ধর্মতলার কে সি দাস মোড়ে বাসের অপেক্ষায় যাত্রীরা। —নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার সকাল থেকেই লোকে বাসের জন্য হত্যে দিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন টালিগঞ্জ, উল্টোডাঙা, ই এম বাইপাসে। একে তো বাসের সংখ্যা কম, তার উপরে যে ক’টি চলছে সেগুলির বেশির ভাগই যাত্রা শুরুর স্ট্যান্ড থেকে ভর্তি হয়ে গিয়েছে। ডানলপেও বাসের জন্য বিরাট লাইন চোখে পড়েছে। বিকেলে ধর্মতলা মোড়ে ঘণ্টা খানেক দাঁড়িয়ে থেকেও বাসে উঠতে পারেননি অনেকেই। তাঁদেরই এক জন প্রণতি পাত্র। ট্যাক্সি ভাড়া করার সাধ্য তাঁর নেই বলে জানান। সুযোগ বুঝে চড়া দর হেঁকেছেন ট্যাক্সিচালকদের একাংশ। ডানলপ, সিঁথি এলাকায় অটোয় চালকের আসনের পাশেও লোক বসতে দেখা গিয়েছে। সন্ধ্যায় বৃষ্টিতে আরও নাজেহাল হয়েছেন ঘরমুখো নাগরিকেরা। ভিজতে ভিজতে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছেন তাঁদের।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী অয়ন চট্টোপাধ্যায়। বাড়ি টবিন রোডে। অফিস থেকে বেরিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার উপর দাঁড়িয়ে ধর্মতলায় সিইএসসি ভবনের সামনে বাসের অপেক্ষায়। কোনও সরকারি বাসেই জায়গা নেই। একের পর এক বাস চলে যাচ্ছে। অয়নের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন সুরজ প্রসাদ। ডালহৌসির অফিসপাড়ায় একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। যাবেন টালিগঞ্জ। দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে। কোনও বাস নেই।
ছবিটা শুধু ধর্মতলার নয়। পার্ক স্ট্রিট, উল্টোডাঙা, সেক্টর ফাইভ, পার্ক সার্কাস কানেক্টর থেকে শুরু করে ইএম বাইপাসের ধারে বেশ কিছু জায়গায় একই ছবি বিকেল নামার পর থেকেই। সন্ধ্যা নামার পরেই ঝাঁপিয়ে নামল বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাসের অপেক্ষায় বাড়ি ফেরার জন্য মরিয়া কয়েকশো মানুষ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অনেক মহিলাও। রাস্তায় বেরিয়ে অয়ন-সুরজের মতো চরম ভোগান্তির শিকার হলেন হাজার হাজার মানুষ। প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম সরকারি বাসের জন্য অনন্ত অপেক্ষায় মানুষ।
আরও পড়ুন: শহরে এক দিনে আক্রান্ত ১১৬, বদলাচ্ছে কন্টেনমেন্ট নীতি
বিধি উড়িয়েই: হাওড়া স্টেশনের বাইরে যাত্রীদের ভিড়। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
অয়নের কথায়, ‘‘আমাদের বাড়ি থেকে কাজ করার কোনও সুযোগ নেই। তাই অফিস আসতেই হয়। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম সাড়ে ৮টায়। প্রায় ৫০ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে অনেক কষ্টে বেশি ভাড়া দিয়ে একটা ট্যাক্সি পেয়েছিলাম। ফেরার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। কোনও ট্যাক্সিও পাচ্ছি না। সরকারি বাসে সব আসন ভর্তি। থামছেই না। কী ভাবে কখন বাড়ি যাব জানি না।” সুরজ প্রসাদ বলছিলেন, ‘‘আমি যে সামান্য টাকা মাইনে পাই, তাতে ট্যাক্সি চড়তে পারব না। অনেক দাঁড়িয়ে সকালে একটা সরকারি বাস পেয়েছিলাম। অনেক দেরিতে অফিস ঢুকতে পেরেছি। অফিস আসতেই হবে। না হলে চাকরি থাকবে না। এখন ফেরার জন্য তো কিছুই পাচ্ছি না!”
আরও পড়ুন: অটো, ট্যাক্সি এবং ক্যাবেও এ বার যাত্রী সব আসনে
একই অবস্থা বছর তিরিশের সঙ্গীতা শাসমলের। তিনিও একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। সোমবার থেকেই কড়া কর্তৃপক্ষ। সবাইকে অফিস আসতেই হবে। অফিস না এলে মাইনে কাটা হবে। চাকরিও যেতে পারে। একটা করে সরকারি বাস আসছে, উদ্বিগ্ন মুখে সঙ্গীতা বার বার ছুটে যাচ্ছেন বাসের দিকে। বাস দাঁড়াচ্ছে না। বার বার ফোন আসছে বাড়ি থেকে স্কুল পড়ুয়া ছেলের। তাকে ফোনে আশ্বাস দেওয়া ছাড়া আর কিছুই নেই সঙ্গীতার হাতে। তিনিও জানেন না কখন বাড়ি পৌঁছবেন।
দেখুন ভিডিয়ো:
এ দিন রাজ্য পরিবহণ নিগম কলকাতা এবং শহরতলিতে প্রায় ৫০০ বাস চালিয়েছে। বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেট এবং অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির উদ্যোগে প্রায় ২০০ বেসরকারি বাসও নেমেছিল। আজ, বুধবার বাসের সংখ্যা কয়েকটি বাড়তে পারে। এ দিন ভাড়া বৃদ্ধি-সহ একাধিক দাবি নিয়ে কসবায় পরিবহণ ভবনে স্মারকলিপি জমা দেয় জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেট-সহ চারটি সংগঠন। ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, ‘‘৮ জুনের মধ্যে ধাপে ধাপে বাস পরিষেবা স্বাভাবিক করব।’’ বাস চলাচলের সময় রাত ৯টা করা উচিত বলেও বাস মালিকদের অভিমত।
গণ পরিবহণ
আজ, বুধবার পথে নামবে
(কলকাতা,হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা)
• সরকারি বাস ৬৫০
• বেসরকারি বাস ২০০+
কলকাতার উল্টো ছবি দু’একটি জেলায়। ফাঁকা বাস চালিয়ে লোকসানের বহর বাড়ছে বলে মঙ্গলবার পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছে জেলা বাস মালিক সংগঠন। পশ্চিম মেদিনীপুরের বাস মালিক সংগঠনের সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতিও বলেন, ‘‘যাত্রী সংখ্যা খুবই কম।’’ তবে বাকি জেলায় বাসের অভাবে মানুষের ভোগান্তি হয়েছে যথারীতি। নদিয়া জেলায় ‘আয় হচ্ছে না’ বলে কোনও বেসরকারি বাস পথে নামেনি। মুর্শিদাবাদে লকডাউনের আগে দৈনিক ৫০০ বেসরকারি বাস চলত। গত দু’দিনে মেরেকেটে পঞ্চাশের বেশি বাস চোখে পড়েনি। পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে মঙ্গলবার সরকারি চলেছে মোটে ১২টি। কাল আরও চারটি বাড়বে। দিঘা-হাওড়া, এগরা-হাওড়া, এবং কলকাতা থেকে দিঘা রুটে মোট ১৮টি বেসরকারি বাস চলেছে। ৫ জুন থেকে হলদিয়া- মেচেদার দু’টি রুটে বাস চলবে। মালদহের সব রুটে বাস চলাচল শুরু হয়নি। জলপাইগুড়ির যে সব রুটে বেশি ভিড় হত, সেগুলি চালু হয়নি। পূর্ব বর্ধমানের সুলতানপুরের বাসিন্দা নাজির শেখ বলেন, ‘‘বাস না চলায় ৮০০ টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে ডাক্তার দেখাতে কালনা শহরে এসেছি।’’ চোখের চিকিৎসার জন্য বীরভূমের নলহাটি থেকে রামপুরহাট এসেছিলেন কল্পনা কোনাই। তিনি বলেন, ‘‘গ্রাম থেকে নলহাটি পর্যন্ত তিন কিলোমিটার পথ হেঁটে আসি। তার পর বাসস্ট্যান্ডে ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে বেশি টাকা দিয়ে টোটো ভাড়া করে রামপুরহাট এসেছি।’’ হুগলি জেলায় ৪৭টি রুটের মধ্যে মঙ্গলবার দু’টি রুটের বাস চালু হয়েছে।
ধর্মতলায় বাস থেকে যাত্রীদের একাংশকে নেমে আসতে বলছেন এক ট্র্যাফিক পুলিশ। মঙ্গলবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।
এই সমস্যায় প্রশাসন ‘মানবিক ভাবে’ বিবেচনা করে পদক্ষেপ করবে বলে মনে করেন তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস। কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “কর্মস্থলের কাছাকাছি থাকা কর্মীদের নিয়ে কাজ শুরু করুক সরকার।” রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শংকর সিংহের কথায়, “করোনা-সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সেই মতো পদক্ষেপ করুক সরকার।” সরকারি কর্মচারী পরিষদের তরফে সঞ্জীব পাল বলেন, ‘‘কর্মীদের কর্মস্থলে থাকার ব্যবস্থা করুক সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy