রাত সাড়ে আটটা নাগাদ হাসপাতালে গিয়ে হাজির খোদ স্বাস্থ্যসচিব! হাতেনাতে ধরে ফেললেন ‘সত্য’। চিকিৎসক, বিশেষ করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখা মেলাই ভার হাসপাতালে। তাঁরা অধিকাংশই ‘অদৃশ্য’ থাকেন, অথচ কোন ভোজবাজিতে তাঁদের বায়োমেট্রিক হাজিরা পড়ে যায় ঠিকঠাক।
স্বাস্থ্যভবন সূত্রের খবর, বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে গত ৪ এপ্রিল রাত ন’টার সময়েই বৈঠক ডেকে হাজিরা নিয়ে চিকিৎসকদের কড়া হুঁশিয়ারি দেন স্বাস্থ্যসচিব অনিল বর্মা। সেখানে নতুন চালু হওয়া ট্রমা কেয়ার সেন্টারের এক প্রবীণ নিউরো সার্জনকে রোজ হাজির থাকতে হবে বলায় স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে সেই চিকিৎসকের প্রায় কথা কাটাকাটি শুরু হয়।
এর পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ চিকিৎসকদের উদ্দেশে গত ৬ এপ্রিল একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। তাতে বলা হয়েছে, স্বাস্থ্যসচিব ডাক্তারদের হাজিরা পরিস্থিতিতে অত্যন্ত বিরক্ত। সপ্তাহে ৬ দিন চিকিৎসকদের আসতেই হবে এবং হাসপাতালে থাকতে হবে। দেখতে হবে, কোনও ভাবেই যেন রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না-হয়। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রত্যেক বিভাগীয় প্রধানকে ১০ এপ্রিলের মধ্যে ডিউটি রোস্টার এবং প্রত্যেক চিকিৎসকের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, টেলিফোন নম্বর জমা দিতে হয়েছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের একাংশ বিষয়টি নিয়ে ফুঁসছেন।
জারি: সেই নির্দেশিকা।
জেলার হাসপাতালে চিকিৎসকেদের একাংশ নিজেদের মধ্যে ডিউটি ভাগাভাগি করে সাকূল্যে দু-তিন দিন হাজির থাকেন, আর বাকি দিনের সই কোনও ভাবে করে দেন— এই অভিযোগ অনেক দিনের। চিকিৎসকের ঘাটতিতে ধুঁকতে থাকে পরিষেবা। মাস খানেক আগে স্বাস্থ্য দফতর নির্দেশ জারি করেছে, সপ্তাহে ৬ দিন ৮ ঘণ্টা করে মোট ৪৮ ঘণ্টা ডিউটি করতেই হবে প্রত্যেক চিকিৎসককে। এবং ‘অন-কল’ ডিউটিকে এই সময়সীমার মধ্যে ধরা চলবে না। কিন্তু নির্দেশের পরেও অবস্থা বেশির ভাগ জায়গায় বদলায়নি বলে খবর আসছিল। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মালদহ, মুর্শিদাবাদ বা উত্তরবঙ্গের তুলনায় বর্ধমান মেডিক্যালের পরিস্থিতি একটু অন্য রকম। অভিযোগ, সেখানে অধিকাংশ চিকিৎসক রোজ যান বটে, কিন্তু অনেকেই হাসপাতালে না-ঢুকে বায়োমেট্রিক যন্ত্রে হাজিরা দেন বাইরে অটো বা টোটো দাঁড় করিয়ে। হাজিরা দিয়েই তাতে চেপে চলে যান আশপাশের ক্লিনিক বা নার্সিংহোমে। সারা দিন সেখানে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের পরে আবার ঠিক সময়ে হাসপাতালে এসে বায়োমেট্রিক হাজিরা দিয়ে সোজা বাড়ি!
এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘বর্ধমানের পরিষেবা নিয়ে ক্রমাগত অভিযোগ আসছিল। পর-পর বেশ কয়েক জন প্রসূতিও মারা গিয়েছিলেন ওখানে। প্রয়োজনের সময় ডাক্তারদের পাওয়া যাচ্ছে না বলে রিপোর্ট আসছিল। হাসপাতালের কর্তারাও বীতশ্রদ্ধ, হতাশ।’’ বর্ধমানের সুপার উৎপল দাঁয়ের কথায়, ‘‘ডাক্তারদের সঠিক ভাবে চালনা করা প্রায় অসম্ভব এবং কষ্টকর হয়ে উঠছে। স্বাস্থ্যসচিব সবই জানেন।’’ হাসপাতালের আর এক কর্তা বলেন, ‘‘এর আগে মেডিক্যাল কাউন্সিলের পরিদর্শনের সময় সার্জারির কোনও চিকিৎসকই প্রায় ছিলেন না। লিখিত রিপোর্ট দিয়েছিলাম, কিন্তু কিচ্ছু হয়নি। আর বায়োমেট্রিক-এ যদি সঠিক সময়ে ছাপ পড়ে যায় তা হলে কাউকে ধরবেন কী করে?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy