তিন রাজ্যে জয় পেয়ে উল্লসিত বাংলার বিজেপি শিবির। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
রবিবার বেলা সাড়ে ১০টা নাগাদ এক বিজেপি নেতা বললেন, ‘‘ছত্তীসগঢ়ও তো আমাদের হয়ে যাবে মনে হচ্ছে! এতটা তো ভাবতেও পারিনি।’’ বিকেল ৪টে নাগাদ এক তৃণমূল নেতা বললেন, ‘‘যা হল, তাতে যারা ভিতরে (জেলে) তাদের আর বেরোতে হচ্ছে না! আরও কেউ কেউ না ভিতরে ঢুকে যায়।’’
চার রাজ্যের বিধানসভা ভোটের ফলাফলে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি এমন উল্লাস এবং বিষাদে মেশা। বিজেপি শিবির ইতিমধ্যেই উল্লসিত। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দুপুরেই চলে যান দক্ষিণ দিনাজপুরের বোল্লা কালীমন্দিরে। জানান, তিন রাজ্যে বিধানসভা ভোটে জয়ের জন্যই পুজো দিতে যাচ্ছেন। দিলীপ ঘোষ দুপুরের পর থেকেই নানা মিম এবং নরেন্দ্র মোদীর জয়গানের ভিডিয়ো ক্লিপ হোয়াটস্অ্যাপে ‘শেয়ার’ করতে শুরু করে দেন। আর বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতেই বলেন, ‘‘বাংলায় এ বার সাঁড়াশি আক্রমণ চলবে!” আরও বলেন, ‘‘দেশদ্রোহীরা পরাস্ত হয়েছে। জিতেছে রাষ্ট্রবাদ। বাংলাতেও রাষ্ট্রবাদী শক্তি জিতবে। প্রথমে ২০২৪-এর ভোটে। আর তার পরে ২০২৬ সালে বাংলা থেকে হাওয়া হয়ে যাবে তৃণমূল।”
এর জবাবও দিয়েছে তৃণমূল। দলের রাজ্য সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের পরেও বাংলায় এমন লম্ফঝম্ফ করেছিল বিজেপি। কিন্তু বাংলার মাটি কতটা শক্ত, সেটা অমিত শাহেরা বুঝতে পেরেছেন। বাংলায় ওদের ভোট নেই। মনে রাখতে হবে কংগ্রেস আর তৃণমূল এক নয়। বিজেপিকে বাংলায় ফের ঘোল খাইয়ে ছাড়বে জোড়াফুল। কোনও এজেন্সি ওদের জেতাতে পারবে না।”
তবে এটা অনস্বীকার্য যে, তৃণমূলের অন্দরে ‘এজেন্সি’ নিয়ে একটা উদ্বেগ তৈরি হয়েছে তিন রাজ্যে বিজেপির জয়ের পর। রাজ্য বিজেপি বরাবরই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলি কেন বেশি বেশি করে ‘সক্রিয়’ হচ্ছে না, সেই প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। এখন সেটা আরও বাড়তে পারে। আবার বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বও চাইতে পারেন ইডি-সিবিআই এ রাজ্যে আরও ‘সক্রিয়’ হোক। তৃণমূল শিবিরের একাংশের আশঙ্কা, সরকারি ভাবে না হলেও ‘রাজনৈতিক নির্দেশ’ পেতে পারে ওই দুই সংস্থা। শাসক শিবিরের এক নেতার কথায়, ‘‘গত কয়েক মাস ধরে মোদী, শাহরা পাঁচ রাজ্যের ভোট নিয়ে মেতে ছিলেন। এখন লোকসভা নির্বাচনের জন্য ঝাঁপাবেন। এই জয়ের পরে শুধু তৃণমূল নয়, সব বিরোধী দলের উপরেই এজেন্সি দিয়ে আক্রমণ বাড়াবে বিজেপি।’’
অনেকেই বলেন, দিল্লির বিজেপি আর বাংলার বিজেপি একেবারে আলাদা দুটো দল। দিল্লির বিজেপি যে অপ্রতিরোধ্য গতিতে হিন্দিবলয়ের একের পর এক রাজ্যে ঝাণ্ডা পুঁতছে, তার কোনও ‘প্রভাব’ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি উপর পড়ছে, এমন দৃষ্টান্ত নেই। লোকসভা নির্বাচনের আগে এ রাজ্যে বিজেপির সংগঠন নড়বড়ে। জেলায় জেলায় গোষ্ঠীকোন্দল, রাজ্য নেতৃত্বের মধ্যে মতপার্থক্য এবং অনেক পুরনো কর্মীর বসে যাওয়া দলকে চিন্তায় রেখেছে। তবে হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যেই ‘অপ্রত্যাশিত’ জয়ের পরে বিজেপি সে সব ‘ঘাটতি’ কাটিয়ে উঠতে পারে বলে দলের একাংশের আশা। অনেকের মতে, লোকসভা ভোটের সমীকরণ আলাদা। এক নেতার কথায়, ‘‘ওটা মোদীজির ভোট! ২০১৯ সালের মতোই ২০২৪ সালেও আমাদের ফল খুব ভাল হবে।’’ ওই দাবি থেকে স্পষ্ট, তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের মতোই এ রাজ্যেও লোকসভা ভোটে বিজেপির বড় ভরসা ‘মোদী হাওয়া’। পাঁচ বছর আগে ১৮ আসন পাওয়া বিজেপি এ বারেও সেই হাওয়ায় গা ভাসাতে চায়।
কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বকেয়া টাকা দিচ্ছে না বলে অনেক দিন ধরেই সরব তৃণমূল তথা নবান্ন। টাকা বন্ধ করে দেওয়া প্রকল্পের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে রাজ্যে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছেন। টাকা আদায়ের দাবি নিয়ে দিল্লি থেকে কলকাতায় আন্দোলন সংগঠিত করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার তিন রাজ্য জয় করে বিজেপি কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা নিয়ে আরও ‘কড়া অবস্থান’ নিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন
এই তিন অস্বস্তির মধ্যেও একটি ‘স্বস্তি’ থাকতে পারে তৃণমূলের জন্য। রাজস্থানে প্রচারে গিয়ে মোদী বলেছিলেন, ‘‘তিন ডিসেম্বর, কংগ্রেস ছুমন্তর।’’ তিন রাজ্যের ভোটে বিপর্যয়ের পরে কংগ্রেস বাংলায় জোটসঙ্গী হিসাবে তৃণমূলের সঙ্গে ‘দর কষাকষি’র জায়গায় থাকবে না। মমতার প্রস্তাব মেনে নিতে হবে তাদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy