—প্রতীকী ছবি।
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আজ, মঙ্গলবার উপস্থিত হতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আগেই নোটিস পাঠিয়েছে ইডি। কিন্তু নিজের এক্স-হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ঘোষণা করেছিলেন যে, ৩ অক্টোবর দিল্লিতে পূর্বনির্ধারিত রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকায় ওই হাজিরা দিতে পারবেন না তিনি। কিন্তু তার পরে কলকাতা হাই কোর্টে বিচারপতি অমৃতা সিংহকে বলতে শোনা গিয়েছে, ৩ অক্টোবর যেন তদন্তের কাজ কোনও মতেই ব্যাহত না হয়। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবী মহল থেকে রাজনীতির অলিন্দ— সর্বত্র প্রশ্ন, অভিষেক শেষ পর্যন্ত ‘না আসার’ সিদ্ধান্তে অটল থাকলে, কী করবে ইডি? এই দিনে যে ‘তদন্তের কাজে ভাটা পড়েনি’, তা পরবর্তী শুনানির দিনে বিচারপতির সামনে কী ভাবে তুলে ধরবে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি? তদন্তের অন্য কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, অভিষেককে অন্য দিন তলব— হাজারো সম্ভাবনার কথা শোনা যাচ্ছে আদালত চত্বরেকান পাতলেও।
ইডি সূত্রে খবর, অন্তত সোমবার বিকেল পর্যন্ত তদন্তে না আসার কথা জানিয়ে কোনও ই-মেল বা চিঠি তাদের কাছে আসেনি। এক ইডি-কর্তার কথায়, ‘‘সমাজমাধ্যমে কিছু লেখা তো আর আমরা গ্রাহ্য করতে পারি না। না আসতে পারলে, সরাসরি তা জানানোই দস্তুর। একান্তই আসতে না পারলে, এ ক্ষেত্রেও নিশ্চয় তা করা হবে।’’ নিয়োগ দুর্নীতিতে নাম জড়ানো লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের সিইও হিসেবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে অভিষেককে। সেই সিইও-র তরফে গরহাজিরার চিঠি এলে, তার পরে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করা হবে বলে তাঁর দাবি।
রাজনীতির প্যাঁচে সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তেও কোন দিকে বাঁক নেয়, তা আগাম আঁচ করাশক্ত। হয়তো সেই কারণে পোড়খাওয়া আইনজীবীদের কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু সর্বসমক্ষে ঘোষণা করেছেন, তাই মঙ্গলবার ইডি-র দফতরে অভিষেকের হাজির না-হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। কিন্তু তবু যতক্ষণ সে কথা চিঠি বা ই-মেলে না জানাচ্ছেন, ততক্ষণ একশো শতাংশ নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
কিন্তু শেষমেশ যদি অভিষেক না যাওয়ার কথাই জানিয়ে দেন? সে ক্ষেত্রে কী করতে পারে ইডি?
আইনজীবীদের একাংশের দাবি, তদন্ত ব্যাহত না হওয়ার যে কথা বিচারপতি সিংহকে আদালতে বলতে শোনা গিয়েছে, তা তাঁর পর্যবেক্ষণ। লিখিত নির্দেশে নেই। আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, অভিষেকের হাজিরা সে দিনের জন্য মকুব করলে ইডি-কে কোর্টে একই সঙ্গে বোঝাতে হবে যে, তাতে সে দিন তদন্তের ব্যাঘাত ঘটেনি।
গত শুনানিতে ইডি-র তদন্তকারী অফিসারকে সরিয়ে দেওয়ার পরে আদালতে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি জানিয়েছে, ১০ অক্টোবরের মধ্যে তারা বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেবে। আইনজীবীদের একাংশের মতে, সেই রিপোর্ট জমা দেওয়ার আগে অভিষেককে এক বার অন্তত জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে ইডি। তা ছাড়া, ৩ থেকে ১০ অক্টোবরের মধ্যে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের দুই ডিরেক্টর অমিত ও লতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (অভিষেকের বাবা-মা) ডেকে এমনিতেই জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা। ফলে, ১০ অক্টোবর আদালতে ইডি কী রিপোর্ট জমা দেয়, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে।
ইডির ডাকে অভিষেকের না আসা নিয়ে আইনজীবী তথা সিপিএম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘অভিষেক রাজনৈতিক কার্যকলাপের প্রেক্ষিতে চিঠি দিয়ে তদন্তকারী সংস্থার কাছে সময় চাইতেই পারেন। তদন্তকারী সংস্থা ফের তাঁকে তলব করতে পারে অথবা কড়া আইনি পদক্ষেপ করতে পারে।’’ আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণের মতে, ‘‘তদন্তকারী অফিসার যদি মনে করেন যে, অভিযুক্ত কিংবা সাক্ষী তলব এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং তদন্তের স্বার্থে তাঁকে হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন, একমাত্র তবেই তিনি গ্রেফতার হতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে উল্টো দিকে পাল্টা যুক্তি উঠতেই পারে যে, আগেও তলবে সাড়া দেওয়া হয়েছে। তাই তলব এড়ানোর উদ্দেশ্য নেই।’’
তলব এবং তার প্রেক্ষিতে হাজিরা নিয়ে সরাসরি মন্তব্য না করলেও, অভিষেকের কৌঁসুলি সঞ্জয় বসু বলেন, ‘‘তদন্তকারীদের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা অভিষেক করেছেন। যে ধরনের নথি চাওয়া হয়েছে, দিয়েছেন। ভবিষ্যতে চাইলেও দেওয়া হবে। সাংসদ হিসেবে তাঁর কর্তব্যে বাধা দিতেই অতিসক্রিয় ইডি তাঁকে ২৭ সেপ্টেম্বর নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে।... বারবার সুপ্রিম কোর্ট বলার পরেও... তদন্ত এমন পথে চালিত করার চেষ্টা হচ্ছে, যাতে অভিষেককে দোষী প্রমাণ করা যায়।’’ অথচ আদালতেই অভিষেকের বিরুদ্ধে ইডির হাতে কোনও তথ্যপ্রমাণ না থাকার কথা স্বীকার করা হয়েছে বলে তাঁর দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy