অর্জুন সিংহকে দেখতে হাসপাতালে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। সোমবার। নিজস্ব চিত্র
ভাটপাড়ার ঘটনা নিয়ে রাজ্য রাজনীতি সরগরম হল সোমবার। আহত বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংহকে দেখতে হাসপাতালে গেলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। শাসক দল ও রাজ্য প্রশাসনকে পরোক্ষে বিঁধে মন্তব্যও করলেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাল তৃণমূল। পাশাপাশি, রাস্তায় নামল বিজেপি। বিক্ষোভের জের গড়াল বিধানসভাতেও। আর অশান্তির জন্য সাংসদ অর্জুন এবং তাঁর বিধায়ক পুত্র পবন সিংহকে সরাসরি দায়ী করলেন রাজ্যের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত সিংহ।
রাজ্যপাল এ দিন অর্জুনকে দেখার পরে বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শান্তির পরিবেশ প্রয়োজন। হিংসার প্রয়োজন নেই। আমাদের আইনের শাসন এবং শান্তিতে বিশ্বাস রেখে হিংসা পরিহার করা উচিত।’’ যার প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়ের মন্তব্য, ‘‘এর বাইরে রাজ্যপালের কাছে আর কীই বা প্রত্যাশিত? তবে যাঁরা রাজ্যপাটে আছেন, তাঁদের মনে রাখা উচিত, উত্তরপ্রদেশ, কাশ্মীরের মতো রাজ্যেও পুলিশ আছে এবং তাদের ভূমিকাও সবাই দেখছেন। কিন্তু সেখানে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তাঁদের কারও মুখে কোনও কথা শোনা যায় না।’’
ভাটপাড়া-কাণ্ডের প্রতিবাদে এ দিন রাজ্যের জেলায় জেলায় পুলিশ সুপারের দফতরে বিক্ষোভ দেখায় বিজেপি। ব্যারাকপুরে তাদের ডাকা এ দিনের ১২ ঘণ্টার বন্ধে দিনভর অশান্তিও হয়। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বন্ধ ভাঙতে পুলিশ সর্বশক্তি প্রয়োগ করেছে। আমাদের একাধিক কর্মী আহত। বিরোধীদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে।’’ জুন মাসে সন্দেশখালিতে অশান্তির শিকার হন দুই বিজেপি কর্মী প্রদীপ মণ্ডল ও সুকান্ত মণ্ডল এবং নিখোঁজ হন দলের আর এক কর্মী দেবদাস মণ্ডল। ওই ঘটনার সিবিআই তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শ্য়ামবাজারে এ দিন অবস্থান করে বিজেপি। প্রদীপের স্ত্রী পদ্মা মণ্ডল-সহ নিহতদের পরিজনেরা সেখানে যোগ দেন। ওই মঞ্চে ভাটপাড়া-কাণ্ড-সহ রাজনৈতিক হানাহানির প্রেক্ষিতে দিলীপবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘পুলিশ এবং গুন্ডা দিয়ে বিজেপিকে দমাতে পারছেন না বুঝে মুখ্যমন্ত্রী এখন জঙ্গলমহলের মাওবাদীদের সাহায্য নিচ্ছেন। জঙ্গলমহলে গিয়ে প্রাক্তন নকশাল, মাওবাদীদের সঙ্গে তিনি যে বৈঠক করেছেন, তার তথ্য আমাদের কাছে আছে। উনি চাইলে দিয়ে দেব।’’
ভাটপাড়ার প্রসঙ্গ এ দিন বিধানসভায় টেনে বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের আব্দুল মান্নান অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্যের ও কেন্দ্রের শাসক দল উস্কানিমূলক মন্তব্য করে হিংসাত্মক রাজনীতিতে মদত দিচ্ছে। ভাটপাড়ার মতো ঘটনাগুলি মোকাবিলায় ব্যর্থ রাজ্য সরকার।’’ অন্য দিকে, রাজ্যের এডিজি (আইন-শৃঙ্খলা) জ্ঞানবন্ত ভাটপাড়ার রবিবারের ঘটনার দায় অর্জুন এবং পবনের উপর চাপিয়ে বলেন, ‘‘পুলিশের অনুরোধ না শুনে তাঁরাই নেতৃত্ব দিয়ে গোলমাল পাকান। মজদুর ভবনের ছাদ থেকে পুলিশের উপর ইট-বোমা ছোড়া হয়। কোনও উপায় না দেখে পুলিশ শেষ পর্যন্ত উন্মত্ত জনতাকে সরাতে লাঠিচার্জ করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটায়। পুলিশ কমিশনারকে প্রাণে বাঁচতে শূন্যে গুলি চালাতে হয়। পুলিশ ধৈর্য ও সংযম না দেখালে আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারত।’’ তাঁর আরও মন্তব্য, ‘‘পরিকল্পনা করেই পুলিশের উপর হামলা চালানো হয়েছে। তদন্তে দোষ প্রমাণিত হলে কেউ ছাড় পাবেন না।’’
কী করে অর্জুনের মাথা ফাটল, তা নিয়ে বিতর্ক জারি ছিল এ দিনও। পুলিশের দাবি, তাদের নিশানা করে বিজেপির লোকেদের ছোড়া ইটেই মাথা ফেটেছে অর্জুনের। যখন অর্জুনের মাথা ফাটে, তখন পুলিশ তাঁর ধারে-কাছেই ছিল না। পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা বলেন, “পুলিশ সাংসদের উপরে লাঠি চালায়নি।”
একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এ দিন আনন্দবাজার পত্রিকার হাতে এসেছে। সেই ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, বেলা ১১.৫০-এ অর্জুনের বাড়ি মজদুর ভবন থেকে এক এক করে অল্প বয়সি কয়েক জন মুখে রুমাল বেঁধে রাস্তা টপকে উল্টো দিকের গলিতে ঢুকে পড়লেন। কিছু ক্ষণের মধ্যেই আরও কয়েক জনকে মজদুর ভবন থেকে বেরোতে দেখা গেল। তাঁদের হাতে প্লাস্টিকের ব্যাগ ছিল। সঙ্গে সঙ্গেই দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেল। ফাঁকা হয়ে গেল রাস্তা। মজদুর ভবনের উল্টো দিকের গলি আবার ঘুরপথে যেখানে ওই রাস্তায় এসে মিশেছে, মিনিট দুয়েকের ব্যবধানে সেখানে বোমা পড়তে শুরু করল। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে পর পর চারটি বোমা পড়ল তৃণমূলের একটি অফিসের সামনে। সেখান থেকে মজদুর ভবনের দূরত্ব বড়জোর ৪০ মিটার। তার পরেই ওই অল্প বয়সিদের উল্টো দিকের গলি থেকে ফের মজদুর ভবনে ঢুকতে দেখা যায়। পুরো পর্বটিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মজদুর ভবনের সামনে দেখা গিয়েছে।
আনন্দবাজার অবশ্য ওই ফুটেজের সত্যতা যাচাই করেনি। পুলিশ জানিয়েছে, এমন একটি ফুটেজের কথা তারা জানে। ভাটপাড়ার বিধায়ক পবন বলেন, “পুলিশ সব সময় মিথ্যাই বলে। এমন ঘটনার কথা আমার জানা নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy