Advertisement
২০ জানুয়ারি ২০২৫
Sanjay Roy Punishment

‘একা সঞ্জয়ের ফাঁসি শোনালেও সন্তুষ্ট হতাম না’, লড়াই চালিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন চিকিৎসকেরা

শাস্তিদান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখা। তারা মনে করছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া উচিত।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা এখনও মনে করছেন, আরজি করের ঘটনায় সঞ্জয় একা দোষী নন।

আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা এখনও মনে করছেন, আরজি করের ঘটনায় সঞ্জয় একা দোষী নন। — ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:১৯
Share: Save:

আরজি কর-কাণ্ডে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে দোষী সাব্যস্ত করে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছে শিয়ালদহ কোর্ট। তবে তাঁকে ফাঁসির শাস্তি দিলেও সন্তুষ্ট হতে পারতেন না বলেই জানাচ্ছেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকেরা। তাঁরা এখনও মনে করেন, আরজি কর-কাণ্ডে সঞ্জয় একা দোষী নন। বাকিদের চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে শাস্তি না-দেওয়া পর্যন্ত সন্তুষ্ট হবেন না বলেই জানিয়েছেন তাঁরা। সিবিআই এবং কলকাতা পুলিশের আঁতাঁত রয়েছে বলেও অভিযোগ করেন। পাশপাশি এ-ও জানিয়ে দিলেন, নির্যাতিতার জন্য বিচার চেয়ে লড়াই তাঁরা এগিয়ে নিয়ে যাবেন। শাস্তিদান নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)-এর রাজ্য শাখা মনে করছে, এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়া উচিত।

ডাক্তারদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ডক্টর্স ফোরাম’-এর সদস্য পুণ্যব্রত গুণ জানান, শিয়ালদহ আদালত সঞ্জয়কে ফাঁসি দিলেও তিনি খুশি হতে পারতেন না। আন্দোলনকারী এই চিকিৎসকের দাবি, আরজি করের ঘটনায় জড়িয়ে রয়েছেন আরও অনেকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা সন্তুষ্ট নই। ফাঁসির সাজা শোনালেও সন্তুষ্ট হতাম না। তখনই সন্তুষ্ট হতাম, যখন ধর্ষণ, খুনের পিছনে আরও যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা চিহ্নিত হয়ে শাস্তি পাবেন। কেবল সঞ্জয় ছিল না, প্রথম থেকে বলে আসছি। এখনও বলেই যাব।’’

একই সুর শোনা গিয়েছে আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার আসফাকুল্লা নাইয়ার গলায়। তিনি দাবি করেছেন, যত দোষী রয়েছেন, সকলকে প্রকাশ্যে আনা হোক। এই রায়কে ‘পূর্ণাঙ্গ বিচার’ বলেও মনে করছেন না বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারী এই চিকিৎসক। সোমবার বিচারক পর্যবেক্ষণে জানিয়েছেন, তিনি এই ঘটনাকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলে মনে করছেন না। তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আসফাকুল্লা। তাঁর কথায়, ‘‘রায়ের সমালোচনার অধিকার সকলের রয়েছে। সেই অধিকার থেকে বলছি, সারা পৃথিবীতে আরজি করের ঘটনা বিরলতম। পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেছে বলে মনে করি না। নিজের কর্মস্থলে জীবন বাঁচানোর জন্য কাজ করছিলেন এক চিকিৎসক। সেখানে তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে।’’ তিনি এ-ও দাবি করেছেন, এই ঘটনা সকলের মনে ভয় তৈরি করেছে। সকলে ভাবছেন, হাসপাতালে এ রকম হলে হাটে, বাজারে কী হবে? তার পরেই তিনি বলেন, ‘‘বিরলতম ঘটনার ক্ষেত্রে এই শাস্তি ছোট বলে মনে করি।’’

গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে মিলেছিল চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ। তার পর থেকে আন্দোলনে নেমেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। সেই দলে ছিলেন আসফাকুল্লাও। শাস্তি ঘোষণার পরে তিনি জানিয়েছেন, তাঁদের এই লড়াই আপাতত থামছে না। তাঁর কথায়, ‘‘এই যুদ্ধ মাঝপথে ছাড়ার যুদ্ধ নয়। এই লড়াই ভবিষ্যতে উদাহরণ হয়ে থাকবে। যাঁরা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছেন, তাঁরাও এই বিচার মানতে পারবেন না। অভয়াদের জন্য উদাহারণ তৈরি করতে গেলে এখানে থামলে চলবে না।’’

চিকিৎসকদের সংগঠন সার্ভিস ডক্টর্স ফোরাম (এসডিএফ)-এর সাধারণ সম্পাদক চিকিৎসক সজল বিশ্বাস দাবি করে বলেছেন, ‘‘পাঁচ জনের ডিএনএ পাওয়া যাচ্ছে অভয়ার শরীরে। অথচ সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করা হল। বাকি চার জনের কথা উল্লেখ করা নেই। সন্দীপ ঘোষ, অভিজিৎ মণ্ডলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জশিট না দিয়ে সিবিআই জামিনে সাহায্য করেছে।’’ এর পরেই সজল বলেন, ‘‘এই রায় পক্ষপাতদুষ্ট। ১৭ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হচ্ছে আদালতের তরফে। এটা লজ্জাজনক। প্রহসনে পরিণত হল। আগামী দিনে আরও অভয়াকাণ্ড হবে।’’ কেন্দ্র এবং রাজ্যের মধ্যে যোগসাজশ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘কেন্দ্র-রাজ্যের গটআপের মতো সিবিআই কলকাতা পুলিশও যোগসাজশ করেছে। সে কারণে সিবিআই পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে রিপোর্ট দিতে পারল না।’’ আর এক চিকিৎসক প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘একটা মাতাল সিভিককে বাঁচাতে পুলিশ প্রশাসন উঠে পড়ে লাগল কেন? আরও কাউকে হালকা সাজা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হল কি! রায়কে তীব্র ভাবে ধিক্কার জানাই।’’ রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চ আদালতে যাওা উচিত বলে জানিয়েছে আইএমএর রাজ্য শাখা। ওই শাখার সম্পাদক শান্তনু সেন জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই ঘটনা সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসি চেয়েছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

RG Kar Rape and Murder Case IMA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy