প্রতীকী ছবি।
এ বার কি তবে ভাটপাড়া পুরসভা?
ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে হাতছাড়া হওয়া পুরসভাগুলি একে একে ফিরে পেয়েছে তৃণমূল। কেবলমাত্র ভাটপাড়া পুরসভা রয়ে গিয়েছে বিজেপির দখলে। এ বার সেই পুরসভা দখলের জন্য ঘুঁটি সাজাতে শুরু করেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।
দলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, দিন কয়েক আগে জনা ছ’য়েক বিজেপি কাউন্সিলর নৈহাটি এবং কলকাতায় তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। সেখানে তাঁরা দাবি করেন, তৃণমূলে ফেরার পরে তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তৃণমূল নেতৃত্ব সেই আশ্বাস দিয়েছেন। আপাতত ওই কাউন্সিলরদের ‘ধীরে চলো’ নীতিতেই ভরসা রাখতে বলা হচ্ছে। কারণ, পুর আইন মোতাবেক নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ ছাড়া পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যাবে না।
এই পরিস্থিতিতে বিজেপি কী ভাবে আসন সংখ্যা ধরে রাখতে পারে, সেটাই দেখার। এমনিতে তৃণমূলের হাত থেকে কয়েকটি পুরসভার দখল নিতে পারলেও কাউন্সিলরেরা আবার ঘাসফুল শিবিরে ফেরায় সেই সব পুরসভা বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে।
যদিও বিষয়টিকে এখনই গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি শিবির। তাদের বক্তব্য, কৌশলগত কারণেই কে দলে থাকল, কে গেল তা নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছেন না তাঁরা। কারণ, কয়েক মাসের মধ্যেই একাধিক পুরসভায় ভোট হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে ভোটে জিতে নতুন ভাবে ক্ষমতায় আসাই এখন তাঁদের রণকৌশল।
ভাটপাড়ার কিছু কাউন্সিলর তৃণমূলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে ঘাসফুল শিবির দাবি করলেও বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি। তাদের দাবি, তৃণমূল নেহাতই ফাঁকা আওয়াজ দিচ্ছে। তাঁদের কেউ তৃণমূলে যাচ্ছেন না।
তবে কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে পুরসভার দখল হাতে আসার পরে ফের হাতছাড়া হওয়ায় বিজেপির কি মুখ পুড়ছে না?
বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ মানছেন, ব্যারাকপুর লোকসভা ভোটে দলের জয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে তাড়াহুড়ো করে পুরসভার দখল নিতে চাওয়া ঠিক হয়নি। সংগঠন না বাড়িয়ে স্রেফ কাউন্সিলরদের ভাঙিয়ে পুরসভার দখল নিয়েও তা ধরে না রাখতে না পারায় দলের কর্মীদের মনোবলে চিড় ধরেছে। জনমানসেও বিরূপ প্রভাব পড়েছে। বিশেষত, গারুলিয়া পুরসভায় পুরপ্রধান সুনীল সিংহ অনাস্থার মুখোমুখি না হয়ে কার্যত পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। আরও ঘর গোছানোর পরে পুরসভার দখল নিতে চেষ্টা করা উচিত ছিল বলে মনে করছেন দলের পুরনো নেতৃত্বের একাংশ। গারুলিয়া ছাড়া হালিশহর, কাঁচরাপাড়া, নৈহাটিতে পুরবোর্ড ধরে রাখতে না পারা দলের ভাল ‘বিজ্ঞাপন’ হয়নি বলেই মত বিজেপি শিবিরের ওই অংশের।
ভাটপাড়া পুরসভায় ক্ষমতা ধরে রাখা তাই বিজেপির কাছে এখন সম্মানের প্রশ্ন।
ভাটপাড়ার পুরপ্রধান ছিলেন তৃণমূলের অর্জুন সিংহ। এলাকাটি তাঁর ‘খাসতালুক।’ তৃণমূল ছেড়ে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপির প্রার্থী হয়ে জিতেছেন অর্জুন। তার আগে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরেই অবশ্য ভোটাভুটিতে পুরপ্রধানের পদ থেকে অপসারিত হন। লোকসভা ভোটে প্রার্থী হওয়ায় কাউন্সিলর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। লোকসভা ভোটের পরে পুরপ্রধান নির্বাচনের ভোটাভুটিতে জিতে যান অর্জুনের ভাইপো সৌরভ সিংহ। তাঁকে সামনে রেখে ভাটপাড়ায় ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া অর্জুন নিজেও।
ভাটপাড়া পুরসভার কাউন্সিলর ৩৫ জন। খাতায়-কলমে বিজেপির পক্ষে রয়েছেন ২৮ জন। তৃণমূলের কাউন্সিলরের সংখ্যা ৭ জন। নৈহাটির বিধায়ক পার্থ ভৌমিকের দাবি, ‘‘পুরনো কাউন্সিলরেরা তলে তলে আমাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন। বিজেপিতে ওঁদের মানিয়ে নিতে অসুবিধা হচ্ছে। ফলে ওঁরা যথা সময়েই পুরনো ঘরে ফিরবেন।’’ তবে তাঁরা কারা, তা পরিষ্কার করেননি পার্থ। নিরাপত্তার কারণেই তাঁদের নাম গোপন রাখা হয়েছে বলে জানান পার্থ।
অন্য দিকে অর্জুনের বক্তব্য, ‘‘নিজেদের হতাশা ঢাকতে অনেকে অনেক কথাই বলছে তৃণমূল। তার কোনও গুরুত্ব আমাদের কাছে নেই। সময় এলে, তা হলে প্রমাণ হয়ে যাবে কারা কোন শিবিরে রয়েছেন।’’
ভাটপাড়ার বাসিন্দারা অবশ্য চান, ক্ষমতায় যে-ই আসুক, পরিষেবা যেন ভাটা না পড়ে। শান্তি-শৃঙ্খলা যেন নষ্ট না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy