Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Sandeshkhali Violence

শাহজাহানের ‘ডান হাত’! পঞ্চায়েতে ‘অ-প্রতিদ্বন্দ্বী’, সন্দেশখালিতে উত্তম-উত্থান কী ভাবে? কেন সাসপেন্ড?

উত্তম সন্দেশখালির ব্লক সভাপতি ছিলেন। শনিবার রেড রোডের ধর্নামঞ্চ থেকে পার্থ ভৌমিক তাঁকে সাসপেন্ড ঘোষণা করেছেন। জানিয়েছেন, উত্তমকে সাসপেন্ড করতে বলেছেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

Who is Uttam Hazra leader of Sandeshkhali who was suspended by TMC

(বাঁ দিকে) সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখ। উত্তম সর্দার (ডান দিকে)। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১৭:৫৬
Share: Save:

সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা উত্তম সর্দারকে শনিবার সাসপেন্ড করেছে দল। রেড রোডের ধর্নামঞ্চ থেকে পার্থ ভৌমিক ঘোষণা করেছেন, আগামী ছয় বছরের জন্য তৃণমূল থেকে উত্তমকে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

চল্লিশোর্ধ্ব উত্তম বাম জমানা থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ছাত্রজীবনে তিনি কংগ্রেস করতেন। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে উত্তমও দলবদল করেন। তার পর তৃণমূলের হাত ধরেই তাঁর উত্থান।

এত দিন উত্তম সন্দেশখালির অঞ্চল সভাপতি পদে ছিলেন। জেলা পরিষদের সদস্যও তিনি। শাহজাহান শেখ, শিবু হাজরাদের ঘনিষ্ঠ উত্তমকে চেনেন না, সন্দেশখালিতে এমন লোকের খোঁজ পাওয়া মুশকিল। অথচ, গত দু’দিন ধরে উত্তম ফেরার। তাঁকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না। তিনি কোথায় রয়েছেন, কেউ জানে না। শাহজাহানের মতোই যেন ‘উবে’ গিয়েছেন তাঁর সঙ্গী উত্তমও।

গ্রামবাসীদের দাবি, উত্তমকে গত বুধবার রাতে শেষ বার এলাকায় দেখা গিয়েছিল। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাঁকে ধরে ফেলেছিলেন। পুলিশ গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে এবং থানায় নিয়ে যায়। পরে আবার ছেড়েও দেওয়া হয় এই নেতাকে। তার পর থেকেই আর কেউ উত্তমকে এলাকায় দেখেছেন বলে মনে করতে পারছেন না। একাংশের দাবি, শাহজাহানের মতো তিনিও এলাকাতেই গা ঢাকা দিয়েছেন।

শাহজাহান, শিবুদের মতো উত্তমের বিরুদ্ধেও এলাকায় ‘অত্যাচার’-এর অভিযোগ রয়েছে। যে অভিযোগে গত তিন দিন ধরে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা তাঁদের গ্রেফতারির দাবি তুলেছেন। সেই দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন, ঘেরাও করেছেন থানা। বিক্ষোভে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মহিলারা। বাঁশ, কাটারি, দা, হাতা, খুন্তি, লাঠি— যে যা পেয়েছেন, তা-ই নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন সন্দেশখালির অলিগলিতে। আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন একের পর এক পোলট্রি ফার্ম, বাগানবাড়িতে। অভিযোগ, গ্রামবাসীদের জমি জোর করে দখল করে ওই ফার্ম তৈরি করেছেন উত্তমেরা। সন্দেশখালিতে তাঁদের নামে এখন শুধুই ‘ক্ষোভ আর আতঙ্ক’-এর হাওয়া ঘুরছে।

বসিরহাট কলেজে এক সময়ে কংগ্রেসের ছাত্র পরিষদে দু’টি দলের দাপট ছিল। একটি অসিত মজুমদারের দল, অন্যটি দিলীপ মজুমদারের দল। সন্দেশখালির উত্তম প্রথমে ছিলেন দিলীপের সঙ্গে। শোনা যায়, এক বার অসিতের দলের লোকজনের কাছে বেধড়ক মার খেয়েছিলেন উত্তম। তার পরেই তাঁকে অসিতের দলের দিকে ঝুঁকতে দেখা যায়। কংগ্রেসের ছাত্র রাজনীতির হাত ধরে ধীরে ধীরে উত্থান হয় উত্তমের।

বসিরহাট কলেজে পড়লেও উত্তমের দেশের বাড়ি ছিল সন্দেশখালিতেই। তৃণমূল জমানায় সেখানেই তিনি শাসকদলের সঙ্গে যুক্ত হন। শাহজাহানের ঘনিষ্ঠতায় ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন তাঁর ‘ডান হাত’। শাহজাহানের যাবতীয় কারবার দেখাশোনা করতেন এই উত্তমই।

সন্দেশখালির পঞ্চায়েত নির্বাচনে বরাবর ‘অ-প্রতিদ্বন্দ্বী’ থেকেছেন উত্তম। পঞ্চায়েতে কেউ তাঁকে হারাতে পারেনি। কারণ, তাঁর বিরুদ্ধে ভোটেই দাঁড়াননি কেউ। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রথম বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেতার পর উত্তমকে পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ করা হয়েছিল। গত জুলাইয়ের পঞ্চায়েত ভোটে তিনি পান জেলা পরিষদের টিকিট। সে বারও উত্তমের বিরুদ্ধে সন্দেশখালি থেকে কেউ ভোটে দাঁড়াননি। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেলা পরিষদে জিতে তিনি তৃণমূলের ব্লক সভাপতি হন।

সন্দেশখালির আনাচকানাচে কান পাতলে উত্তমের মাছের ভেড়ির সাম্রাজ্যের পরিচয় পাওয়া যায়। কয়েক হাজার বিঘা জমিতে মাছের ভেড়ি ছড়িয়ে রয়েছে তাঁর। স্থানীয়দের অভিযোগ, ৯০ শতাংশ ভেড়ি গ্রামবাসীদের জমি দখল করে তৈরি করা।

শুক্রবার সন্দেশখালির বিক্ষুব্ধ মহিলারা জানিয়েছিলেন, তাঁদের স্বামীদের জোর করে কাজ করতে বাধ্য করতেন উত্তমরা। বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হত কাজের জন্য। সেই কাজের পর প্রাপ্য পারিশ্রমিকও দেওয়া হত না। টাকা চাইতে গেলে জুটত মার।

রেশন ‘দুর্নীতি’কাণ্ডে শাহজাহানের নাম জড়ানোর পর থেকেই শিরোনামে উঠে এসেছে সন্দেশখালি। গত ৫ জানুয়ারি থেকে শাহজাহান ‘নিখোঁজ’। সে দিন ইডি তাঁর বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিল। অভিযোগ, শাহজাহান ‘অনুগামী’দের হাতে মার খান ইডি আধিকারিকেরা। তার পর থেকে এখনও পর্যন্ত তাঁকে পুলিশ বা ইডি কেউই খুঁজে পায়নি। যদিও গ্রামবাসীদের অভিযোগ, এলাকাতেই ‘ঘাপটি’ মেরে রয়েছেন শাহজাহান। পুলিশই নাকি তাঁকে নিরাপত্তা দিচ্ছে। এ হেন শাহজাহানের ‘ডান হাত’ উত্তমের উপরেও গ্রামবাসীরা ক্ষুব্ধ। হাওয়া বুঝে ‘গা-ঢাকা’ দিয়েছেন উত্তম নিজেও।

শনিবার কলকাতায় তৃণমূলের ধর্নামঞ্চ থেকে পার্থ ভৌমিক জানান, উত্তমের বিরুদ্ধে মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। তাই অভিষেক তাঁকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সূত্রের খবর, শুক্রবার গভীর রাতে অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে সুজিত বসু, নারায়ণ গোস্বামী, রথীন ঘোষ-সহ ওই জেলার কয়েক জন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে হাজির ছিলেন পার্থও। সেখানেই উত্তমকে সাসপেন্ড করার নির্দেশ দেন অভিষেক। তার পর শনিবারের ঘোষণা।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy