Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪

‘দাজু, পপু আউন্দাইছ’ শুনে, জুতো ফেলেই ছুট

পুলিশ যে আসতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিল ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত গুরুঙ্গের। তাই মোর্চার বৈঠক কোথায় করবেন, তা নিয়েও সংশয়ের জাল ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

ডাইনিং হলের দরজা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে এক শাগরেদ বলে উঠলেন—‘দাজু, পপু (পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ) আউন্দাইছ’। তাড়াহুড়োয় চেয়ার উল্টে গেল। জুতো পর্যন্ত পরার জন্যও সময় নষ্ট করতে চাননি মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। ভেস্তে গেল বৈঠক। খালি পায়ে ছুটে বেরিয়ে যান ঘর থেকে। সিকিমের নামচির মাঝিটাঁড়ে অতিথি নিবাসের পিছনের গেট দিয়ে ছুটে চা বাগানের আড়ালে চলে যান। মোটরবাইক নিয়ে সেখানে লুকিয়ে ছিলেন তাঁর এক সঙ্গী। তাতে বসেই কয়েক কিলোমিটার নীচে নেমে একটি গাড়িতে উঠে ফের দ্বিতীয় ডেরায় চলে যান গুরুঙ্গ। সেই ডেরার হদিস করতে রাত পর্যন্ত পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।

পুলিশ যে আসতে পারে, সেই আশঙ্কা ছিল ইউএপিএ ধারায় অভিযুক্ত গুরুঙ্গের। তাই মোর্চার বৈঠক কোথায় করবেন, তা নিয়েও সংশয়ের জাল ছড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। মোর্চার অন্দরের খবর, প্রথমে ঠিক হয়েছিল, দার্জিলিং থেকে সিকিমের রাস্তায় মাঝিটাঁড়ের কাছে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক হবে। সেই মতো অনেকে সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু বেলা বাড়তে স্থির হয়, বৈঠক হবে সিকিমের নামচি থানার অদূরে মাঝিটাঁড়ে। দু’টো জায়গার নাম এক। তাই পুলিশ গোড়ায় সংশয়ে পড়েও। কিন্তু পরে পুলিশ, সিআইডি ও গোয়েন্দা অফিসাররা নিশ্চিত হন, নামচির মাঝিটাঁড়ের এক অতিথি নিবাসেই সভা হবে। সেই মতো দুপুর গড়াতেই হানা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আরও পড়ুন: নারদ ‘অপারেশন’-এর যাবতীয় খরচ তাঁরই দেওয়া

বেলা ১২টায় সেখানে প্রথমেই কেন দলবিরোধী কাজের অভিযোগে বিনয় তামাঙ্গ, অনীত থাপাকে দল থেকে বহিষ্কার করা দরকার, তা নিয়ে লম্বা বক্তৃতা দেন গুরুঙ্গ। পরে ১২ সেপ্টেম্বর উত্তরকন্যায় কোন ৫ জনকে পাঠানো হবে, তা নিয়ে সবে বলতে শুরু করেছিলেন গুরুঙ্গ। সে ঘোষণা আর হয়ে ওঠেনি।

রাতে দিল্লি থেকে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি বলেন, ‘‘গণতান্ত্রিক মিটিঙে পুলিশ কেন হানা দেবে, সেটাই তো বুঝতে পারছি না। তবে উত্তরকন্যার বৈঠকে আমাদের তরফে কয়েক জনকে পাঠানো হবে। আজ তালিকাটা হয়নি। সময় আছে। হয়ে যাবে।’’

মোর্চা সূত্রে জানা গিয়েছে, পুলিশ যে সুযোগ পেলেই তাঁকে গ্রেফতার করবে, সেটা বুঝেই গুরুঙ্গ প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে পালিয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাতে দার্জিলিঙের মাঝিটাঁড় থেকে সিকিমের মাঝিটাঁড়ে চলে যান তিনি। সূত্রের খবর, পর দিন কয়েক দফায় আলোচনা করেন অনুগামীদের সঙ্গে। দিল্লির সঙ্গেও কথা বলেছেন। কিন্তু, তেমন সাড়া যে পাননি। এরপর মাঝিটাঁড়ে পুলিশের হানার পরে তিনি কোথায় যেতে পারেন, সেটাই এখন প্রশ্ন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE