লকডাউনে কলকাতা।—ছবি রয়টার্স।
সব মেঘেই সোনালি রেখা থাকে। করোনা-মেঘ রাজ্য-দেশ-বিশ্ব জুড়ে করাল ছায়া ফেললেও বাংলার বাতাসে এখন আশ্চর্য এক নির্মলতা। রাজ্যের বাতাসের এমন তরতাজা ভাব শেষ কবে দেখা গিয়েছিল? রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের যন্ত্রে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন শহরাঞ্চলের বায়ুদূষণের যে-তথ্য ধরা পড়ছে, তাতে এই প্রশ্ন উঠতেই পারে।
বাতাসে বিষকণার মাত্রা তুঙ্গে ওঠায় যে-কলকাতা বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় উপরের দিকে ঠাঁই পেয়েছিল, সেখানেই এখন গড় দূষণের মাত্রা স্বাভাবিকেরও নীচে! কলকাতার মধ্যে মারাত্মক দূষিত বিভিন্ন এলাকাতেও বাতাসের সর্বোচ্চ দূষণ কখনও কখনও মাঝারি মাত্রায় পৌঁছচ্ছে। একই ছবি কলকাতার সহোদর হাওড়ায়। ছবি বিশেষ আলাদা নয় আসানসোল বা শিলিগুড়িতেও।
পরিবেশবিদদের অনেকের মতে, ছবিটা সত্যিই বিরল। এই বিরলতার মূলে আছে আরও একটি বিরল ঘটনা। দেশজোড়া লকডাউন। করোনা-সতর্কতা হিসেবে লকডাউনে নাগরিক পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু তার দৌলতে বাতাসে বিষের মাত্রা কমেছে। বায়ুদূষণের নিরিখেও দেশের ‘রাজধানী’ বলে চিহ্নিত দিল্লিতেও দূষণ কমেছে ‘অস্বাভাবিক’ হারে।
পরিবেশবিদেরা জানান, গভীর রাতে দূষণের মাত্রা বাড়ে। দুপুরের ব্যস্ত সময়ের পরেও দূষণ বাড়তে দেখা যায়। বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণা (পিএম ২.৫), ধূলিকণা (পিএম ১০), নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড-সহ বিভিন্ন উপাদানের মাত্রা হিসেব করে একটি গড় সূচক নির্ধারণ করা হয়। এখন গভীর রাত, দুপুর-বিকেলে বাতাসে দূষণ সূচকের হেরফের হচ্ছে না। যাদবপুরে রবিবার রাত ১২টায় বায়ুদূষণের সূচক ছিল ৬৯ এবং সোমবার বেলা ১২টায় ছিল ৭২। হাওড়ার ঘুসুড়িতে রবিবার রাত ১২টা এবং সোমবার বেলা ১২টায় সূচক ছিল যথাক্রমে ৯৭ এবং ৯৮। পর্ষদ সূত্র জানাচ্ছে, ঘুসুড়িতে প্রচুর কলকারখানা, সবই এখন বন্ধ। তাই দূষণ কমেছে। আসানসোলেও।
পণ্যবাহী গাড়ির সংখ্যাও কমেছে। পরিবেশকর্মীদের অনেকে বলছেন, প্রয়োজনে শহরে সাময়িক ভাবে গাড়ি কমিয়ে দূষণ যে অনেকটাই ঠেকানো যায়, এই লকডাউন তা দেখিয়ে দিল। দিল্লিতে দিওয়ালি-পরবর্তী ধোঁয়াশার জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায়। সেটা চলে শীতকাল জুড়ে। সেই পরিস্থিতিতে এমন কোনও ব্যবস্থা করা যায় কি না, সরকারের সেটা ভাবা উচিত। তাঁদের যুক্তি, করোনার ক্ষেত্রে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি পরিস্থিতি (পাবলিক হেল্থ ইমার্জেন্সি) ঘোষণা করা হয়েছে। মারাত্মক বায়ুদূষণের জেরেও তো একই পরিস্থিতি হয়।
লকডাউনের এই শিক্ষার কথা মানছেন পরিবেশ গবেষণা সংস্থার এগ্জ়িকিউটিভ ডিরেক্টর অনুমিতা রায়চৌধুরীও। তিনি বলছেন, ‘‘এই পরিস্থিতি শিখিয়ে দিচ্ছে, নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়নের মাধ্যমে শহরে উন্নত গণপরিবহণ বৃদ্ধি এবং ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কমানো সম্ভব। তা হলেই গাড়ি থেকে দূষণ কমবে।’’
লকডাউনের পরে কী হবে? পরিবেশ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘দূষণ নীতি তো রয়েছেই। কিন্তু আগে এই করোনা-সঙ্কট তো কাটুক!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy