What is enemy property act what is the relation between saif ali khan and 15 thousand crore property dgtl
Saif Ali Khan’s ‘enemy property’ case
খারাপ সময় কাটছেই না নবাবের! ১৫ হাজার কোটির সম্পত্তি হারাবেন সইফ? কী এই ‘এনিমি প্রপার্টি’?
নবাব পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি কী ভাবে দখল নেবে সরকার? কারণ মধ্যপ্রদেশের ভোপালে থাকা এই বিপুল পরিমাণ ভূ-সম্পত্তিকে শত্রু সম্পত্তি বা ‘এনিমি প্রপার্টি’ বলে ঘোষণা করেছে সরকার।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১২:৫৫
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২০
সময়টা মোটেই ভাল যাচ্ছে না নবাব সইফ আলি খানের। ঘরে, বাইরে নানা সমস্যায় জর্জরিত পটৌদীর নবাব। ছুরির ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি নিয়ে আইনি জটিলতার মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। অনুরাগীদের মতে, দুঃসময় পিছু ছাড়ছে না অভিনেতার।
০২২০
গত সপ্তাহেই তাঁর বাড়িতে মধ্যরাতে হামলা করে এক দুষ্কৃতী। চুরির উদ্দেশ্য নিয়ে শরিফুল নামের এক ব্যক্তি ঢুকে পড়েছিলেন। সইফ বাধা দিতে গেলে তাঁর উপর চড়াও হন শরিফুল। ছ’বার ছুরিকাঘাতে রক্তাক্ত করেন অভিনেতাকে। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি ফিরেছেন সইফ।
০৩২০
শারীরিক চোট সামলে উঠতে না উঠতেই পারিবারিক সম্পত্তি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলি অভিনেতা ও তাঁর পরিবার। সংবাদমাধ্যমের সূত্র বলছে, ভোপালের প্রাক্তন শাসকদের মালিকানাধীন সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে পায় পটৌদী পরিবার। সেই ১৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির ভাগ্য এখন অনিশ্চিত বলে মনে করছেন অনেকেই।
০৪২০
অনিশ্চয়তার কারণ কী? কারণ শীঘ্রই এই সম্পত্তির মালিকানা চলে যেতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। নবাব পরিবারের ব্যক্তিগত সম্পত্তি কী ভাবে দখল নেবে সরকার? কারণ মধ্যপ্রদেশের ভোপালে থাকা এই বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তিকে ‘শত্রু সম্পত্তি’ বা ‘এনিমি প্রপার্টি’ বলে ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় সরকার।
০৫২০
কী এই ‘শত্রু সম্পত্তি’ বা ‘এনিমি প্রপার্টি’ আইন? মূলত দু’টি দেশকে শত্রু দেশ বলে ভারত সরকার, পাকিস্তান ও চিন। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর এ দেশে ‘এনিমি প্রপার্টি অ্যাক্ট, ১৯৬৮’ তথা ‘শত্রু সম্পত্তি আইন’ চালু করা হয়।
০৬২০
সেই আইনে বলা হয়েছে, যে সব ব্যক্তি বা পরিবার পাকিস্তানে বা চিনে পাড়ি জমিয়েছেন, তাঁদের রেখে যাওয়া স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসাবে চিহ্নিত হবে। পরবর্তী কালে বেশ কয়েক বার এই আইনে সংশোধনী এনে এই ধরনের সম্পত্তিতে সরকারের অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়।
০৭২০
২০১৭ সালে সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘শত্রু সম্পত্তি’গুলির প্রকৃত মালিক পাকিস্তান বা চিনে চলে যাওয়ার পর তাঁদের উত্তরাধিকারীরা এই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে পারবেন না। ‘শত্রু সম্পত্তি’ ভারত সরকারের অধীনে চলে আসবে এবং সরকারি অনুমোদন ছাড়া হস্তান্তর, বিক্রি বা বিচ্ছিন্ন করা যাবে না।
০৮২০
এই আইনের পরিধি শুধু জমি এবং ভবনের মতো স্থাবর সম্পত্তির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। শেয়ার, অলঙ্কার এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মতো অস্থাবর সম্পত্তিও এর অন্তর্ভুক্ত। পরিসংখ্যান বলছে, পাকিস্তানে চলে যাওয়া পরিবারের ৯২৮০টি ও চিনে চলে যাওয়া ৯২৬টি ‘শত্রু সম্পত্তি’ চিহ্নিত করেছে সরকার।
০৯২০
২০২০ সালে অমিত শাহের নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রিসভা এই ধরনের সম্পত্তিগুলিকে পর্যবেক্ষণ করা শুরু করে। এই সম্পত্তিগুলি থেকে সরকারের প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে মনে করা হয়। এই সম্পত্তিগুলির মূল্য নির্ধারণের পর তা নিলামে চড়াবে সরকার। কোনও কোনও ক্ষেত্রে সরকার চাইলে তা সংরক্ষণ করতে পারে বলে সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে।
১০২০
ভোপালের ১৫ হাজার কোটি টাকার ভূসম্পত্তি কার হাত যাবে সেই নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, সেই সম্পত্তি পটৌদী পরিবারের মালিকানাধীন হল কী ভাবে? পটৌদীর নবাব পরিবার ও সইফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে ভোপালের এই রাজপরিবারের।
১১২০
বেগম সুলতানের ছেলে ভোপালের শেষ নবাব হামিদুল্লাহ খান। উত্তরাধিকার সূত্রে এই সম্পত্তি ভোপালের শেষ মহিলা নবাব সুলতান জাহানের থেকে পেয়েছিলেন তাঁর একমাত্র পুত্র এবং উত্তরসূরি নবাব হামিদুল্লাহ। তাঁর তিন কন্যার মধ্যে সাজিদা সুলতানের সঙ্গে বিবাহসূত্রে আবদ্ধ হন সইফের ঠাকুরদা নবাব ইফতিকার আলি খান পটৌদী। সেই সূত্রে ভোপালের নবাব হামিদুল্লাহের প্রপৌত্র সইফ।
১২২০
ভোপালের রাজপরিবারের প্রথম সন্তান আবিদা ১৯৫০ সালে পাকিস্তান পাড়ি দেন। মেজো মেয়ে সাজিদা সুলতান পটৌদীর পরিবারের রাজবধূ হয়ে ভারতেই থেকে যান।
১৩২০
হামিদুল্লাহের প্রথম সন্তান আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে যাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ইফতিকার আলি খান পটৌদীর স্ত্রী সাজিদার হাতে চলে আসে গোটা সম্পত্তি। বংশানুক্রমিক ভাবে তা মনসুর আলি খান ও সবশেষে শর্মিলা, সইফ ও তাঁর বাকি দুই বোনের মধ্যে ভাগ-বাঁটোয়ারা করে দেওয়া হয়।
১৪২০
সইফ আলি খান এবং তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিগুলির মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাগ স্টাফ হাউস, নূর-উস-সাবাহ প্যালেস, ভোপাল ও ভোপালের বাইরে কয়েকশো একর জমি।
১৫২০
২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে, ‘কাস্টোডিয়ান অফ এনিমি প্রপার্টি ইন ইন্ডিয়া’ এক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বলে, নবাব ও তাঁর পরিবারের উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তিগুলো ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। কারণ নবাবের প্রথম উত্তরাধিকারী আবিদা সুলতান পাকিস্তানে চলে গিয়েছিলেন।
১৬২০
২০১৫ সালে ওই সম্পত্তি অধিগ্রহণের সিদ্ধান্তে স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি সেই স্থগিতাদেশ তুলে নিয়েছে মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট।
১৭২০
বিচারপতি বিবেক আগরওয়াল জানিয়ে দেন, ২০১৭ সালের সংশোধিত ‘শত্রু সম্পত্তি আইনে’ ৩০ দিনের মধ্যে ওই সম্পত্তির দাবি করতে পারে কেন্দ্র। ভোপালের যে বিপুল সম্পত্তি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে, সেই সম্পত্তি নিজেদের হাতে রাখতে চাইলে পটৌদী পরিবারের পক্ষ থেকে আবার আবেদন জানাতে হবে ‘শত্রু সম্পত্তি’র কাস্টডিয়ান অফিসে।
১৮২০
যদিও ২০১৯ সালে আদালত জানিয়েছিল, সাজিদা সুলতান ওই সম্পত্তির বৈধ উত্তরসূরি। সেই সূত্রে সেই সম্পত্তিতে সইফ আলি খানের অংশ রয়েছে।
১৯২০
২০২৪ সালের ১৩ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের নির্দেশের পরে পটৌদী পরিবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনে থাকা মুম্বইয়ের ‘শত্রু সম্পত্তি’র কাস্টোডিয়ান অফিসে আবেদন করে।
২০২০
সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, সইফের উপর সাম্প্রতিক ছুরিকাঘাতের ঘটনার ফলে আদালতের কাছে আবেদনের সময়সীমা বৃদ্ধির অনুরোধ করেছেন সইফের আইনজীবী।