চালকের আসনে: মা চুনিবালার সঙ্গে স্কুটিতে বাজার যাচ্ছেন বিরবাহা। শুক্রবার ঝাড়গ্রামের পথে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
স্কুটি চালাচ্ছেন তিনি। পিছনে বোন। পৌঁছলেন ডাক্তারের চেম্বারে। সঙ্গে নিরাপত্তারক্ষীও নেই। হাজার হোক মন্ত্রী তো! ফলে, শশব্যস্ত চেম্বারের কর্মীরা। অথচ তিনি নির্বিকার। বাকিদের সঙ্গেই অপেক্ষা করছেন, কখন ডাক পড়বে।
ক’দিন আগে ঝাড়গ্রামে শ্রাবণী মেলাতেও পৌঁছলেন স্কুটি চালিয়েই। ঠিক যে ভাবে মায়ের সঙ্গে নিয়মিত বাজারে যান এবং ফেরার পথে চা দোকানে দাঁড়িয়ে যান দু'দণ্ড।
প্রথমে বিধায়ক, তার পর প্রতিমন্ত্রী, তার পর স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিমন্ত্রী। রাজনীতির আঙিনায় বিরবাহা হাঁসদার উত্থান নজরকাড়া। তবে এই উত্থানেও আদতে তিনি মাটির কাছে থাকা মেয়ে। বিরবাহার এই ভাবমূর্তিই কি কাজে লাগিয়ে আগামী পঞ্চায়েত ভোটে আদিবাসী মহলে জমি শক্ত করতে চাইছে তৃণমূল? তাই কি এমন দফতরে তাঁকে স্বাধীন দায়িত্ব দেওয়া হল, যাতে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছনো যায়? রাজনৈতিক মহলের মতে, তা তো বটেই। একই সঙ্গে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দফতরের স্বাধীন দায়িত্ব পাওয়ার ফলে বিরবাহা আদিবাসী নারীর ক্ষমতায়নে কাজ করতে পারবেন ও তার ফলে ওই মহিলাদের সমর্থনে পুষ্ট হবে শাসকদল।
ঝাড়গ্রাম জেলার ৮টি ব্লকে ৭৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সংখ্যা ১৮,৭০০-র কিছু বেশি। আর গোষ্ঠীভুক্ত মহিলার সংখ্যা ১ লক্ষ ৮০ হাজার। স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে নিয়ে পঞ্চায়েতস্তরে সঙ্ঘ এবং ব্লকস্তরে মহাসঙ্ঘ রয়েছে। এরা স্কুলের পোশাক, শালপাতার থালা-বাটি, খেজুর পাতা ও সাবাই ঘাসের হস্তশিল্প সামগ্রী বানায়, জ্যাম-জেলি-আচার তৈরি করে। ছাগল পালন, স্কুলে মিড ডে মিল রান্নার মতো কাজেও যুক্ত এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি। মহিলাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে রাজ্য জুড়েই এই সব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ভূমিকা অনস্বীকার্য। সঙ্ঘ, মহাসঙ্ঘ ও ব্যাঙ্ক থেকে কম সুদে ঋণ মেলে। এখন তো সরকারি সহায়ক মূল্যে কিছু স্বনির্ভর গোষ্ঠী ধানও কিনছে। মিলছে কমিশন।
ফলে, আদিবাসী-মূলবাসী মহিলাদের স্বনির্ভর করার ক্ষেত্রে বিরবাহার নতুন দফতরের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। আর মহিলাদের অর্থনৈতিক উন্নতির সুফল যে আখেরে উপুড়হস্ত ভোট, ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ তার প্রমাণ দিয়েছে। জেলা তৃণমূলের এক নেতা বলছিলেন, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটের আগে বিরবাহা স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির মন ছুঁতে পারলে সেটার সুফল তো দলই পাবে।’’ বিরবাহাও বলছেন, ‘‘নতুন দফতরে কাজের প্রচুর সুযোগ। মহিলাদের স্বনির্ভর কর্মসূচি আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই আমার লক্ষ্য।’’
গত বছর মার্চে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দেন বিরবাহা। বিধানসভায় টিকিটও পান। কিন্তু পরে তিনি পার্থকে এড়িয়ে চলতেন। জেলায় পার্থর দলীয় বৈঠকেও গরহাজির থেকেছেন। তৃণমূল সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত ভাবে তাঁকে পছন্দ করেন। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও বিরবাহার সুসম্পর্ক। এখন তাঁর ভাবমূর্তি সামনে রেখে আর জেলা সংগঠনের মাথায় ফের দুলাল মুর্মুকে ফিরিয়ে এনে পঞ্চায়েত ভোটের বৈতরণী পেরোতে চাইছে তৃণমূল। গত বিধানসভায় দুলাল জেলা সভাপতি থাকাকালীনই ঝাড়গ্রামের ৪টি আসনের সব ক’টিতে ঘাসফুল ফুটেছিল।
বিরোধীরা অবশ্য বিঁধতে ছাড়ছে না। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডুর কটাক্ষ, ‘‘তৃণমূলে এ ভাবেই এক এক জনকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেওয়া হয়। তার পর নিজেদের দ্বন্দ্বেই জেরবার হয় ওরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy