বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। ছবি: ফেসবুক।
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে ‘শূন্য’ হয়ে যাওয়ার পর তৎকালীন সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছিলেন, ‘‘তৃণমূল এবং বিজেপিকে এক করে দেখা ঠিক হয়নি। বিজেমূল স্লোগান দেওয়াও ভুল হয়েছিল।’’ তার পর থেকে বঙ্গ সিপিএম নিজেদের অভিধান থেকে ‘বিজেমূল’ শব্দটি বাদ দিলেও দুই ফুলকে এক করে দেখার রাস্তা থেকে সরেনি। জাতীয় স্তরে যতই জোট হোক, সেই রাস্তা থেকে যে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট সরছে না, তা বুধবার আরও এক বার স্পষ্ট করতে চাইলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পাশাপাশিই, দলের নিচুতলায় ‘ইন্ডিয়া’-র সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সীতারাম ইয়েচুরির উপস্থিতি নিয়ে যে ‘বিভ্রান্তি’ তৈরি হয়েছে, কাটাতে চাইলেও তা-ও। বুধবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির দু’দিনের বৈঠক শেষ হয়েছে। তার পরে সাংবাদিক বৈঠকে সেলিম বলেন, ‘‘বেঙ্গালুরুতে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে, তার স্তবক ধরে ধরে দেখিয়ে দেওয়া যাবে, দেশে বিজেপি যা যা করছে, বাংলায় তৃণমূল সেটাই করছে!’’ আগে সিপিএম নেতারা আকছার বলতেন, তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে ‘সেটিং’ রয়েছে। বুধবার সেই শব্দবন্ধ উচ্চারণ না করলেও সেলিম বলেন, ‘‘পঞ্চায়েতে তৃণমূল ভোট লুট করেছে নিজেরা জেতার জন্য এবং বিজেপিকে দ্বিতীয় করার জন্য।’’সংসদে বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ইন্ডিয়া’ অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে। প়ৃথক ভাবে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে তেলঙ্গনার শাসকদল ভারত রাষ্ট্র সমিতিও। কিন্তু ভোটাভুটির পরিস্থিতি হলে তৃণমূল কী করবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন সেলিম। সিপিএম পলিটব্যুরোর সদস্য সেলিম বলেন, ‘‘এনআরসি, সিএএ, বিচারপতিদের ইমপিচমেন্ট— কোনও ইস্যুতেই ২৪ বছরে তৃণমূল ভোট দেয়নি। এড়িয়ে গিয়েছে। এ বার কী করবে, সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।’’
যার জবাবে তৃণমূল নেতা তথা বরাহনগরের বিধায়ক তাপস রায় বলেছেন, ‘‘সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ঠিক করে দেবেন না, আমরা কোন পথে চলব। সেটা আমাদের সংসদীয় দল ঠিক করবে।’’ বুধবার সেলিম নাম না করে নিশানা করেন তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কেও। তাঁর কথায়, ‘‘লোকসভায় তৃণমূলের দলনেতা রোজভ্যালিকাণ্ডে ভুবনেশ্বর থেকে জেল খেটে এসেছেন। তাঁকে যাতে আর জেলে যেতে না হয়, তার চেষ্টা তিনি করেই যান। যখনই বিরোধীরা এককাট্টা হন, তখনই তিনি সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে ইস্যু ঘুরিয়ে দেন।’’ যদিও এ নিয়ে তাপস কোনও মন্তব্য করতে চাননি। অনেকের মতে, তৃণমূলের অভ্যন্তরে সুদীপ-তাপস সমীকরণের কারণেই তাপস এই বিষয়টি নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে চাননি।
আক্রান্তদের পাশে নেতৃত্ব
সিপিএম রাজ্য কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের যে কর্মী-সমর্থকেরা মার খেয়েছেন, যাঁদের বাড়িঘর ভাঙচুর হয়েছে, তাঁদের পাশে দাঁড়াবেন দলের রাজ্য নেতারা। অনেকের মতে, দলের নিচুতলায় যাতে ক্ষোভ না তৈরি হয়, সেটাই নিশ্চিত করতে চাইছে মুজফ্ফর আহমেদ ভবন। তা ছাড়া, লোকসভা ভোটের আগে ‘নিরাপত্তা’র অভাবে যাতে কর্মীরা বিজেপির দিকে সরে না যান, তারও চেষ্টা করছে সিপিএম।
পঞ্চায়েতের তথ্য সংগ্রহ
সেলিম বুধবার দাবি করেন, বহু জায়গায় পঞ্চায়েত ভোটের ব্যালটে হিসাবের গরমিল রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘যা বাক্সে ঢুকেছে, কোথাও তার চেয়ে বেশি ব্যালট বেরিয়েছে! আবার কোথাও কম। ইনপুট আর আউটপুট এক নয়।’’ এ বিষয়ে নিচুতলা থেকে আরও তথ্য সংগ্রহ করবে সিপিএম।
প্রধান বিচারপতির কাছে দরবার
বাংলায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে ও দোষীদের গ্রেফতারির দাবিতে এপ্রিল-মে মাসে রাজ্য জুড়ে এক কোটি সই সংগ্রহের কর্মসূচি নিয়েছিল সিপিএম। সূত্রের খবর, উত্তরবঙ্গের বহু জেলা সেই সাংগঠনিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি। তবে সেলিমের দাবি, সেই কাজ করা গিয়েছে। আগামী শুক্রবার সংগৃহীত সমস্ত সই নিয়ে দেশের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের সঙ্গে দেখা করবে সিপিএমের প্রতিনিধি দল। তাতে থাকবেন আইনজীবী তথা দলের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য, কৃষত নেতা হান্নান মোল্লা এবং দলের পলিটব্যুরোর সদস্য নীলোৎপল বসু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy