আক্রান্ত অভিজিৎ সরকার। বরাহনগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে। —নিজস্ব চিত্র।
সামান্য কেবল ব্যবসায়ী থেকে মাত্র কয়েক বছরে রাজনীতির ছত্রচ্ছায়ায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ ‘বাহুবলী’! প্রোমোটার নিগ্রহে মূল অভিযুক্ত অভিজিৎ মণ্ডল ওরফে রানার উত্থান কার্যত উল্কার গতিকেও হার মানাবে। প্রোমোটারকে মারধরের ঘটনায় নাম জড়ানো শুধু নয়, কাশীপুর এলাকায় সিন্ডিকেট চালানো থেকে শুরু করে তোলাবাজি, হুমকি—একাধিক অভিযোগে তার নাম সামনে আসছে বলে পুলিশ মেনে নিচ্ছে।
শনিবার রাতে রানা ও তার দুই সঙ্গী জিতেন পাল এবং কানোয়ালজিৎ শীকে গ্রেফতার করে কাশীপুর থানার পুলিশ। শুক্রবার রাতে কাশীপুরের রাজেন্দ্র রায়চৌধুরী লেনে প্রোমোটার অভিজিৎ সরকারকে মারধরের অভিযোগে রানা এবং তার সঙ্গীদের নাম জড়ায়। পাঁচ লক্ষ টাকা না-দেওয়ায় অভিযুক্ত রানা সদলে রাতের অন্ধকারে প্রোমাটারের অফিসে ঢুকে তাঁকে মারধর এবং ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। প্রোমাটারের অফিসের সিসি ক্যামেরায় হামলার ছবি ধরা পড়ে। অভিযুক্তেরা এলাকার বিধায়কের নাম করে বলেও অভিযোগ। হামলার অভিযোগের তদন্তে নেমে রবিবার সকালে নতুন করে গ্রেফতার করা হয় আরও তিনজনকে। ধৃত তিন জনের নাম সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়, মনু পাণ্ডে, বিশাল দেব। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ছ’জনের বিরুদ্ধে তোলাবাজি, চুরি, মারধর, ভাঙচুর, হুমকি ইত্যাদি ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ধৃতদের এ দিন শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয়। তবে ধৃতদের আইনজীবীরা এটা কোনও তোলাবাজির ঘটনা নয় বলে দাবি করেন। আদালতে তাঁরা দাবি করেন, “আক্রান্ত এবং অভিযুক্তরা বন্ধু। নিজেদের ভিতরে ঝামেলাকেই তোলাবাজি বলে চালানো হচ্ছে।” ধৃতদের ১৮ জুলাই পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক। এ দিকে ঘটনার পর থেকে আক্রান্ত প্রোমোটার সিঁথির একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। রবিবার তাঁর অবস্থায় উন্নতি হলেও এখনও হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
প্রোমোটারের সঙ্গীদের আরও অভিযোগ, আগেও একাধিকবার টাকা নিয়েছিল অভিযুক্ত রানা। কখনও রাজনৈতিক কর্মসূচির নাম করে, কখনও এলাকার কোনও কাজের কারণ দেখিয়ে টাকা নিয়ে যেত রানা এবং তাঁর দলবল। তাঁদের দাবি, রাজেন্দ্র রায়চৌধুরী লেনে নির্মীয়মান বহুতল তৈরির শুরু থেকে নানা ভাবে বাধা দিতে চাইছিল রানা। অভিযুক্ত রানা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ইমারত সামগ্রী সরবরাহ করতে চেয়েছিল। কিন্তু প্রোমোটার রাজি হননি। তা নিয়ে একটা ক্ষোভ ছিল। প্রোমোটারের এক সঙ্গী তাপস মজুমদার বলেন, “মূলত টাকা আদায় করাই ছিল লক্ষ্য। আমাদের কাজে ওকে কোনও ভাবে ঢুকতে না দেওয়ায় শেষে ভাড়াটেকে সামনে রেখে টাকা আদায়ের চেষ্টা করে। কিন্তু তাতেও কাজ না হওয়ায় হামলা চালায়।”
জানা গিয়েছে, এলাকায় কেবল ব্যবসা চালালেও গত কয়েক বছরে শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে ক্রমশ অন্য মূর্তি ধরে রানা। ইদানিং একাধিক ‘প্রভাবশালী’র ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল সে। সেই সুযোগ নিয়েই সে কেবল ব্যবসার সঙ্গে প্রোমোটিং এবং সিন্ডিকেটের ব্যবসায় হাত পাকাচ্ছিল বলে অভিযোগ। বিধায়ক অতীন ঘোষ যদিও রানাকে চিনতেন বলে স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে এই ঘটনার পিছনে তাঁর কোনও রকম যোগ নেই বলে জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “আমাকে বদমান করার চেষ্টা হচ্ছে। আমি কি গুন্ডা মস্তান, যে আমার নামে লোকজন তোলা দেবে? সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।” অতীন আরও বলেন, “আমি কাউকে টাকা তুলতে বলিনি। আমার নাম করে কেউ যদি টাকা তোলে, তা হলে আমি চ্যালেঞ্জ করে বলছি, তার সর্বোচ্চ পর্যায়ে তদন্ত হোক। কারণ, আমার নাম করে টাকা তোলা মানেই এই নয় যে, আমি কাউকে টাকা তুলতে বলেছি। কাশীপুরে অসাধু চক্র তৈরি হয়েছে। রানাকে আমি ভাল ছেলে বলেই জানতাম। এ বার পুলিশতদন্ত করুক।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy