—প্রতীকী ছবি।
পূর্ব বর্ধমানে পঞ্চায়েতের তিন স্তর মিলিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফয়সালা হতে চলেছে ৭৪৭টি আসনে। বাঁকুড়ায় ৭৪৫টি আসনে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৫২৫টি আসনে।
মনোনয়ন জমার পর্ব শেষ। তার পরে পঞ্চায়েতের তিন স্তর মিলিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে উঠে এসেছে এমনই তথ্য। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই সব ক’টি ক্ষেত্রেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের শিরোপা উঠতে চলেছে শাসক দলের মাথায়। এখানেই অবশ্য শেষ নয়। আরও কয়েকটি জেলা থেকেও বিনা দ্বন্দ্বে ফয়সালার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু আসনে। বিরোধীদের অভিযোগ, একই সঙ্গে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপও দেওয়া হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে। এর মধ্যেই কয়েক জন বিরোধী প্রার্থী নাম প্রত্যাহার করেছেন। আশঙ্কা করা হচ্ছে, গোটা পর্ব ধরেই এই প্রক্রিয়া চলবে। তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগই উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, বিরোধীরা প্রার্থী করার মতো লোক পাচ্ছে না। যাঁদের কোনও ‘প্রলোভন’ দেখিয়ে আনা হচ্ছে, তাঁরাও দ্রুত সরে যাচ্ছেন বিরোধীদের পাশ থেকে।
মনোনয়ন প্রত্যাহারের সব থেকে বড় ঘটনাটি বীরভূমের নানুরে, কাজল শেখের খাসতালুকে। সম্প্রতি দলে গুরুত্ব বেড়েছে কাজলের। প্রশাসন সূত্রে খবর, তৃণমূলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মারধরের অভিযোগ উঠলেও গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি মিলিয়ে ২৩৯টি আসনের মধ্যে বিরোধীরা মোট ৬৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার বিরোধীরা গ্রাম পঞ্চায়েতের ১৫টি এবং পঞ্চায়েত সমিতির চারটি আসনে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন। বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি (বোলপুর) সন্ন্যাসীচরণ মণ্ডল এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক গৌতম ঘোষ জানান, শাসক দলের সন্ত্রাসের ভয়ে ওই প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। বিরোধীদের কটাক্ষ, কাজল যে বলেছিলেন, অনুব্রত মণ্ডল তাঁর গুরু, সেটা সত্যি হয়ে গেল। কাজলের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রলোভন দেখিয়ে কিংবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে অনেককে প্রার্থী করেছিল বিরোধীরা। তাঁরা এখন স্বেচ্ছায় মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। না হলে জেলা পরিষদে আমার বিরুদ্ধে প্রার্থী আছেন কী করে?’’
প্রত্যাহারের চাপ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই। উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের রূপমারি পঞ্চায়েতের দু’টি বুথে দুই সিপিএম প্রার্থীকে মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। আমডাঙা, দেগঙ্গা, বারাসত ১ ও ২ ব্লকে সিপিএম, বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি পঞ্চায়েতে ৫০ শতাংশের কম আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে। সিপিএম ও বিজেপির দাবি, যাঁরা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন, তাঁদেরও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের বেলেগাছি পঞ্চায়েতে বিজেপি প্রার্থীর স্বামীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে।
শনিবার হুগলির গোঘাট-১ ব্লকের ভাদুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী গোবিন্দ কোটাল মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘আজ এক বালি-মফিয়া গাড়িতে তুলে ব্লক অফিসের সামনে নিয়ে যায়। মনোনয়ন তুলতে বাধ্য হলাম। লিখতে হল, স্বেচ্ছায় তুলছি।’’ আরামবাগ ব্লকের তিরোল, গৌরহাটি ১ ও ২ এবং সালেপুর ২ পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থীদের মনোনয়ন তুলে নিতে শাসক দলের লোকেরা হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ।
জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর, বারোপেটিয়ায় বিজেপি প্রার্থীদেরও মনোনয়ন তুলতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। এক বিজেপি প্রার্থীর দাবি, “আমাকে রবিবার ডেকে পাঠিয়েছে তৃণমূল নেতারা। না গেলে, বাড়িতে আসবে বলে শাসিয়েছে। দলকে জানিয়েছি।”
বীরভূমের ইলামবাজারের একাধিক গ্রামে বিজেপি প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য শাসক দল ক্রমাগত শাসানি দিচ্ছে বলে অভিযোগ। হুমকির কারণে কয়েক জন বিজেপি প্রার্থী গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন বলে দলীয় নেতৃত্ব দাবি করেছেন।
সব ক্ষেত্রেই অবশ্য তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট নেতৃত্ব এই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সিপিএম এ সব করে এসেছে। এখন সেই নাটকই করছে। কখনও দলের হয়ে, কখনও বিজেপির হয়ে। বিরোধী থাকাকালীন তৃণমূল এ সব সহ্য করেছে। আমরা এ সব করি না।’’
পুরো ভোট-পর্বে ব্যতিক্রমী পূর্ব বর্ধমানের রায়নার শ্যামসুন্দর ও পাইটা-২ পঞ্চায়েতের দু’টি আসন। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম মারধর করে এই দুই জায়গায় তাদের প্রার্থী দিতে দেয়নি। সিপিএম অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দক্ষিণ দিনাজপুরে একটি গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে বিজেপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ের মুখে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy