Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
R G Kar Medical College And Hospital Incident

খুন এবং ধর্ষণ করা হয়েছে কোথায়, সেমিনার রুম না অন্য কোথাও? শয্যার নীচেই তার! ‘ক্রাইম স্পট’ সাজানো?

ময়না তদন্তে মৃত্যুর কারণ: নাক-মুখ চেপে, গলা টিপে শ্বাসরোধ, যা খুনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। একই সঙ্গে যৌনাঙ্গে যে আঘাত রয়েছে, তাতে যৌন অত্যাচারের প্রমাণ মিলেছে।

আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে হাওড়া ময়দান থেকে মন্দিরতলা পর্যন্ত বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী ও এলাকার সাধারণ মানুষের মিছিল।

আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদে হাওড়া ময়দান থেকে মন্দিরতলা পর্যন্ত বিভিন্ন কলেজের ছাত্রছাত্রী ও এলাকার সাধারণ মানুষের মিছিল। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ অগস্ট ২০২৪ ০৭:৩৭
Share: Save:

সেমিনার রুম না কি অন্য কোথাও?

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণ করা হয়েছে কোথায়? এই নিয়ে প্রশ্ন ঘুরছে নানা মহলে। বর্তমানে এই ঘটনার তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই গোয়েন্দারাও এ নিয়ে সংশয়ী বলে সূত্রের খবর। জানা গিয়েছে, তরুণীকে ডাকতে এসে এক জন নাকি ফিরে গিয়েছিলেন, তরুণী ঘুমোচ্ছেন মনে করে। প্রশ্ন উঠছে, যে অবস্থায় তরুণীর দেহ উদ্ধার হয়েছে, সেমিনার রুম-এ পোডিয়ামের উপর পড়ে থাকা তরুণীর যে ছবি ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে ঘুরছে এবং ময়না তদন্তের রিপোর্টে যে ধরনের আঘাত তরুণীর শরীরে মিলেছে বলে জানা যাচ্ছে, তাতে এমন কাউকে দেখে, তিনি ঘুমিয়ে রয়েছেন মনে হতে পারে? এই বক্তব্যের আড়ালে অন্য কোনও সত্য ঢাকার চেষ্টা হচ্ছে না তো, প্রশ্ন উঠছে।

সেমিনার রুম-এ দরজা থেকে ঢুকেই সোজাসুজি সাদা বোর্ড টাঙানো। তার নীচে লাল পোডিয়াম। সামনে পর পর চেয়ার পাতা। পোডিয়ামের উপরেই সাদা বোর্ডের নীচে আলোয় এক্স-রে রিপোর্ট ধরে দেখার বাক্স। সেই বাক্সের ধার ঘেঁষেই নীল কাপড়ে ঢাকা শয্যা মেঝেতে পাতা। তার পাশেই উঁচু কাঠের বেঞ্চ। এই দুইয়ের মাঝখানেই পড়ে ছিল মৃতদেহ। দু’পা ছড়ানো ছিল দু’দিকে। একটি পা শয্যার বাইরে। লাল রঙের একটি কম্বল আলগোছে ফেলা ছিল তরুণীর গায়ে। মাথার চুল ছিল খোলা। উর্ধ্বাঙ্গের পোশাক ছেঁড়া। নিম্নাঙ্গের পোশাক পড়ে ছিল পোডিয়ামের মেঝেতে। এক জোড়া জুতো পড়ে ছিল মৃতদেহের পাশেই।

মৃতদেহের একটি হাত এমন ভাবে কপালের উপর রাখা ছিল, যা দূর থেকে এক ঝলক দেখলে মনে হতে পারে, কেউ ঘুমিয়ে আছেন। তাতেই নাকি বুঝতে ভুল হয়েছিল! কিন্তু এই বয়ান ঘিরেই এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। কারণ, সেমিনার রুমের দরজা থেকে পোডিয়াম যে দূরত্বে সেখান পর্যন্ত না পৌঁছে কার্যত কাউকে ডাকা সম্ভব নয়। কাছে গিয়ে ডাকলে ওই অবস্থায় দেখে মনে হওয়ার কথা নয় যে ঘুমাচ্ছেন। প্রশ্ন উঠছে, যিনি ডাকতে এসেছিলেন, তিনি কি দরজায় দাঁড়িয়ে এক বার দেখেই ফিরে গিয়েছিলেন? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘুমোচ্ছেন ভেবে ফিরে যাওয়া চিকিৎসক নাকি দাবি করেছিলেন, মৃতদেহের সামনেই যেহেতু পোডিয়ামের উপরে বেঞ্চটা রাখা ছিল, তাই তিনি বেঞ্চের আড়াল থেকে শুধু মৃতদেহের কপালের উপরে রাখা হাতটাই দেখেছিলেন। প্রশ্ন উঠছে, পোডিয়ামের উপরে বেঞ্চটি কি তবে ইচ্ছে করেই এমন ভাবে রাখা হয়েছিল, যাতে দরজা থেকে মৃতদেহ কিছুটা আড়াল করা যায়? এই প্রশ্ন কি পুলিশি তদন্তে উঠে আসেনি?

ডাক্তারদের একাংশের দাবি, ওই ভাবে কপালে হাত রাখা অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে বুঝতে হবে ঘুমের মধ্যেই মারা গিয়েছেন। মৃত্যুর সময়ে কিছু টের পাননি। তা হলে মৃতদেহে এত আঘাতের চিহ্ন থাকার কথা নয়। সে ক্ষেত্রে ধর্ষণের তত্ত্বও দাঁড়ায় না। কারণ, কাউকে ধর্ষণ করা হলে তিনি প্রতিরোধ করবেনই। এ ক্ষেত্রেও যে প্রতিরোধের চিহ্ন মিলেছে ময়না তদন্তের রিপোর্টে। তা হলে কি খুনের পর পরই তরুণীর হাত ওই ভাবে রেখে দেওয়া হয়েছিল? প্রশ্ন উঠছে, অন্য কোথাও খুন-ধর্ষণ করে মৃতদেহ সেমিনার রুম-এ রেখে গোটাটাই সাজিয়ে ফেলা হয়নি তো!

এখানেই সিবিআই গোয়েন্দা সূত্রে একটি আশঙ্কার দিক উঠে আসছে। প্রথমে জানা গিয়েছিল, হাসপাতালের চতুর্থ তলে যেখানে সেমিনার রুম, সেখানে চিকিৎসকদের বিশ্রামের জন্য বিকল্প কোনও জায়গা নেই। বাস্তবে দেখা গিয়েছে, ওই তলেই এমন ঘর আছে, চিকিৎসকেরা যেখানে বিশ্রাম নেন। এর মধ্যেই ওই তলে একটি ঘর ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় প্রশ্ন আরও জোরালো হয়। তবে কি সেই ঘরেই কিছু ঘটেছিল? তার পরে সেমিনার রুম-এ মৃতদেহ এনে রাখা হয়েছে? আন্দোলনকারীদের একাংশের প্রশ্ন, সেই প্রমাণ লোপাট করতেই কি ঘর ভাঙা হচ্ছিল?

প্রশ্ন রয়েছে, মৃতদেহে যেখানে পাওয়া গিয়েছিল সেই অবস্থান ঘিরে। সেমিনার রুম-এ অন্য ভাল শয্যা থাকা সত্ত্বেও কেউ কেন পোডিয়ামে, ধুলো ভরা মেঝেতে শুতে যাবেন? শুলেও পোডিয়ামে একেবারে দেওয়ালের গা ঘেঁষে কেন বিছানা পাতবেন? সেখানে শুতে সমস্যা হওয়ার কথা! সমস্যা হবে পাশ ফিরতেও! তরুণী যে বিছানায় ছিলেন, তার নীচ দিয়েই গিয়েছে বিদ্যুতের তার। যা যুক্ত হয়েছে একটি সুইচ বোর্ডে। সেটিও পোডিয়ামের উপরেই তরুণীর শয্যার ঠিক পাশে পড়ে। কেউ কি জেনেবুঝে বিদ্যুতের তারের উপর বিছানা পাতবেন? প্রশ্ন সেখানেও। উত্তর খুঁজছে সিবিআই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy