তাঁর কীর্তি অনেক!
আট বছর আগে দক্ষিণ ২৪ পরগনার লেদার কমপ্লেক্স থানার ওসি-কে মারধোর করেছিলেন। তবে খবরের শিরোনামে এসেছিলেন ২০১২ সালের ২৪ এপ্রিল ভাঙড় কলেজের এক শিক্ষিকাকে জগ ছুড়ে মেরে। সেখানেই থামেননি কীর্তিমান! ২০১৩-র ৬ জানুয়ারি কাঁটাতলায় রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী রেজ্জাক মোল্লার উপর হামলা করেন তিনি। সে যাত্রা গ্রেফতার হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে ভাঙড়ে তাঁর দাপট কমেনি। কিছু দিন আগেই ভাঙড়-২ নম্বর ব্লকের কাশীপুর থানায় গিয়ে হম্বিতম্বি করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু কী পুলিশ, কী তাঁর দল কেউই ভাঙড়ের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামের রাশ টানেনি। শনিবার ভাইফোঁটার দিনে ভাঙড়ের বেঁওতা গ্রামে দলেরই দুই কর্মীর খুনের ঘটনার পরে তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে, এর পরেও কি আরাবুল বহাল তবিয়তে থাকবেন?
কালীঘাটে এ দিন দলের নেতা ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাইফোঁটা দিচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই পর্ব মিটতে নেত্রীর উপস্থিতিতেই নেতাদের কেউ কেউ ভাঙড়ের প্রসঙ্গ তোলেন। আর কত দিন আরাবুলের দাপট সহ্য করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বিস্তারিত আলোচনায় যাননি বলেই দলীয় সূত্রের খবর।
তবে তৃণমূলেরই আর একটি সূত্র দাবি করছে, প্রকাশ্যে কিছু না বললেও আরাবুলের উপরে অবশেষে ক্ষুব্ধ হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, কোনও রকম শিথিলতা না দেখিয়ে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি, মুকুল রায়কে তিনি দলীয় স্তরে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। দলের এই অংশের মতে, কিন্তু সারদা-কাণ্ড, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনার পর দলের ভাবমূর্তি যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে, তাতে ভাঙড়ের ঘটনার পরে আর যে চুপ করে বসে থাকা যাবে না, সেটা বুঝতে পেরেছেন দলনেত্রী।
ফলে যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে ‘গুরু’ বলে মানেন আরাবুল, সেই পার্থবাবুই এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেছেন, “এটি খুবই গুরুতর ঘটনা। নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও মা-মাটি-মানুষের দল তৃণমূলের ভাবমূর্তি যদি কারও জন্য কালিমালিপ্ত হয়, তবে তিনি যে-ই হোন তাঁকে ছাড়া হবে না। কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে সরাসরি আরাবুলের নাম বা দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে তিনি কিছু বলেননি।
তৃণমূল সূত্রের খবর, এ দিনের ঘটনার পরে, দলের নেতা ‘ত্রয়ী’ পার্থ-মুকুল-সুব্রত বক্সী কিছুটা উদ্বিগ্ন। বিব্রত। যদিও শেষ পর্যন্ত আরাবুলের বিরুদ্ধে আদৌ কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, বা হলেও তা কতটা কড়া হবে, তা নিয়ে দলের একটা বড় অংশই সংশয়ে। তার একটা কারণ যদি হয় আরাবুলের সাংগঠনিক দক্ষতা, তা হলে অন্য কারণ হল দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে তাঁর দহরম মহরম। পার্থবাবুকে ‘গুরু’ মানলেও দলীয় স্তরে তদন্তের ভার মমতা যাঁকে দিয়েছেন বলে খবর, সেই মুকুলবাবুর সঙ্গেও যথেষ্ট সুসম্পর্ক আরাবুলের। সমস্যায় পড়লেই তপসিয়ার তৃণমূল ভবনের একতলার বাঁ দিকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ঘরে হাজির হতেন তিনি।
আবার ভাঙড়ে ভোট করাতে আরাবুলেরই মুখাপেক্ষী তৃণমূল নেতৃত্ব। সিপিএমের সঙ্গে সমানে সমানে লড়াই করে ওই এলাকায় তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করেছেন তিনি। হয়ে উঠেছেন দলের শেষ কথা। দলের এক বর্ষীয়ান নেতা জানান, আরাবুল ভাঙড়-২ নম্বর ব্লকের নেতা হয়েও এক নম্বর ব্লকে খবরদারি করতেন। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতারা বিষয়টি কানে তোলেননি। ওই নেতার কথায়, “আমাদের এক নেতা তো বলেই দিলেন, লোকসভায় যাদবপুর কেন্দ্রের মধ্যে ভাঙড় থেকে ৬০ হাজার ভোটে লিড এসেছে আরাবুলের জন্য। যে গোরু দুধ দেয় তার চাট তো খেতেই হবে!”
সুতরাং গত আট বছর ধরে কীর্তির পর কীর্তি করে রেকর্ড গড়া আরাবুলের দৌড় এ বারেও থামবে কি না বলা মুশকিল!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy