অপেক্ষা: রায় ঘোষণার আগে সাগর ঘোষের স্ত্রী সরস্বতী ঘোষ ও ছেলে হৃদয় ঘোষ। বুধবার পাড়ুইয়ে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী
নির্দল প্রার্থী পাঁচ বছরের ব্যবধানে হয়ে গিয়েছেন তৃণমূলের প্রার্থী। সময়ের সঙ্গে পাল্টে গিয়েছে পাড়ুইয়ের ছবিটাও।
এ বারে পঞ্চায়েত নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতে ‘পুরনো’ ভয় আবার পেয়ে বসেছিল তাঁদের। কিন্তু, কোথায় সেই পাড়ুই, কোথায় সেই ঘর পুড়ে যাওয়া, খুন, মাঝ রাতে সিট-এর হানা। সে সব পেরিয়ে পাড়ুইয়ে এখন শান্ত। ছোট-বড় তেমন কোনও অশান্তিই হয়নি। এলাকার লোকজন বলছেন, ‘‘গোলমাল হবে না। এটাই তো চাওয়া।’’ গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যিনি নির্দল প্রার্থী ছিলেন, সেই হৃদয় ঘোষ এ বারে নিজেই তৃণমূলের প্রার্থী। দলীয় টানাপড়েনে এই পাড়ুইয়েই খুন হয়েছিলেন হৃদয়ের বাবা সাগর ঘোষ।
পাঁচ বছর কেটে গেলে কী হবে, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে গোলমালের কথা এখনও তাজা অনেকের মনে। ১৭ জুলাই, ২০১৩ পাড়ুইয়ের কসবায় এক সভায় পুলিশের উপরে ‘বোম’ মারা এবং নির্দল প্রার্থীদের বাড়ি জ্বালানোর হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে। ওই বক্তৃতার পরেই কসবা অঞ্চলে একাধিক নির্দল প্রার্থীর বাড়িতে হামলা, বোমাবাজি হয় বলেও অভিযোগ। খুন হন সাগর ঘোষ। উস্কানিমূলক বক্তৃতা এবং তার পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে অনুব্রতর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন। ২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর সিউড়ি সিজেএম আদালতে অবশ্য বেকসুর খালাস পান অনুব্রত। তবে সাগর ঘোষ হত্যা মামলা এখনও চলছে। আজ, বৃহস্পতিবার ২৬ এপ্রিল এই মামলার রায় ঘোষণার কথা।
নিহত সাগর ঘোষের ছেলে হৃদয় এ বার কসবা গ্রাম পঞ্চায়েতের বাঁধ-নবগ্রাম আসন থেকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। অন্য কোনও বিরোধী প্রার্থী না থাকায় ইতিমধ্যেই তিনি জয়ী। তবে ভুলে যাননি ২০১৩ সালের কথা। সে কথা মনে পড়লে এখনও চোখ চিকচিক করে স্ত্রী সরস্বতী ঘোষের। নির্বাচনের ওই কটা দিনের মধ্যেই শুধু পাড়ুই থানায় ১৭টি মামলা হয়েছিল। এখনও কিছু মামলা চলছে। এ বার ভোটে আর সেই উন্মাদনা নেই। নেই ভোট নিয়ে হানাহানি, দ্বন্দ্বের ছবিও।
গ্রামবাসী মন্মথ দাস, সুশান্ত মাঝি, সুকুমার দাসের কথায়, ‘‘নির্বাচন ঘিরে অশান্তি হয়নি। এ বারে তাতেই আমরা খুশি। দিনক্ষণ ঘোষণার পরে কয়েক দিন খুব চিন্তায় কেটেছিল। এখন আর কোনও চিন্তা নেই।’’ আর তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়ে হৃদয় বলছেন, ‘‘এলাকায় সর্বত্র এখন শান্তি। এই শান্তিই এত দিনের যাবতীয় অশান্তি, দুঃখের দিনের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। সবাই একসঙ্গে কোনও দ্বন্দ্ব ছাড়াই গ্রামে থাকছি, এটাই আনন্দের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy