আরজি করে ভাঙচুরের ঘটনার পর পুলিশি পাহারা। —ফাইল ছবি।
দায় কার? গাফিলতি কার? কার দোষে পুলিশের উপরে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হচ্ছে?
আপাতত এই নিয়েই জোর চর্চা শুরু হয়েছে কলকাতা পুলিশ বাহিনীর অন্দরে। গত কয়েক দিনে আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে তিন জন পুলিশকে সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। তার পরে এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে। যা নিয়ে নিচু তলার পুলিশের বড় অংশেরই বক্তব্য, ‘‘খুন এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার তদন্ত ভার সরাসরি লালবাজারের হাতে রয়েছে। তবুও থানার পুলিশের কাজেই উষ্মা প্রকাশ করে বাহিনীর অন্দরে বার্তা দেওয়া হচ্ছে বার বার। এমনকি, ‘পুলিশ লাইনে’ কথা না বললে কড়া পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হচ্ছে।’’ তাঁদের প্রশ্ন, কার গাফিলতিতে এই অবস্থা হল, যার দায়ভার এখন নিতে হচ্ছে বাহিনীর সকলকেই?
পরিস্থিতি বুঝে বাহিনীর সমস্ত স্তরের কর্মীর সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছে পুলিশ ওয়েলফেয়ার কমিটি। সূত্রের খবর, রীতিমতো ‘ক্লাস নিয়ে’ বোঝানো হয়েছে, ঠিক কী অবস্থায় লালবাজারকে কাজ করতে হচ্ছে। এই ঘটনার তদন্তের নানা দিকও তুলে ধরা হয়েছে সেই ‘ক্লাসে’। কোথাও গাফিলতির প্রশ্ন নেই জানিয়ে, কাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং কী ভাবে তদন্ত এগিয়েছে, তা-ও জানানো হয়েছে রিপোর্ট আকারে।
কিন্তু এর পরেও বৃহস্পতিবার, সুপ্রিম কোর্টে কলকাতা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠেছে। কলকাতা পুলিশের উত্তর ডিভিশনের একটি থানার অফিসার বললেন, ‘‘যে ভাবে প্রথম থেকে পুলিশ এগিয়েছে, তাতে জনমানসে একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
পরিবারের সদস্যদেরও বোঝানো যাচ্ছে না যে, গাফিলতি ছিল না। এখন সুপ্রিম কোর্ট যা প্রশ্ন তুলছে, তার যথাযথ উত্তর দিতে না পারায় মানুষের মনে প্রশ্ন আরও বেড়েছে।’’ ওই ডিভিশনেরই আর এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, ‘‘শুরু থেকেই তদন্তের সমস্ত তথ্য স্বচ্ছ ভাবে বলে দেওয়া উচিত ছিল। সেখানে পুলিশের শীর্ষ স্তর থেকে ধৃতের পরিচয় গোপন করার একটা চেষ্টা হয়। বলা হয়, ‘সে শুধুই একজন অপরাধী’। ওয়েলফেয়ার কমিটি যে হেতু সরাসরি কলকাতা পুলিশের শীর্ষস্তরের এক কর্তাকে রিপোর্ট করে, তাই ছোঁয়াচ বাঁচাতে এই পথ নেওয়া হয়েছিল কি না, প্রশ্ন উঠছে।’’
মধ্য কলকাতার একটি থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আবার বললেন, ‘‘এক জনই এই ঘটনা ঘটিয়েছে— এই ধারণা প্রথমেই পুলিশের তরফে প্রচার করাটা ঠিক হয়নি। অনেকেই ভেবেছেন, তাড়াহুড়ো করে তদন্ত গুটিয়ে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। লালবাজার থেকে বলা দরকার ছিল, আরও কেউ জড়িত কি না, দেখা হচ্ছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে আরও কেউ যে থাকতে পারে, সেই ধারণা জোরালো হয়েছে। তখনও পুলিশের তরফে এ নিয়ে প্রতিবাদ করা হয়নি। এতে অনেকের ধারণা হয়েছে, পুলিশই আসলে এই রিপোর্টটি ছড়িয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, পুলিশ হয়তো ভেবেছিল, এই রিপোর্ট দেখে ‘এক জনের তত্ত্ব’ আরও প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উল্টো।’’ সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে আর জি করে হামলা রুখতে না পারায়। বাহিনীর অনেকেরই দাবি, ‘‘সমাজমাধ্যমে দোষীদের ‘সন্ধান দেওয়া’র আবেদন ভাল ভাবে নেননি অনেকে। হামলার খবর কেন পুলিশের কাছে ছিল না, সেটাও বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। আদালতে ৫-৭ হাজার লোক হামলা করেছে বলে, পরে মাত্র ৪০ জনকে চিহ্নিত করায় হাস্যকর পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।’’
বন্দর এলাকার এক পুলিশকর্তাই বললেন, ‘‘বাইরে যে সমালোচনা চলছিল, সেটাই বাহিনীর অন্দরেও শুরু হয়েছে। হামলার ঘটনায়
দু’জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার এবং একজন ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড এবং তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হওয়ার পরে অনেকেরই প্রশ্ন, সে রাতে নিচু তলার পুলিশই মার খেয়েছে। তা হলে গোয়েন্দা বিভাগকে বাদ দিয়ে শুধু ওই তিন জনের ঘাড়েই বা দায় চাপানো কেন? কেন ঘটনাস্থল ঘিরে রাখার সেই তৎপরতা আগে দেখা গেল না?’’
লালবাজারের কর্তারা কেউই মন্তব্য করতে নারাজ। পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল আগেই বলেছেন, ‘‘যদি মনে করেন গাফিলতি আছে, তা হলে আছে।’’ কিন্তু সেই গাফিলতির দায় কার? প্রশ্ন পুলিশের সমস্ত স্তরেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy