়ি ফোন রেখে দেওয়া কিছু সঙ্কেত বহন করে। দেবশ্রীর ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বেলা গড়ানোর আগেই পশ্চিমবঙ্গ জেনে যায়, দেবশ্রী আর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নন। পাশাপাশিই জানতে পারে, রাজ্য থেকে দেবশ্রী কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেনও বটে।
কেন্দ্রীয় নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী সঙ্ঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠ হলেও রাজ্য রাজনীতিতে কখনওই খুব পরিচিত ছিলেন না। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে যে ১৮টি আসন জিতেছিল বিজেপি, তার মধ্যে একটি ছিল দেবশ্রীর রায়গঞ্জ। বিরোধীরা বলেন, মহম্মদ সেলিম এবং দীপা দাশমুন্সির দ্বৈরথ ওই আসনে দেবশ্রীকে বৈতরণী পার করিয়ে দিয়েছিল। ফলে দেবশ্রী যে মন্ত্রী হতে পারেন, তা-ও কেউ আশা করেননি। রাজ্য বিজেপি-র নেতাদের অনেকেই অবাক হয়েছিলেন রায়গঞ্জের সাংসদের নাম কেন্দ্র্রীয় মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণার পরে।
দু’বছর মন্ত্রী থাকলেও রাজ্য রাজনীতিতে দেবশ্রী সে ভাবে দাগ কেটেছিলেন, এমনটা তাঁর চরম শত্রুরাও বলতে পারবেন না। বিধানসভা নির্বাচনেও তাঁর তেমন ভূমিকা ছিল না। বঙ্গ রাজনীতির এক আপাদমস্তক রহস্য এবং প্রহেলিকা হিসেবেই তাঁর মন্ত্রিত্বে উত্থান। অবনমনও অপ্রত্যাশিত গতিতে। কিন্তু গত দু’বছর যে দেবশ্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন, তা বঙ্গবাসী খুব একটা বুঝতে পারেননি। তবে এটা ঠিক যে, রাজ্য রাজনীতিতে দেবশ্রীর পরিচিতি তৈরি হয় তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হওয়ার পরেই।
বিজেপি-র ‘আদি’ শিবিরের সদস্য তিনি। বালুরঘাটের মেয়ে দেবশ্রী লেখাপড়ার সূত্রে এসেছিলেন কলকাতায়। তার পরে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সঙ্গে যুক্ত হন। সেই সময় বিদ্যার্থী পরিষদের সংগঠন সম্পাদক ছিলেন অমল চট্টোপাধ্যায়। পরে তিনিই রাজ্য বিজেপি-র দায়িত্ব পান। সেই সময় থেকেই এক সময়ের বিদ্যার্থী পরিষদের রাজ্য সভাপতি দেবশ্রী বিজেপি-তে। উত্তরবঙ্গে হিন্দুত্ব রাজনীতির সূচনালগ্ন থেকেই ছিলেন বালুরঘাটের দেবীদাস চৌধুরী। তাঁরই কন্যা দেবশ্রী। ফলে তাঁর বিজেপি-তে উত্থানের পিছনে আরএসএস-এর ভূমিকা বরাবরই ছিল। গোটা পরিবারই সঙ্ঘের অনুগামী।
২০১৪ সালে রাজ্যে বিজেপি দু’টি আসনে জয় পায়। আসানসোলে বাবুল সুপ্রিয় এবং দার্জিলিঙে সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া। দু’জনই প্রথম মোদী মন্ত্রিসভায় জায়গা পান। আর ২০১৯ সালে রাজ্যে বিজেপি ১৮টি লোকসভা আসনে জয় পেলেও দু’জনকেই মন্ত্রী করা হবে বলে জানানো হয়। রেকর্ড ভোটে বাবুল জয় পাওয়ায় তাঁর মন্ত্রিত্ব অক্ষত থাকে। অন্য দিকে দার্জিলিঙের বদলে বর্ধমান-দুর্গাপুর থেকে জিতলেও অহলুওয়ালিয়া বাদ পড়েন। তার বদলে বাংলা থেকে মন্ত্রিসভায় আসেন দেবশ্রী। প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটে বর্ধমান-দুর্গাপুর আসনে প্রার্থী হয়ে হেরেছিলেন দেবশ্রী। সেই হিসেবে ২০১৯ সালের জয়ই তাঁর রাজনৈতিক জীবনের প্রথম সাফল্য। তাতেই মন্ত্রী হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দু’টি বিষয় দেবশ্রীর পক্ষে ছিল। এক, তিনি সঙ্ঘ পরিবারের ঘরের মেয়ে। দুই, আদি বিজেপি শিবিরের একমাত্র মহিলা সাংসদ।
তবে এ বার নির্বাচনে দেবশ্রীর রিপোর্ট কার্ড একেবারেই ভাল নয়। ২০১৯ সালের হিসেবে বিধানসভা নির্বাচনে দেবশ্রীর এলাকাতেও খারাপ ফল করেছে বিজেপি। লোকসভায় চারটি আসনে বিজেপি এগিয়ে থাকলেও বিধানসভা ভোটে জয় মিলেছে দু’টিতে। তবে রাজ্য বিজেপি নেতাদের বক্তব্য, লোকসভা নির্বাচনে রায়গঞ্জে সেলিম সিপিএম প্রার্থী হওয়ায় অনেক মুসলিম ভোট পেয়েছিলেন। সেই ভোট কাটাকাটিতে অনেক মুসলিম প্রধান এলাকাতেও বিজেপি এগিয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনে করণদিঘি বা হেমতাবাদের মতো আসনে সেই সুবিধা পাওয়া যায়নি।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর পর দেবশ্রীকে কি সংগঠনে কোনও বড় পদ দিয়ে পুনর্বাসন দেওয়া হবে? তেমন সম্ভাবনার কথাও শোনা যাচ্ছে রাজ্য বিজেপি-র অন্দরে। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের একটা বড় অংশের বক্তব্য, লড়াকু মনোভাবের দিক দিয়ে খানিকটা পিছিয়ে দেবশ্রী। দীর্ঘদিন রাজনীতিতে থাকলেও নিজস্ব ক্যারিশমা নেই। তাই ‘গুরুদায়িত্ব’ পাওয়ার সম্ভাবনাও সে বাবে নেই। যদি না নাটকীয় কিছু ঘটে যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy