চিকিৎসায় গুরুতর গাফিলতির অভিযোগ তুলে রাজ্যের আট ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিল মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া বা এমসিআই। পরে কলকাতা হাইকোর্টও তা বহাল রাখে। কিন্তু কারও নির্দেশই কানে তুলছে না রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিল! চিকিৎসকদের একাংশের অভিযোগ, পদ্ধতিগত প্রশ্ন তুলে এখন আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে অভিযুক্ত ডাক্তারদের। এ সব দেখে অভিযোগকারীদের প্রশ্ন, কার কাছে বিচার পাওয়া যাবে তা হলে?
চারটি পৃথক ঘটনায় চার ব্যক্তির মৃত্যুর পর তাঁদের বাড়ির লোকেরা এমসিআইয়ের কাছে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ জানান। তারা সব দিক খতিয়ে দেখে ২০১৪ সালের অগস্ট থেকে ২০১৫-এর ফেব্রুয়ারির মধ্যে আট ডাক্তারকে দোষী সাব্যস্ত করে। এঁদের কারও তিন বছর, কারও পাঁচ বছর, আবার কারও ক্ষেত্রে ছ’মাসের জন্য রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলকে নির্দেশ দেয় এমসিআই। কিন্তু কাউন্সিল সেই নির্দেশ কার্যকর করেনি।
এরই মধ্যে এমসিআইয়ের নির্দেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক। ৫ মে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে এমসিআইয়ের নির্দেশ বহাল রেখে অবিলম্বে অভিযুক্ত চিকিৎসকদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে রাজ্য কাউন্সিলকে আদেশ দেয় হাইকোর্ট। অভিযোগ, তার পরে দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও কিছুই করেনি রাজ্য কাউন্সিল।
কেন নির্দেশ মানতে অনীহা? রাজ্য মেডিক্যাল কাউন্সিলের সহ-সভাপতি রাজীব গণচৌধুরীর যুক্তি, ‘‘ওই আট জনের মধ্যে এক জন চিকিৎসক দিল্লি হাইকোর্ট থেকে এমসিআইয়ের নির্দেশের উপর স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছেন। তাই কলকাতা না দিল্লি— কোন হাইকোর্টের কথা শুনব, তা বুঝতে পারছি না। আগামী শুক্রবার, ২২ মে এই নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কাউন্সিলের বিশেষ বৈঠক বসছে।’’
কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশ পালন করতে কাউন্সিলের বৈঠকের কী প্রয়োজন? সহ-সভাপতির সাফাই, ‘‘কলকাতা হাইকোর্ট বলেছে, নির্দিষ্ট পদ্ধতি (প্রসিডিওর) অনুসরণ করে ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করতে হবে। এখানেই সমস্যা। কারণ, আমাদের আর এমসিআইয়ের পদ্ধতি আলাদা। কোন পদ্ধতি অনুসরণ করব? হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে এমসিআই-কে। তাই আমাদের পক্ষে নিজস্ব পদ্ধতি অনুসরণ করে অভিযুক্ত ডাক্তারদের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করা সম্ভব নয়।’’ রাজ্য কাউন্সিলের রেজিস্ট্রার দিলীপ ঘোষের যুক্তি, ‘‘হাইকোর্ট তাদের নির্দেশ মানার জন্য কোনও সময়সীমা তো নির্দিষ্ট করে দেয়নি। তা হলে এত তাড়ার কী আছে? আমি তো নির্দেশের প্রতিলিপিই এখনও চোখে দেখিনি।’’
রাজ্য কাউন্সিলের এ সব যুক্তি মানতে নারাজ এমসিআই। তাদের মতে, নিয়ম হল এমসিআই নির্দেশ দেবে রাজ্য কাউন্সিলকে। সেটা না মানা হলে অভিযোগকারী আদালতে যাবে। আদালত যে নির্দেশ দেবে, তা মানতে বাধ্য রাজ্য কাউন্সিল। এমসিআইয়ের গ্রিভান্স কমিটির চেয়ারম্যান অজয় কুমারের অভিযোগ, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল প্রথম থেকেই কথা শোনে না। এখন হাইকোর্টের নির্দেশও তারা মানছে না।’’ রোগীর অধিকার নিয়ে লড়াই করা সংগঠন ‘পিপল ফর বেটার ট্রিটমেন্টে’-র চিকিৎসক কুণাল সাহা রাজ্য কাউন্সিলের ভূমিকা দেখে প্রশ্ন তুলেছেন, ‘‘আদালতের রায় মানতেও যদি এদের বাধ্য করা না-যায়, তা হলে দেশে আইনের দরকারটা কী?’’
রাজ্যের ়ডাক্তারদের একাংশের বক্তব্য, ওই আট জনই নয়, রাজ্যে পালাবদলের পর প্রায় কোনও অভিযোগেরই তদন্ত হয় না। কাউন্সিলের যে তদন্ত কমিটি রয়েছে, তার বৈঠক হয় কালেভদ্রে। কোনও ডাক্তারের বিরুদ্ধে যত গুরুতর অভিযোগই হোক— শাসক দলের সায় ছাড়া কোনও নির্দেশই কার্যকর হয় না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy