প্রতীকী ছবি।
মরণে বহু হয়ে ওঠেন অঞ্জনা ভৌমিকেরা। আবার পরিবারের বাধায় সেই সুযোগ হাতছাড়াও হয়ে যায় অনেকের। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সাফল্যের দিনে সেই অভিজ্ঞতার নিরিখে সচেতনতা বৃদ্ধির উপরে জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা।
হাওড়া-উদয়নারায়ণপুরের বাসিন্দা অঞ্জনা ভৌমিকের (৪৯) ‘ব্রেন ডেথ’ ঘোষণা করা হয় মঙ্গলবার। হাওড়ার এক বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক মৃতার পরিবারের সদস্যদের অঙ্গদানের প্রস্তাব দেওয়া মাত্র তাঁরা রাজি হয়ে যান। পরের দিন, বুধবার এসএসকেএম হাসপাতালে ওই মহিলার হৃদ্যন্ত্র প্রতিস্থাপিত হয় এক যুবকের শরীরে। তাঁর দু’টি কিডনি পান মুর্শিদাবাদের এক তরুণী বধূ এবং এক প্রৌঢ়। লিভার পেয়েছেন বারাসতের এক প্রৌঢ়া। চার অঙ্গ গ্রহীতারই শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল।
বুধবারেই একবালপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে এক তরুণীর ব্রেন ডেথের পরে তাঁর পরিবারকে অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করার প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যান চিকিৎসকেরা। কিন্তু ওই পরিবারকে রাজি করানো যায়নি বলে স্বাস্থ্য ভবনের খবর। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় ওই তরুণীর। তাঁর বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের যোগ্য কি না, তার জন্য দু’টি পরীক্ষা হয়। তার পরেও পরিবারের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত হাল ছেড়ে দেয় হাসপাতাল।
বৃহস্পতিবার মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে মৃত এক রোগিণীর পরিবারকেও বোঝানোর চেষ্টা চলে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি ও বাপের বাড়ির মধ্যে এক পক্ষ অঙ্গদানে রাজি থাকলেও অন্য পক্ষ সায় দেয়নি। দু’পক্ষের টানাপড়েনের ফল শেষ পর্যন্ত কী হয়েছে, তা জানা যায়নি।
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলেন, ‘‘একবালপুরের ক্ষেত্রে পরিবার রাজি হলে অঞ্জনাদেবীর মতোই ওই তরুণী অনেক জীবনে বেঁচে থাকতেন।’’ তাই অঙ্গদান নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির রাস্তায় আরও অনেক হাঁটতে হবে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। অঞ্জনাদেবীর স্বামী সন্তোষ ভৌমিক বলেন, ‘‘গ্রামের মানুষ বাড়িতে এসে হাত মেলাচ্ছেন। প্রচুর পরিচিতের ফোন পেয়েছি। পরিজনের মৃত্যু দুঃখের। কিন্তু আপনার প্রিয়জন অনেকের মধ্যে বেঁচে থাকবেন, সকলে তাঁকে মনে রাখবে— এটা ভেবেই সকলের অঙ্গদানে এগিয়ে আসা উচিত।’’
পশ্চিমবঙ্গে অঙ্গদানের খতিয়ান যে আদৌ সন্তোষজনক নয়, একটি পরিসংখ্যানেই তা স্পষ্ট। জানুয়ারিতে দু’টি অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পরে বুধবারেই প্রথম রাজ্যের কোনও পরিবার অঙ্গদানে সম্মত হল। পরিসংখ্যানের নিরিখে যা মোটেই সন্তোষজনক নয়। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসকদের মতে, সমস্যা চিহ্নিত করে এগোতে না-পারলে পরিসংখ্যান বদলানো সম্ভব নয়। হৃদ্রোগের চিকিৎসক তাপস রায়চৌধুরী জানান, অঙ্গদান প্রক্রিয়ার অনেক স্তর। মৃতের পরিবারের আস্থা অর্জন করে অঙ্গদানে উদ্বুদ্ধ করা সহজ নয়। কাউন্সেলিংয়ে গলদ থাকলে পরিবারের সম্মতি পাওয়া কঠিন হয়। ‘‘অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা রোগীর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করার ঝক্কি নিতে চান না। সেটাও সমস্যা। ‘ডোনার মেনটেন্যান্স কস্ট’ বা অঙ্গ প্রতিস্থাপনের খরচ কে দেবে, তার উত্তর না-পেয়ে অনেক সময় বেসরকারি হাসপাতালগুলি পিছিয়ে আসে,’’ বলছেন তাপসবাবু।
স্বাস্থ্য ভবনের খবর, প্রতি মাসে বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক করছেন স্বাস্থ্য দফতরের চিকিৎসক-আধিকারিকেরা। সরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বক্তব্য, প্রতি মাসে রাজ্যে ব্রেন ডেথের সংখ্যা কত, সরকারি স্তরে সেই তথ্য থাকা উচিত। ব্রেন ডেথ ঘোষণার ক্ষেত্রে সমস্যা, নাকি সচেতনতার অভাব— ওই তথ্য থাকলে সেটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। ‘‘ব্রেন ডেথের তথ্যপঞ্জি তৈরির চেষ্টা চলছে। বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক করে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ডোনার মেনটেন্যান্স কস্ট নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে। আসল কথা হল, অঙ্গদানকে অভ্যাসে পরিণত করতে হবে,’’ বলেন স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy