Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Political Violence

প্রাক্ নির্বাচনী আবহে চিন্তা রাজনৈতিক ‘হিংসা’

বুধবার নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ বেঞ্চ রাজ্যে পৌঁছনোর পরে বিষয়টি রাজনৈতিক মহলের চর্চায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০২১ ০৫:১৪
Share: Save:

নির্বাচনের এখনও মাস তিনেক বাকি থাকলেও প্রচারের সঙ্গে রাজনৈতিক হিংসার উত্তাপও তৈরি হয়েছে রাজ্যে। বিজেপি সভাপতি জে পি নড্ডার কনভয়ে অশান্তি থেকে শুরু করে পর পর বেশ কয়েকটি গোলমালের ঘটনায় চাপানউতোর শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে। বুধবার নির্বাচন কমিশনের সম্পূর্ণ বেঞ্চ রাজ্যে পৌঁছনোর পরে বিষয়টি রাজনৈতিক মহলের চর্চায় বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

যে কোনও নির্বাচনেই এ রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার নজির রয়েছে। সেই ধারা কি এ বারও বজায় থাকবে? ইতিমধ্যেই একাধিক জেলায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের কারণে এই প্রশ্নটি সামনে চলে এসেছে। এখনও পর্যন্ত যে সব ঘটনা ঘটেছে, তাকে অবশ্য মোটেই উদ্বেগজনক বলতে নারাজ শাসক তৃণমূল। কিন্তু বিজেপি আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলে এখনই আধাসামরিক বাহিনী মোতায়েনের দাবি তুলেছে। এই প্রেক্ষাপটেই নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরাও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট দফতর ও আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গিয়েছে।

রাজনৈতিক হিংসার সূত্রে একাধিক বার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ও। এ নিয়ে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ছাড়াও একাধিক পুলিশকর্তার রিপোর্টও তলব করেছেন তিনি। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকায় বার বার প্রকাশ্যে নিজের হতাশারা কথাও জানিয়েছেন তিনি।

শাসক দল তৃণমূল অবশ্য মনে করে, পরিকল্পনা করেই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তোলার মতো পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মূর্খও বুঝবে, কোনও শাসক দলই এই রকম হিংসার পরিবেশ চাইবে না। কারণ তাতে রাজ্যের স্বাভাবিক প্রশাসনিক কাজ বিঘ্নিত হবে।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নিজেদের প্রশানসিক ক্ষমতা ব্যবহার করে, বিপুল অর্থ খরচ করে রাজ্যে অশান্তির ছবি তৈরি করতে চাইছে বিজেপি। আর তাতে কোথাও প্রত্যক্ষ, কোথাও অপ্রত্যক্ষ মদত করছে কংগ্রেস ও বামেরা।’’ রাজ্যপালের অভিযোগ সম্পর্কে পার্থবাবু বলেন, ‘‘রাজ্যপাল হিসেবে নয়, এ রাজ্যে এসে থেকে তিনি বিজেপি নেতার ভূমিকা পালন করছেন। তাই আলাদা করে তাঁর মন্তব্যের কোনও গুরুত্ব নেই।’’

ঘোষিত নির্বাচনী প্রচার না হলেও গত মাসেই বিজেপি সভাপতির একটি কর্মসূচিতে অশান্তি হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ড হারবারে। তাঁর কনভয় আক্রমণ করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের তরজার পাশাপাশি প্রশাসনিক স্তরেও কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে বিবাদ চলে।

শিলিগুড়িতে বিজেপির উত্তরকন্যা ঘেরাও অভিযান ঘিরে উত্তরবঙ্গে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল আগেই। তার পরেও কোচবিহারে একাধিক হিংসার ঘটনায় জড়িয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি সমর্থকেরা। শুভেন্দু অধিকারী-সহ কয়েক জন নেতার দলত্যাগের পরে দুই মেদিনীপুরেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিজেপি ও তৃণমূল পরস্পরের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে। এই রকম অশান্তি হয়েছে নন্দীগ্রাম, সবংয়েও।

সম্প্রতি দক্ষিণ কলকাতায় বিজেপির একটি মিছিল ঘিরেও মুদিয়ালির কাছে সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। ইট ছোড়াছুড়ি হয় খাস কলকাতায়। বিজেপির সেই মিছিলে দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, শুভেন্দু, কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তার পর পূর্ব মেদিনীপুরে খেজুরিতে বিজেপির সভার দিনও তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই দলের একাধিক কর্মী আহত হয়েছেন। উত্তেজনা তৈরি হয়েছে কাঁথিতেও।

পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, তৃণমূল-বিজেপি দু’পক্ষের মিছিলেই শোনা যাচ্ছে ‘গোলি মারো..’ স্লোগান। মঙ্গলবার দক্ষিণ কলকাতায় তৃণমূলের মিছিলের পর এ দিন একই ভাবে সেই ‘গোলি মারো..’ স্লোগান শোনা গিয়েছে চন্দননগরে বিজেপির মিছিলে। সেই মিছিলে ছিলেন শুভেন্দু ও স্থানীয় সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। তৃণমূলের মহাসচিবের মতে, ‘‘সর্বত্র প্ররোচনা তৈরি করছে বিজেপি। তবে তৃণমূলের কর্মীদের বলছি, কোথাও সেই প্ররোচনায় পা দেবেন না। তা হলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক সাফল্যকে আড়াল করে বিজেপির অপপ্রচারে সুবিধা হবে।’’

এই পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাজ্যপালের সঙ্গে ফের দেখা করে হিংসার পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে এসেছেন বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায়। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। জে পি নড্ডা, দিলীপ ঘোষ-সহ বিজেপির নেতা-মন্ত্রীদের উপর হামলা হচ্ছে। ৩৫৬ ধারা জারি ছাড়া উপায় নেই। রাজ্যপালকে সব বলেছি। এর প্রতিকার চাই।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘শাসক দল যখন রাজনৈতিক নিরাপত্তার অভাব বোধ করে, তখন এই রকম হিংসার মধ্য দিয়ে জোর করে টিকে থাকতে চায়। রাজ্যের মানুষের পুলিশের উপরে কোনও আস্থা নেই। কারণ পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ। তাই আমরা চাই দ্রুত কেন্দ্রীয় বাহিনী এসে দায়িত্ব নিক। তবেই মানুষ আশ্বস্ত হবে।’’ আর ‘গোলি মারো...’ স্লোগান নিয়ে রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমাদের দল এই অশালীন শব্দবন্ধকে সমর্থন করে না। কার মিছিল। কোথায় মিছিল, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হল, বিজেপির পতাকা হাতে নিয়ে এই স্লোগান দেওয়া অন্যায় হয়েছে।’’ এ কথা বললেও তৃণমূলের ‘গোলি মারো...’ স্লোগানের সঙ্গে নিজের দলের কর্মীদের ওই স্লোগানের পার্থক্য দেখানোর চেষ্টা করেছেন শমীকবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘তৃণমূল থেকে যাঁরা বিজেপিতে এসেছেন, তৃণমূল নেতৃত্ব তাঁদের নাম করে করে গদ্দার বলে চিহ্নিত করেছেন। তার পর ওই স্লোগান উঠেছে। আর আমাদের কর্মীরা বলেছেন দেশের গদ্দারদের গোলি মারো। দুটো মেলানো ঠিক নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Assembly Election 2021 Political Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy