Advertisement
০৭ জানুয়ারি ২০২৫
Mamata Banerjee

আরজি কর-কাণ্ডের শিক্ষা! পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের একহাত নিয়ে বিরোধী অস্ত্র ভোঁতা করার চেষ্টায় মমতা

গত কয়েক মাস ধরে বিজেপি ব্যস্ত সদস্য সংগ্রহে। সিপিএম ডুবে আছে সম্মেলনে। কংগ্রেসের যা কর্মসূচি হচ্ছে, সবই প্রায় ঔপচারিক। সেই প্রেক্ষাপটে মমতা দ্বৈতভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন প্রশাসনিক বৈঠকে।

Mamata Banerjee tries to blunt opposition\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\\'s weapons by criticizing police and health officials

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০১
Share: Save:

তাঁর সাড়ে ১৩ বছরের শাসনে সবচেয়ে ‘কঠিন’ সময় গিয়েছে আরজি কর পর্ব। যে পর্বে আন্দোলনের চাপে শেষ পর্যন্ত কলকাতার পুলিশ কমিশনার সহ-পুলিশ এবং স্বাস্থ্য প্রশাসনের একাধিক পদস্থ কর্তাকে বদলি করতে হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সরকারকে কোণঠাসা করতে বিরোধীদেরও অস্ত্র ছিল পুলিশ এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা। নতুন বছরের শুরুতেই প্রশাসনিক বৈঠক করে নানা কারণে পুলিশকর্তাদের ভর্ৎসনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। আবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকেও মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কড়া কড়া প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। কেন এমন ‘কঠোর’ হলেন মুখ্যমন্ত্রী? কারণ ‘রাজনৈতিক’।

আরজি কর পর্বে আন্দোলনের মূল নিয়ন্ত্রণ ছিল সাধারণ নাগরিকদের হাতে। সেখানে কৌশলে বামেরা মিশে থাকার চেষ্টা করেছে। বিজেপি কখনও থেকেছে, কখনও থাকতে পারেনি। সেই অর্থে পরিপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলনের মুখোমুখি হতে হয়নি সরকারকে। কিন্তু ঝান্ডাহীন, নির্দলীয় নাগরিক আন্দোলনেও সরকার-বিরোধী স্বর ছিল। যাতে পুলিশের ভূমিকা এবং স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রশাসনিক বৈঠকে সেই পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন মমতা। যে অস্ত্রে সরকারকে নিশানা করা করছিল, মমতা নিজেই সেই অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছেন।

গত কয়েক মাস ধরে দেখা যাচ্ছে, বিরোধীরা খানিকটা ‘ছন্নছাড়া’। বিজেপি ব্যস্ত সদস্য সংগ্রহে। সিপিএম ডুবে আছে সম্মেলনে। কংগ্রেসের যা কর্মসূচি হচ্ছে, সবই প্রায় ঔপচারিক। সেই প্রেক্ষাপটেই মমতা দ্বৈতভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন প্রশাসনিক বৈঠকে। আরজি কর পর্বের পরে নানা ঘটনায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা থেকে জেলায় একাধিক ঘটনায় পুলিশের ‘ভূমিকা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। কিন্তু বিরোধীদের একাংশই মেনে নিচ্ছেন, সেই প্রশ্ন তোলা ছিল সংবাদমাধ্যম সর্বস্ব। মাঠে-ময়দানে দাগ কাটার মতো তেমন কোনও ভূমিকা বিরোধীদের মধ্যে দেখা যায়নি। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সেই ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। আবার ‘রেফারেল সিস্টেম’-সহ স্বাস্থ্য বিষয়ক যে সমস্ত প্রশ্ন ছিল, তা নিয়ে নিগমকে প্রশ্ন করে সদুত্তর না পেয়ে তিরস্কার করেছেন সেই প্রশাসনিক বৈঠকেই। অর্থাৎ, যে দু’টি ক্ষেত্র নিয়ে বিরোধীরা সরকারের বিরোধিতায় সরব ছিল, সেই পরিসরে মমতা নিজেই প্রবেশ করলেন।

বিরোধীরা অবশ্য মানছে না যে, তাদের অস্ত্র ‘ভোঁতা’ হয়ে গিয়েছে। বরং বিজেপি, সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতাদের প্রায় সকলেই একসুরে বলছেন, মুখ্যমন্ত্রী ব্যর্থতা ‘ধামাচাপা’ দিতে পুলিশ এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করেছেন। রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীই পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতরের মাথায়। তিনি যে ঘটনা ঘটিয়েছেন, তা দেশে বিরলতম! সকলেই বুঝতে পারছে নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে তিনি পুলিশ আধিকারিক এবং স্বাস্থ্যকর্তাকে লোকদেখানো বকুনি দিয়েছেন।’’ কটাক্ষের সুরে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারের মাথা। তিনিই দফতর বণ্টন করেন। পুলিশ এবং স্বাস্থ্য দফতর যদি ব্যর্থ হয়, দায়িত্ব সামলাতে না পারে, তা হলে মুখ্যমন্ত্রীর উচিত স্বাস্থ্য এবং পুলিশমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা।’’ আবার সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘পুলিশ কার? ভাইপোর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়)? না কি পিসির? এটাই হল মূল প্রশ্ন। আসলে পুলিশে লবি তৈরি হয়েছে সরকার এবং শাসকদলের উপরতলা থেকে। যে পুলিশ যেমন প্রসাদ পাঠান, তাঁর তেমন মর্যাদা। এখন এ সব বলে কী হবে। সব ধরা পড়ে গিয়েছে।’’

বস্তুত, স্বাস্থ্যের চেয়েও পুলিশকে মুখ্যমন্ত্রীর বেশি রোষানলে পড়তে হয়েছে। মালদহের তৃণমূল নেতা খুন থেকে বীরভূমের বালিপাচার, দিনহাটার পরিস্থিতি থেকে বিএসএফের সঙ্গে ‘বোঝাপড়া’র তীব্র সমালোচনা করেছেন মমতা। কেন পুলিশের উপরতলাকে দুষলেন পুলিশমন্ত্রী? শাসকদল এবং সরকারের বিভিন্ন নেতা বা কর্তার বিভিন্ন ব্যাখ্যা রয়েছে। একাংশের বক্তব্য, আরজি কর পর্বের পর থেকে একাধিক ঘটনায় রাজ্য পুলিশের সঙ্গে সিভিক পুলিশকে (সিভিক ভলান্টিয়ার) এক করে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছিল। এমন একটা ধারণা তৈরির চেষ্টা হচ্ছিল যে, সিভিকেরাই আসলে পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রী সেই ধারণা নস্যাৎ করতে চেয়েছেন। বোঝাতে চেয়েছেন, কারও ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে পুলিশকর্তারা পার পাবেন না। তাঁরাই ‘আসল’ পুলিশ। সিভিকেরা সিভিকই।

তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক এবং তৎপরবর্তী সময়ে মমতা বোঝাতে চেয়েছিলেন, দলে তিনিই ‘শেষ কথা’। স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলেন, ‘‘আমিই চেয়ারপার্সন।’’ প্রশাসনিক বৈঠক ডেকে জেলা প্রশাসনকে বার্তা দেওয়া হল, সরকারেও তিনিই ‘শেষ কথা’। ফলে কিছু পুলিশকর্তা এবং বেশ কয়েক জন আমলার বিষয়ে তৃণমূলের অনেকের মধ্যে ‘ক্ষমতার ভরকেন্দ্র’ বিষয়ক যে ধারণা রয়েছে, তা পরিষ্কার করে দিয়েছেন তিনি। ইতিমধ্যে গত দু’-তিন দিনে দলীয় স্তরে নানা ঘটনায় সেই ভরকেন্দ্র বদলের ইঙ্গিত মিলেছে। প্রশাসনিক স্তরে মুখ্যমন্ত্রী মমতার বার্তা রাজনৈতিক দিক দিয়েও ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। যেখানে পুলিশ এবং স্বাস্থ্য প্রশাসনকে একহাত নিয়ে তিনি বিরোধী অস্ত্র ‘ভোঁতা’ করার চেষ্টা শুরু করেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee CM Mamata Banerjee West Bengal Police Health System
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy